কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না। একশো দিনের কাজের টাকাই নেই। সব প্রকল্পের বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে। এমন অনুযোগ মুখ্যমন্ত্রীর মুখে সর্বদাই লেগে আছে। তা সত্ত্বেও বিশ্বের অন্যতম সেরা উৎসব যাতে কোনও ভাবে ধাক্কা না খায়, সে জন্যএত টানাটানির মধ্যেও পুজো কমিটিগুলির বরাদ্দ বাড়ালেন তিনি। জানালেন, “আমার ভাঁড়ার শূন্য। মা দুর্গা ভাঁড়ার ভর্তি করবেন আশা করি। তাই আমাদের কষ্ট থাকা সত্ত্বেও ৫০ হাজার টাকাকে ৬০ হাজার টাকা করে দিলাম”। পাশাপাশি কলকাতা এবং রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষৎকে অনুরোধ করা হয়েছে, পুজো কমিটিগুলির বিদ্যুৎ বিলে যেন ৬০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে পুজো অনুদান বাবদ রাজ্যের কোষাগার থেকে খসবে মোট ২৫৮ কোটি টাকা। উল্লেখ্য,করোনার জন্য উদ্ভূত অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যাতে সুষ্ঠু ভাবে পুজো করা যায়, সে জন্য গত দু’বছর পুজো কমিটিগুলিকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছিলেনমুখ্যমন্ত্রী। 

প্রসঙ্গত,প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইন্টারগভর্নমেন্ট কমিটির ১৬ তম অধিবেশনে ‘কলকাতার দুর্গাপুজো ’ ইউনেস্কোর ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটির তালিকাভুক্ত হয়। যে কারণে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আজ দুর্গাপুজোকে কোথায় নিয়ে গিয়েছি আমরা। ১০ বছর ধরে দুর্গাপুজোকে প্রোমোট করতে করতে এবং দুর্গাপুজোর কার্নিভালকে বর্ণাঢ্য করে তুলে ধরাতে ইউনেস্কো কালচারাল হেরিটেজ ঘোষণা করেছে। এটা আমরা চেষ্টা করে করেছি। অন্য কারও কোনও অবদান নেই”। ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানাতে বিশেষ মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে। ১ লা সেপ্টেম্বর ১ টায় জোড়াসাঁকো থেকে এই মিছিল যাবে রানি রাসমনী হয়ে ধর্মতলার কাছাকাছি পর্যন্ত।যাতে সবাই এই মিছিলে অংশ নিতে পারে সেই কারণে ওই দিন ছুটি। অন্যদিকে এবার পুজোর ছুটি ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত। অন্যদিকে কালীপুজোতে দুদিন ছুটি। ভাইফোটা এবং ছটেও দুদিন করে ছুটির ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রাজ্য সরকারের আর্থিক অবস্থা যে ভাল নয়, তা মুখ্যমন্ত্রীনিজেই স্বীকার করেছেন তবু রাজ্যের মোট ৪০ হাজার ৯২ টি ক্লাবকে৬০ হাজার টাকা করেঅনুদান দেওয়া হবে। এই সব ক্লাবগুলিকে অনুদান দিতে গেলে মোট খরচ পড়বে২৪০ কোটি ৫৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। পরিসংখ্যান বলছে, রাজ্য সরকার যে পরিমাণ টাকা পুজোয় স্রেফ অনুদান হিসেবে বিলি করছে, তা ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে রাজ্য সরকারের বাজেট বিবৃতিতে একাধিক ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত আর্থিক বরাদ্দের তুলনায় অনেকটা বেশি।এদিকে আদালতের নির্দেশে এবার থেকে কেন্দ্রীয় হারেই রাজ্য সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা দিতে হবে মমতার সরকারকে। ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালুর পর থেকে মাসে ৬৪ কোটি টাকা ডিএ দিতে হবে রাজ্যকে। এই হিসেবে বকেয়া ৩১% ডিএ দিতে বছরে ২৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ হতে পারে সরকারের।কিন্তু মহার্ঘ ভাতানিয়ে রাজ্য সরকার গড়িমসি করছে আর বলছে, রাজ্য ধুকছে অর্থনৈতিক ভাবে। অথচ রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের ডিএ না দিয়ে পুজো কমিটিগুলিকে দুর্গাপুজোর জন্য বিপুল পরিমাণ অনুদানের ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শুরুর দিন থেকেই মমতা সরকার ঋণে জর্জরিত অথচ রাজ্যে মেলা-খেলা-উৎসবের পিছনে খরচ করতে কখনও কার্পণ্য করেনি মমতা সরকার। প্রিন্সিপ্যাল অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল-এর দফতরও সরকারের বেহিসেবি খরচ, আর তা সামাল দিতে গিয়ে প্রতি মাসে ধার করা নিয়ে একাধিকবার সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। দফতর এও দেখিয়েছে, রাজ্য বাজেট বরাদ্দের মাত্র ২৭ শতাংশ পরিকল্পনা খাতে খরচ করেছে অন্যদিকে মেলা-খেলা-উৎসব-পুরস্কার-ক্লাব অনুদানেখরচ করেছেবিস্তর। তার উপরে প্রতি মাসে বাজার থেকে গড়ে দেড় থেকে দু হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে।

