তার বিরুদ্ধে ২০০১ সালে নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ার ও ১৯৯৮ সালে কেনিয়া ও তানজানিয়ায় মার্কিন দূতাবাসে হামলায় সহযোগিতার অভিযোগ ছিল।৯/১১ হামলার পরে আমেরিকা যে 'মোস্ট ওয়ান্টেড' তালিকা প্রকাশ করে সেখানে ওসামা বিন লাদেনের পরেই জাওয়াহিরির নাম ছিল। তখন তার মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল আড়াই কোটি ডলার। ২০১১ সালে আল কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করা হলে জাওয়াহিরি ওইসংগঠনটির শীর্ষ নেতা হন।

আল-জাওয়াহিরিকে হত্যার জন্য আমেরিকা ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে জাওয়াহিরিকে লক্ষ্য করে মিসাইল হামলা চালিয়েছিল। সে হামলায় আল-কায়েদার চারজন সদস্য নিহত হয়। এর দু-সপ্তাহ পরেই একটি ভিডিও বার্তায় জাওয়াহিরি আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে সতর্ক করে বলেন, তিনি কিংবা দুনিয়ার সব শক্তি মিলেও তার মৃত্যু এক সেকেন্ড এগিয়ে আনতে পারবে না।

আল-জাওয়াহারি ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতকে হত্যার পর মিশরের কারাগারে আটক ছিলেন। যখন বিন লাদেন আল-কায়েদা প্রতিষ্ঠা করেন তখন নিজের মিশরীয় জঙ্গি গোষ্ঠী-সহ জাওয়াহিরি তাতে যোগ দেন। তিনি আল-কায়েদাকে এমন দক্ষতায় দীক্ষিত করেন যাতে মিশরীয় গোয়েন্দা তথ্য এড়িয়ে আল-কায়েদা অনুসারীদের সেল সংগঠিত এবং বিশ্বজুড়ে হামলার সুযোগ করে দেয়।

জাওয়াহিরি বছরের পর বছর ধরে আত্মগোপনে ছিলেন। তাকে খুঁজে বের করে হত্যার জন্য একাধিক অভিযান চালানো হয়। মার্কিন গোয়েন্দাদের কাছে খবর ছিল জাওয়াহিরির স্ত্রী এবং পরিবারের সদস্যরা সম্প্রতি কাবুলের একটি নিরাপদ বাড়িতে রয়েছেন। গত রবিবার সূর্যোদয়ের সময় আল-জাওয়াহিরি সেই বাড়ির ব্যালকনিতে একা দাঁড়িয়ে ছিলেন। এরপরই একটি মার্কিন ড্রোন আল-কায়েদা নেতাকে লক্ষ্য করে দুটি হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। ওই হামলায় আল-জাওয়াহিরি নিহত হন।

স্কুলে পড়ার সময়েই জাওয়াহিরি মিশরের নিষিদ্ধ মুসলিম সংগঠনে যুক্তহন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে মিশরের নিষিদ্ধ মুসলিম সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৭৪ সালে কায়রো ইউনিভার্সিটি মেডিকেল স্কুল থেকে স্নাতক এবং এর চার বছর পরে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।কায়রোর কাছেই তিনি একটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু খুব দ্রুত তিনি চরমপন্থী ইসলামিক গোষ্টীগুলির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন, যারা মিশরের সরকারকে উৎখাতের ডাক দিয়েছিল। ১৯৮১ সালে ইসলামিক জিহাদের কিছু সদস্য সেনাবাহিনীর পোশাক পরে কায়রোতে একটি মিলিটারি প্যারেডে ঢুকে প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতকে হত্যা করে।সেই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে অনেকের সঙ্গে জাওয়াহিরিও গ্রেফতার হয়।

প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতকে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ থেকে জাওয়াহিরি মুক্তি পেলেও অবৈধ অস্ত্র রাখার কারণে আদালত তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়। কারাগারে জাওয়াহিরি্র উপর নির্যাতন চলে। এরপরই জাওয়াহিরি ধর্মান্ধ এবং সহিংস জঙ্গি হয়ে ওঠেন। মুক্তি পাবার পর তিনি সৌদি আরব, সেখান থেকে  চলে যান পাকিস্তানের পেশোয়ার এবং সেখান থেকে আফগানিস্তান গিয়ে ইজিপশিয়ান ইসলামিক জিহাদ-এর একটি অংশ প্রতিষ্ঠা করেন। আফগানিস্তানে যখন সোভিয়েত আগ্রাসন চলছিলেন তখন তিনি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন।

১৯৯৩ সালে ইজিপশিয়ান ইসলামিক জিহাদ যখন ফের আত্মপ্রকাশ করে তখন জাওয়াহিরি তার নেতা হন। সংগঠনটি মিশরের বিভিন্ন মন্ত্রীদের উপর হামলা, মিশরের সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টা চালায়। মিশরজুড়ে তারা প্রায় ১২০০ মানুষ হত্যা করে।ধারণা করা হয়, ১৯৯০ এর দশকে জাওয়াহিরি নিরাপদ আশ্রয় এবং অর্থ জোগাড়ের জন্য বিশ্বজুড়ে ঘুরে বেরিয়েছেন। আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সৈন্য প্রত্যাহারের পরের বছর গুলোতে তিনি বুলগেরিয়া, ডেনমার্ক এবং সুইজারল্যান্ডে বসবাস করেছেন। কখনো ভুয়া পাসপোর্ট ব্যবহার করে বলকান অঞ্চল, অস্ট্রিয়া, ইয়েমেন, ইরাক, ইরান এবং ফিলিপিন্স ভ্রমণ করেছেন। উনিশশো ছিয়ানব্বই সালে তিনি রাশিয়ার গ্রেফতার হয়ে ছয়মাস কারাগারে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি ভিসা ছাড়া চেচনিয়া ভ্রমণ করেন।

উনিশশো সাতানব্বই সালে আল-জাওয়াহিরি আফগানিস্তানের জালালাবাদ শহরে যান। সেখানে ওসামা বিন লাদেনের ঘাঁটি ছিল।এক বছর পরে ইজিপশিয়ান ইসলামিক জিহাদ এবং আল-কায়েদাসহ পাঁচটি ইসলামিক জঙ্গি সংগঠন মিলে ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ফ্রন্ট গঠন করে। তারা ইহুদি এবং ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। মার্কিন নাগরিকদের হত্যার জন্য প্রথম ফতোয়া দেয় ইসলামিক ফ্রন্ট। এর ছমাস পরে কেনিয়া এবং তাঞ্জানিয়াতে মার্কিন দূতাবাসে হামলার ঘটনায় ২২৩ জন নিহত হয়। স্যাটেলাইট টেলিফোনে জাওয়াহিরির কথোপোকথন থেকে জানা যায়, এসব হামলার সাথে ওসামা বিন-লাদেন জড়িত।
Share.

1 Comment

  1. sirajul haq ahmad on

    আমেরিকা বিশ্বের সবচেয়ে টপরেডেট সন্ত্রাসীকে কাবুলের কেন্দ্রস্থলে যেতে এবং আশ্রয় তৈরিতে সহায়তা করেছিল। একজন ঘাতক সন্ত্রাসী যার হাতে হাজার হাজার আমেরিকানদের রক্ত লেগেছে তাকে পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলার কৃতিত্বের দাবিদার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

Leave A Reply

Exit mobile version