ইন্দ্রনীল বসু

অনবদ্য। এমন ওয়েব সিরিজ তো হয়ইনি। হিন্দি ছবিও হাতেগোনা। ভারতীয় মার্গ সংগীতকে নিয়ে প্রাইম ভিডিওয় এই উপস্থাপনা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। প্রথম থেকে সুরের মূর্ছনা মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখবে। শুধু সঙ্গীত নিয়ে অনেক হিন্দি ছবি হয়েছে। কিন্তু এত উচ্চ শাস্ত্রীয় বা মার্গ সঙ্গীতকে নিয়ে কোনো ছবি ইদানিং হয়েছে কি না জানা নেই। আর হ্যাঁ, ধ্রুপদী সঙ্গীত আছে বটে তবে একেবারেই একঘেয়ে নয়। বোর হবেন না। আজকালকার বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে যাদের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের নিয়ে ছুতমার্গ আছে তাদেরও ভালো লাগবে এই ওয়েব সিরিজ।

গল্পের মধ্যে দুষ্টু মিষ্টি প্রেম আছে রাধে ( ঋত্বিক ভৌমিক) আর তামান্নার ( শ্রেয়া চৌধুরী )। রাধে বিখ্যাত রাঠোর সঙ্গীত ঘরানার তালিম প্রাপ্ত এবং সঙ্গীত পন্ডিতজির ( নাসিরউদ্দিন শাহ ) নাতি। আর তামান্না একেবারে আল্ট্রা মডার্ন পপ গায়িকা। বান্দিশ ব্যান্ডিটস এদেরই ভালোবাসার গল্প। একজন গিটার নিয়ে সে রকম কোনো তালিম ছাড়াই নেমে পরেছে জনপ্রিয় হতে। আর একজনের কাছে সঙ্গীত মানে ধ্যান। পেশাদারী হবার বাসনা নেই। আছে সাধনার গভীরে পৌঁছে আত্ম উপলব্ধির তারণা। এই সাধনায় কষ্ট আছে। আছে কঠিন, কঠোর অনুশাসন। মাঝে এসে পড়ে সন্ধ্যা (তৃধা চৌধুরী)। কিন্তু রাধে আর তামান্না একে অপরের পরিপূরক। জয়ী হয় তাদের ভালোবাসা।

এরই মধ্যে আছে একলব্য আর দ্রোণাচার্যের কাহিনীও। পন্ডিতজির নিজের প্রথম স্ত্রীর সন্তান দিগ্বিজয় (অতুল কুলকার্নি) কে বঞ্চনার ইতিহাস আর তার বুকফাটা হাহাকার। অবশেষে ফিরে আসে দিগ্বিজয়। চুনৌতি দেয় রাধে কে সঙ্গীত সম্রাটের মঞ্চে। রাধে কি পারবে দিগ্বিজয়কে হারিয়ে নিজের বংশ সন্মান পুনরুদ্ধার করতে?

একদিকে সনাতন তালিম, শিক্ষা, আত্মমর্যাদা আর একদিকে কর্পোরেট দুনিয়ার সর্বগ্রাসী ক্ষুধা। সবকিছুই সে কিনে নিতে চায়। দুনিয়াদারির কাছে কোনো মর্যাদা নেই শিক্ষা, পরম্পরা , সুর, তাল, লয় , ছন্দ কিছুরই। এই টানাপোড়েনের মধ্যে পড়ে রাধে ক্ষতবিক্ষত। এই দুইযের মেলবন্ধন রাখা খুব শক্ত। কিন্তু লড়াই চলছে । তালিম আর শিক্ষা ঠিকমতো হলে কি দুই দিক রক্ষা হয় ?

নাসিরউদ্দিন, অতুল কুলকার্নি, শিলা চাড্ডার অভিনয় দক্ষতা আর শংকর এহসান এর সঙ্গীত পরিচালনা অসাধারণ।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version