কলকাতা ব্যুরো: মুম্বাইয়ে পতিতাবৃত্তি ও মানব পাচারের র‌্যাকেট ধরা পড়লো বিএসএফের জালে। আর তাতেই পর্দা ফাঁস হলো এক আন্তর্জাতিক মেয়ে পাচারচক্রের। এক সময় দালাল ধরে সীমান্ত পেরিয়ে এ পারে এসে বিয়ে করে জাল নথি তৈরি করে মুম্বাইয়ে ঘর পেতেছিল তরুণী। আর সেখানে বসেই বাংলাদেশ থেকে আরকাঠিদের মাধ্যমে ফুসলিয়ে মেয়ে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দিত বাণিজ্য নগরীর অন্ধকার গলিতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে আর অপেক্ষা করতে পারেনি। যে ভাবে দালাল ধরে মেয়ে পাচার করে, সে ভাবেই নিজেও বাংলাদেশে ফিরতে গিয়ে জালে পড়লো সীমান্তরক্ষী বাহিনীর। তাকে দীর্ঘ জেরা আর জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এলো নারী পাচারের এক মক্ষীরানীর স্বীকারোক্তি। শেষ পর্যন্ত স্বরূপনগর থানার হাতে অভিযুক্তকে তুলে দিয়েছে বিএসএফ।
বিএসএফ উত্তর ২৪ পরগনার হাকিমপুর সীমান্ত থেকে ২২ আগস্ট ১১২ ব্যাটালিয়নের রক্ষীরা এক মহিলাকে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার সময় ধরে ফেলেন।
ওই মহিলাকে জেরা করে তল্লাশি করতেই তার কাছ থেকে একটি ভারতীয় ভোটার কার্ড এবং প্যানকার্ডও পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই মহিলা নাম জাহানারা খাতুন এবং তার বয়স ২৯ বছর বলে জানান। মহিলার গ্রামের বাড়ি সাতারবর, ডাকঘর-টুকনায়ণ বাজার, থানা- কাপাসিয়া এবং বাংলাদেশের গাজীপুর। জিজ্ঞাসাবাদের সময়, মহিলা দাবি করেন, তিনি ৮ মাস আগে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে এসেছিলেন এবং স্বামী পান্তা মণ্ডলের সাথে থাকেন। তার স্বামী মুম্বাইয়ের কল্যাণে রাজমিস্ত্রি হিসাবে কাজ করেন। দুজনেই কল্যাণের বাসিন্দা মমতাজ নামের এক মহিলার বাড়িতে ভাড়া থাকেন বলে জানা। তাঁর মা অসুস্থ খবর পেয়ে সেখান থেকে কলকাতায় এসে চক্রের পরিচিত এক গাড়ি চালকের মাধ্যমে সীমান্তে পৌঁছেছিলেন বলে জানান। তিনি তার অসুস্থ মাকে দেখার জন্য ভারত থেকে অবৈধ পথে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স মহিলাকে সন্দেহ করেছিল যে সে মানব পাচারের ব্যবসায় জড়িত ছিল। অতএব, তাকে আরও জিজ্ঞাসার জন্য সংলাপ নামে একটি এনজিওর হাতে দেওয়া হয়েছিল। এনজিওর কাউন্সেলিংয়ের সময় কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়। মহিলাটি জানিয়েছিলেন, পেটের তাগিদেই ২০০৯ সালে তিনি ভারতে এসেছিলেন এবং এখানে তিনি পান্তা মণ্ডল নামে একজনকে বিয়ে করেন। সেই-ই তাঁর ভারতীয় ভোটার এবং প্যান কার্ড তৈরি করেছিলেন।
সংলাপের তাপ্তি ভৌমিকের মতে, মহিলা মানব পাচারে জড়িত। ভারত এবং বাংলাদেশী অনেক দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। যারা মানব পাচারের সাথে জড়িত। এই মহিলা তার সহকর্মীদের সাথে মুম্বাইয়ের দাসত্বের ব্যবসায় গরিব মেয়েদের ফুসলিয়ে নিয়ে যায়। মূলত বাংলাদেশ থেকে যুবতী মেয়েদের ভারতে নিয়ে আসে। বাংলাদেশের আমজাদ, সারিন নামে সীমান্তের এক ভারতীয় দালাল গোবরডাঙ্গার বাসিন্দাও তাদের এই চক্রে যুক্ত।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version