সরকারের হিদাব অনুযায়ী গত আর্থিক বছরের সংশোধিত বাজেটে বেতন খাতে বরাদ্দ ছিল প্রায় ৫৯,৫৬৮ কোটি। ২০২২-২৩ আর্থিক বছরের বাজেটে এই খাতে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৬০,৫২৩ কোটি টাকা। অন্যদিকে পেনশন খাতে গত আর্থিক বছরের সংশোধিত বাজেটে সংস্থান ছিল প্রায় ২২,৫৩৮ কোটি টাকা। এই বছর ওই খাতে ধরা হয়েছে প্রায় ২২,৯৯৭ কোটি টাকা। অর্থাৎবরাদ্দ খুব বেশি বাড়েনি। প্রশ্ন এই পরিস্থিতিতে বর্ধিত হারে ডিএ-র টাকা কোথা থেকে দেওয়া হবে?

এর মানে চলতি অর্থবর্ষে রাজ্যের খরচ করার কথা প্রায় ২ লক্ষ ৯১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সামাজিক খাতে সম্ভাব্য খরচ প্রায় ১ লক্ষ ৮ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে কল্যাণ প্রকল্পগুলিতে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। এর মধ্যে শুধুমাত্র লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে খরচ হবে ১৩ হাজার কোটি টাকা। তাছাড়া রাজ্যের ঋণ মেটাতে খরচ হবে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। তাহলে  ডিএ-র বকেয়া টাকা কোথা থেকে আসবে, সেই হিসাব মেলাতে রাজ্যেরনাজেহাল অবস্থা। স্বভাবতই পুজো কমিটিগুলোকে বিপুল অঙ্কের অনুদান দেওয়া নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
Share.

2 Comments

  1. biplab das guta on

    বাঁধ মেরামতির কাজ হচ্ছে না। রাস্তার মেরামতির কাজ হচ্ছে না। বিদ্যুতের মেরামতির কাজ হচ্ছে না। মানুষ মারা যাচ্ছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে। ডিএ পাওয়া যাচ্ছে না, নিয়োগ হচ্ছে না। কিন্তু ক্লাবগুলোকে অনুদান ২৫৮ কোটি!

  2. avirup samanta on

    কেন্দ্রীয় হারে রাজ্য সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতার বকেয়া মেটাতে বাড়তি প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে রাজ্য সরকারের। কেন্দ্রীয় কর্মীরা ডিএ পান ৩৪ শতাংশ। রাজ্য সরকারি কর্মীরা ডিএ পান ৩ শতাংশ। ফারাক – ৩১ শতাংশের। ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালুর পর থেকে মাসে ৬৪ কোটি টাকা ডিএ দিতে হবে রাজ্যকে। এই হিসেবে বকেয়া ৩১% ডিএ দিতে সরকারের বছরে ২৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ হতে পারে। রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের ডিএ না দিয়ে পুজো কমিটিগুলিকে টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল সরকার।

Leave A Reply

Exit mobile version