কলকাতা ব্যুরো: এক সময় তার মাথায় অক্সিজেন কম পৌঁছয় বলে প্রকাশ্যে মঞ্চে অনুব্রতর হয়ে ডিফেন্স করেছিলেন তার জননেত্রী দিদি। কিন্তু এবার গরু পাচারের মামলায় সিবিআইয়ের হেফাজতে থাকা আদরের কেষ্ট তথা অনুব্রত মণ্ডলের ঢাল হয়ে স্বাধীনতা দিবসের আগের সন্ধ্যায় নতুন জল্পনা তৈরি করে দিলেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর ফলে অনুব্রত- র জামিন পাওয়া কঠিন হবে কিনা, সেই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে উঠেছে। যেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের শেষ কথা গরু পাচারে ধৃতের হয়ে প্রকাশ্যে ব্যাট ধরলেন, সেখানে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তার জামিন আটকাতে ‘প্রভাবশালী’ তথ্য আরো জোরালো হলো কিনা সেই প্রশ্ন উঠে গেল।

স্কুল সার্ভিস কমিশনের বেআইনি নিয়োগ নিয়ে সদ্য গ্রেপ্তার হওয়া প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টর এর কাছে গ্রেপ্তারির মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রীর মোবাইল নাম্বার দিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। যা নিয়ে পার্থর বিরুদ্ধে ব্যাপক চটে যায় তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। তারপর অবশ্য তৃণমূলের তরফে পার্থকে নিয়ে আর কেউ খুব একটা উচ্চবাচ্চা করেনি। উল্টে কোটি কোটি টাকা তার ঘনিষ্ঠ মহিলার ফ্লাট থেকে উদ্ধার হওয়ায় একরকম তাকে ঝেড়েই ফেলে দিয়েছে তৃণমূল।

২০১৯ সালে রোজভ্যালি মামলায় প্রথমে তাপস পাল গ্রেপ্তার হন। তার কয়েকদিনের মাথাতেই সিবিআই গ্রেফতার করে তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় কে। তখন, তার হয়ে মাঠে নামে তৃণমূল। দলীয় নেতা কে রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ব্যাপক খুব বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল সমর্থকরা। অবশ্যই দলের নির্দেশ। সেখানেও কিন্তু সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রভাবশালী তত্ত্ব খাড়া করে তাকে বাড়তি জেলের ঘানি টানিয়েছিল সিবিআই। শেষ নয় এখানেই, সারদা মামলায় মদন মিত্র গ্রেপ্তারের পরেই সবচেয়ে বেশি হই হট্টগোল করে রাস্তায় নামে রাজ্যের শাসক দল। দলের নেতার জন্য বিক্ষোভ অবরোধে কার্যত শহর প্রথম দিকে অচল করে দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রেও সিবিআই প্রভাবশালী তকমা মদন মিত্রের গায়ে এটা দিয়েছিল। আর তারপরে ব্রাত্য হয়েছিলেন মদন। এখনো দলের নেতা হিসেবে থাকলেও বা পদ পেলেও, মূল স্রোতের থেকে তারপরেই ছিটকে গিয়েছেন মদন মিত্র।

আবার নারদ মামলায় সদ্যপ্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ববি হাকিম, মদন মিত্রের মত নেতাদের সিবিআই গত বছর গ্রেফতার করেছিল। সিবিআই এর দপ্তর নিজাম প্যালেসে তারা থাকাকালীনই কলকাতার একাংশ এবং সিবিআই এর দপ্তরের সামনে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয় শাসকদলের। সেই ভিড়কেই ধৃত নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে প্রভাবশালী তকমা দিতে বাড়তি সুযোগ দিয়েছিল সিবিআই কে।

এই অবস্থায় দলনেত্রীর অনুব্রত মণ্ডলকে সিবিআই হেফাজতে থাকাকালীন ক্লিনচিট দেওয়া কতটা তার পক্ষে ভালো হলো, তা নিয়ে প্রবাদ গুনছেন কেষ্ট মন্ডল এর ঘনিষ্ঠরা। যেখানে সিবিআই এর কাছে এমন কিছু নথি রয়েছে, যা থেকে গরু পাচারের মামলায় তার যোগ থাকার প্রাথমিক তথ্য উঠে আসছে। সেখানে কেষ্টর হয়ে দিদির এই ব্যাটিং তাকে গারদের ভিতরে আরো বেশি দিন থাকার ক্ষেত্রে অন্যতম কারণ হয়ে উঠবে কিনা, তা নিয়েই প্রমাদ গুনছেন তৃণমূলেরই একাংশের নেতারা। আর সেক্ষেত্রেই প্রশ্ন উঠছে, বীরভূমের আধিপত্য এক দশক ধরে চালিয়ে যাওয়া কেষ্টর পক্ষে এমন ভাবে সওয়াল করে দলনেত্রী সত্যিই আবেগে ভাসলেন, নাকি কেষ্টকে প্রমান প্রভাবশালী প্রমাণ করার ক্ষেত্রে সিবিআই এর হাতে বাড়তি অস্ত্র তুলে দিলেন।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version