গুনীত মোঙ্গা প্রযোজিত এবং কার্তিকি গনসালভেস পরিচালিত ‘দ্য এলিফেন্ট হুইস্পারার্স’, প্রথম কোনও ভারতীয় ছবি যা অস্কার আনল ভারতে। ৯৫তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানে ভারতের হয়ে প্রথম অস্কার পেল ‘দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স’। বোমান ও বেইলি, দক্ষিণী এই দম্পতির দুই শিশু হাতিকে রক্ষা করার গল্প বলা হয়েছে এই সল্পদৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্রে। 

বোমান ও বেইলি তামিলনাড়ুর মুডুমালাই ন্যাশানাল পার্ক-এ থাকেন। বোমান মাহুত পরিবারের সদস্য। দুই হাতির শিশুর দায়িত্ব নেওয়ার আগে বন্য পশুদেরই দেখাশোনা করতেন তিনি। এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন হাতির ক্যাম্পে কাজ করতেন তিনি। অন্যদিকে বন্যপ্রাণীদের ভয় পেতেন বেইলি। তাঁর প্রাক্তন স্বামী বাঘের হাতে নিহত হয়েছিলেন। এরপর তাঁকে শিশু হাতিদের দেখাশোনার কাজে নিয়োগ করা হয়। সেখান থেকেই বেইলির আলাপ হয় বোমানের সঙ্গে। এরপর ভালবাসা আর তারপর বিয়ে।

২০১৭ সালে বোমান ও বেইলি দেড় বছরের একটি ছেলে শিশু হাতির দেখাশোনা করার দায়িত্ব নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর নাম দেন রঘু। তাকে নিয়েই গড়ে ওঠে ৩ জনের সংসার। মানুষ আর বন্য প্রাণীর এক অদ্ভুত ভালবাসার গল্প। এরপরে তাঁদের পরিবারে আসে আরও এক নতুন সদস্য। ছোট্ট এক মেয়ে শিশু হাতি, তার নাম দেওয়া হয় আম্মু। ধীরে ধীরে রঘু বড় হয়ে ওঠে। এরপর রঘুকে অন্য আরেকজন মাহুতের কাছে দিয়ে দেওয়া হয়।

এই ছবিটি জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘নেটফ্লিক্স’-এ দেখতে পাবেন। ৮ ডিসেম্বর ২০২২ সালে নেটফ্লিক্সেই মুক্তি পায় ছবিটি। অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস ছাড়াও এই ছবি নিউ ইয়র্কের বার্ষিক ডক্যুমেন্টারি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ‘ডক এনওয়াইসি‘তে শর্টলিস্টেড হয়েছিল। ‘মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডস’-এর ‘হলিউড মিউজিক’-এ এই ছবির আবহ মনোনীত হয়েছিল। এছাড়া ‘আইডিএ ডকুমেন্টারি অ্যাওয়ার্ডস‘-এ ‘বেস্ট শর্ট ডকুমেন্টারি’ বিভাগে মনোনয়ন পায় এই ছবি।

‘হাউ টু মেজ়ার আ ইয়ার’, ‘স্ট্রেঞ্জার অ্যাট দ্য গেট’ এর মতো ছবিকে টেক্কা দিয়ে অস্কার জিতে নিল তামিল ভাষার এই তথ্যচিত্র। ভারত থেকে এ বছর ছিল তিন-তিনটি মনোনয়ন। এস এস রাজামৌলীর ‘আরআরআর’ ছবির ‘নাটু নাটু’ গানটিও মনোনীত সেরা গানের বিভাগে। ফিচার তথ্যচিত্র বিভাগে ছিল বাঙালি পরিচালক শৌনক সেনের ছবি ‘অল দ্যাট ব্রিদ্‌স’। যদিও জিততে পারেননি শৌনক। এই জয়ের পর ইনস্টাগ্রামে গুনীত লিখেছেন, ‘‘এই জয় সব নারীর জন্য।’’

তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও বেশ কিছু ভারতীয় তথ্যচিত্র মনোনীত হয়েছিল এই বিভাগে। তবে শেষমেশ অস্কার এল দুই নারীর হাত ধরে। এই বিভাগে এখনও পর্যন্ত ভারত থেকে মনোনয়ন পেয়েছিল মোট তিনটি ছবি। ‘দ্য হাউজ দ্যাট আনন্দ বিল্ট’ (১৯৬৯) এবং ‘অ্যান এনকাউন্টার উইথ ফেসেস’ (১৯৭৯)-এর পর মনোনয়ন পেয়েছিল কার্তিকির এই ছবিটি। অবশেষে ঘরে অস্কার আনল ‘দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স’

৯৫তম অস্কারের মঞ্চে সবার নজর কার্তিকি গনসালভেসও গুনীত মোঙ্গার দিকে থাকলেও কিছুটা আড়ালে থেকেও বাঙালির গর্ব বাড়ালেন আরও এক কন্যা। তিনি সঞ্চারী দাস মল্লিক। ‘দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স’ এর সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন যিনি। এইমহানগরেরই মেয়ে তিনি। দক্ষিণ কলকাতায় গল্ফ গ্রিন এলাকায় বাস সঞ্চারীর। সঞ্চারীর দাদু মনজেন্দু মজুমদার ছিলেন সত্যজিৎ রায়ের সমসাময়িক। ওঁর সঙ্গেই ‘ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি‘ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। সিনেমা সঞ্চারীর রক্তে। সঞ্চারী যখন গোয়াতে ছিল, তখন ওর কাছে এই ছবির প্রস্তাব আসে। এটাই ওঁর প্রথম তথ্যচিত্র। এর আগে বিজ্ঞাপন আর ফিচার ফিল্মে কাজ করেছে ও।

হিসেব মতো সত্যজিৎ রায়ের পর ফের অস্কার ছুঁলেন আরও এক বাঙালি। দেশের জন্য তো বটেই, বাঙালি হিসাবেও এ এক অনন্য গর্বের জায়গা। উল্লেখ্য, অস্কারের দৌড়ে জায়গা করে নিয়েছিল বাঙালি তরুণ পরিচালক শৌনক সেনের তথ্যচিত্র ‘অল দ্যাট ব্রিদস’। আশায় বুক বেঁধেছিল বাঙালি। সেরা ফিচার তথ্যচিত্র বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছিল শৌনকের এই ছবি। তবে শেষ অবধি অস্কার অধরাই রয়ে গেল।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version