ইন্দ্রনীল বসু

রাজনৈতিক নেতারা তার কাছে ছোটেন। তার কথায় লাখো ভোট। তুষ্ট তো তাকে রাখতেই হবে। হাত তার বড় লম্বা। পুলিশ থেকে নারকোটিক্স কর্তা, সবাই তার হাতের পুতুল। ভক্তদের বাতলান মোক্ষ লাভের পথ । আর রাত হলে নিজে মক্ষিরানি নিয়ে ফূর্তি করেন। এই হচ্ছে দেশের ধর্মগুরু -কাশিপুর ওয়ালে বাবা ( ববি দেওল )। এতদিন হিরোর রোলে অভিনয় করে এখন রাতারাতি ভিলেন। তবে সাধুরূপী ভিলেন হলে চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে খুব একটা অসুবিধা হয় না। কারণ মুখটা সবসময় সদাহাস্যময় রাখলেও চলে। যেন নির্বাণ লাভ করে গেছেন। কাশিপুর ওয়্যলে বাবা সে রকম লাল্টু মুখের শয়তান।

কোনো মেয়ে চোখে পরে গেলেই কাল। তার স্বামীকে তিনি নির্বাণের লোভ দেখিয়ে যৌনাঙ্গ ছেদ করে দেন শুদ্ধিকরণের নামে। স্ত্রীর সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক রাখতে হয় শুধু। দৈহিক সম্পর্কে নির্বাণ প্রাপ্তির অন্তরায়। তারপর স্ত্রীকে বোঝাতে রাতের বেলা ড্রাগ মেশানো লাড্ডু প্রসাদ খাইয়ে তার যৌন চাহিদা চরিতার্থ করেন। প্রকাশ ঝার নির্দেশনায় ” আশ্রম ” ওয়েব সিরিজ আবারও গডমানদের কার্যকলাপ দর্শকদের সামনে নিয়ে এলো খুল্লাম খুল্লা। ওয়েবসেরিজে সময় বেশি। সিনেমার মতো ৩ ঘণ্টা বাধা নয়। তাই সহজে অনেক কিছু বলার আর দেখাবার সময় আছে। নয় পর্বের প্রথম এপিসোডেও শেষ হয়নি গডম্যানের কার্যকলাপ। আরো একটা আট-নয় পর্বের এপিসোডে বাকি এখনও।

রামরহিম বাবা বা হালের ইকুযেডরে দ্বীপ কিনে নিজের দেশ প্রতিষ্ঠা করা নিত্যানন্দ স্বামীর হালহকিকত এখন মিডিয়ার দৌলতে সবার জানা। তাই এই গডম্যানকে বুঝতে খুব অসুবিধা হবে না। কিন্তু কিছু তো সমাজসেবা করতেই হয় এদের। তাই কাশিপুর ওয়ালে বাবাও নিচু সম্প্রদায়ের কাছে মসিহা। উঁচু জাতের অত্যাচারের হাত থেকে নিচু জাতের মানুষের রক্ষক। সমাজসেবা মূলক কাজ আছে বৈ কি। একশোর বেশি গনিকার বিবাহ, খেতে পরতে না পারা মানুষের নিজের আশ্রমে চাকরির ব্যবস্থা এই সব করে এক সম্প্রদায়ের বড় সংখ্যক মানুষের হৃদয় জয় করে রেখেছেন। এবার এদের ভোট পাইয়ে দেবার আশ্বাস দিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের কাছে কোটি কোটি কামাচ্ছেনও। এ বড় জটিল অঙ্ক। আর এসবের কারণে আশ্রমে গুন্ডা থেকে গুপ্তচর সবই পুষতে হয় গডম্যানকে।

এই সব গডম্যান নিয়ে সিনেমা অবশ্য হয়েছে । আমির খানের পিকে। কিন্তু সেখানে একটু রেখে ঢেকে দেখানো হয়েছে সবকিছু। এখানে একেবারে বাস্তবকে তুলে ধরেছেন প্রকাশ ঝা। ধর্ম ব্যবহার মুখোশটা টেনে ছিঁড়ে দিয়েছেন একেবারে। তবে কিছু জায়গায় চিত্রনাট্য একটু দুর্বল। পুলিশের আইজি একটা ফোন পেয়ে একা হোটেলে বিদেশিনীর সঙ্গে দেখা করে সিডিউসড হলেন এবং তার পুরো ভিডিও কাশিওয়ালে বাবা সবাইকে দেখাবে বলে তার তদন্ত থামিয়ে দিল এমনটা মানা যায় না। অথবা লাশকাটা ঘরের ডাক্তারের বাড়ি যে সন্ধ্যেবেলা সাত আট জন গুন্ডা আক্রমণ করে বন্দুকের গুলিতে বাড়ি ঘর ঝাঁঝরা করে দিল সেদিন রাতেই তিনি পুলিশের কর্তার সঙ্গে একেবারে চিন্তামুক্ত হয়ে দৈহিক সম্পর্কে রত হলেন। ইয়ে বাত কুচ হজম নেহি হুয়া।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version