কলকাতা ব্যুরো: অমরনাথ যাত্রায় (Amarnath Yatra) গিয়ে বিপর্যয়ের মুখে বেশ কয়েকজন বাঙালি। তারমধ্যে মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে গিয়েছেন কয়েকজন। তাঁদের একজন হলেন দক্ষিণ দিনাজপুরের পাগলিগঞ্জের বাসিন্দা তথা হাইস্কুল শিক্ষক শুভ্রনীল মুন্সী। কার্যত মৃত্যুকে ছুঁয়েই বাড়ি ফিরতে চলেছেন শুভ্রনীলসহ তাঁর বন্ধুরা। একইভাবে হাওড়ার কালীবাবুর বাজার এলাকা থেকে একই পরিবারের তিনজন নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। রাতে পরিবারের কাছে ফোন আসে, তিনজনকেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। হাওড়ার এই তিনজনই সুস্থ এবং জীবিত আছেন। উদ্ধারকারী দল তাঁদের হদিশ পেয়েছে।

দক্ষিণ দিনাজপুরের শুভ্রনীল মুন্সী শোনালেন সেই অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বললেন, সকাল থেকেই আকাশ পরিষ্কার ছিল। ভোরে রওনা হয়ে মন্দির পর্যন্ত পৌঁছাতে কোনও সমস্যাই হয়নি। বিকেলে অমরনাথ (Amarnath yatra) দর্শন করে ফেরার পথেই আচমকা বৃষ্টি শুরু হয়। মাইকে ঘোষণা করা হতে থাকে আরও জোরে বৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু আচমকা মেঘ ভেঙে বৃষ্টি শুরু হতেই অমরনাথেক পবিত্র গুহার কাছে জলের স্রোত দেখে হাড়হিম হয়ে যাওয়ার দশা। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম, ঠিক সেইখানে পাহাড়ের দু’দিক থেকেই বড় বড় চাঁই ভেঙে পড়তে থাকে। কয়েকজন মহিলা, পুরুষ জখম হন।

ততক্ষণে হাজার হাজার পুণ্যার্থী তাঁবুর নীচে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন। ঠাসাঠাসি ভিড়, আমরা কোথাও দাঁড়ানোর জায়গা পাচ্ছিলাম না। মনে হচ্ছিল মৃত্যু অবধারিত। কথাগুলো বলতে গিয়ে গলা কেঁপে উঠছিল শিক্ষক শুভ্রনীল মুন্সীর।

গত ৬ জুলাই বাগডোগরা থেকে বিমানে চেপে দিল্লি হয়ে শ্রীনগরে পৌঁছান শুভ্রনীল ও তাঁর ৬ বন্ধু। তিনি ছাড়াও ওই দলে ছিলেন দুর্লভপুরের পুষ্পজিৎ চক্রবর্তী, মাহিনগরের রজত সরকার, পাগলিগঞ্জের তোতন হালদার, সুরঞ্জন দে দাস, তাপস ঘোষ ও মুকুল সরকার। তাঁদের বেশিরভাগই শিক্ষক ও ব্যবসায়ী। শ্রীনগর থেকে বালতাল বেসক্যাম্প থেকে ভোর সাড়ে ৩টেয় পাহাড়ে উঠতে শুরু করে এই দলটি। দিনভর হেঁটে বিকেলে মন্দির পৌঁছে অমরনাথ (Amarnath yatra) দর্শন করে ফেরার পথেই বিপত্তি। অমরনাথ দর্শনের পরে লঙ্গরখানা থেকে এগোতেই বৃষ্টি শুরু হয়। মুহূর্তের মধ্যেই মেঘভাঙা গর্জন আর মানুষের আর্তনাদ। প্রাণভয়ে যে যেদিকে খুশি ছুটতে শুরু করেন।

শনিবার রাতে ফোনে কথাগুলো বলতে গিয়ে গলা কেঁপে উঠছিল শুভ্রনীলের। তিনি বলেন, প্রায় ঘন্টা দেড়েক এমন বিপর্যয় চলার পর আচমকা আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়। রাস্তাও পরিষ্কার করে দেওয়া হয়। আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়, পঞ্চতরণী বেসক্যাম্পে। আমরা ৫ কিমি হেঁটে সেই ক্যাম্পে পৌঁছাই। পুরো ভিজে অবস্থাতেই রাত কাটাই। সকালে আমাদের প্রথমে বালতালে আনা হয়।

পরে সেখান থেকে গাড়ি করে শ্রীনগরের উদ্দেশে রওনা করে সেনাবাহিনী। কিন্তু মাঝপথে এক ক্যাম্পে আটকে দেওয়া হয়েছে। এখানে আমাদের রাত্রি কাটাতে বলা হয়েছে। অথচ রবিবার সকাল ৭টায় শ্রীনগর থেকে আমাদের ফ্লাইট রয়েছে, কীভাবে পৌঁছাব বুঝতে পারছি না।

অমরনাথের দুর্ঘটনা শোনার পর থেকেই উদ্বিগ্ন রয়েছেন তাঁদের পরিবার-পরিজনরা। ওই দলে থাকা পুষ্পজিৎ চক্রবর্তীর স্ত্রী টুসি চক্রবর্তী বলেন, সেদিন থেকে আমাদের খাওয়াদাওয়া প্রায় নেই বললেই চলে। টিভিতে দেখছি, আর এদিকে ফোনে যোগাযোগ করতে পারছি না। ওর চিন্তায় আমাদের ঘুম উড়ে গিয়েছিল। আমাদের ছেলে ভালো করে পরীক্ষা পর্যন্ত দিতে পারেনি।

মুকুলবাবুর স্ত্রী সীমা সরকার বলেন, গতকাল থেকে ফোনে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। শনিবার বিকেলে ফোনে কথা হওয়ার পর স্বস্তি পেয়েছি। খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম।
Share.
Leave A Reply

Exit mobile version