কেন টেকঅফের কিছুক্ষণ পরেই এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমানটি ভেঙে পড়লো? এখনও পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো কারণ বলা হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা দুটি বিষয় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। প্রথমত, টেকঅফের পরে ফ্লাইটটি একাধিক পাখির ধাক্কায় নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছাতে পারেনি। যে কারণে স্বাভাবিকভাবেই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাছাড়া যান্ত্রিক ত্রুটির কথাও বলা হচ্ছে। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ১৭ মিনিটে সর্দার বল্লভভাই পাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার ফ্লাইটটি যাত্রা শুরু করে। কিন্তু রানওয়ে ছাড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ফ্লাইটটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এটিসির। টেকঅফের কয়েক মিনিটের মধ্যেই তা নীচে নেমে আসতে শুরু করে এবং জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ভেঙে পড়ে। জানা গেছে, ফ্লাইটটি রানওয়ে ছাড়ার পর পরেই এটিসিকে ‘মে ডে কল’ বা বিপদসংকেত পাঠিয়েছিল। কী ঘটেছিল আকাশে তা নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে।
সম্প্রতি বিমানটির সংস্কারের কাজ হয়েছিল। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের পরে জানা যায়, ফ্লাইটটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল (ইঞ্জিনিয়ারিং ফল্ট)। যদিও তা নিয়ে সরকার বা ফ্লাইট সংস্থার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা পাখির ধাক্কাতেই যে বিপত্তি সেকথা বলছেন। উড়ানের সময়ে আকাশে পাখিদের ধাক্কায় যে গুরুতর বিপদ ঘটতে পারে, এই আশঙ্কার কথা আগেও অনেকবার আলোচিত হয়েছে। তাই এবারও আমেদাবাদের দুর্ঘটনার নেপথ্যেও পাখিদের দলের ধাক্কার প্রসঙ্গ আসছে। প্রাক্তন পাইলটদের অনেকের ধারণা, একাধিক পাখির ধাক্কায় দুটি ইঞ্জিনই বিকল হয়ে গিয়েছিল। ফ্লাইটটি ঠিক ভাবেই টেকঅফ করেছিল। কিন্তু পাখিদের সঙ্গে ধাক্কায় তা নীচের দিকে নেমে আসতে শুরু করে। তবে সবটাই এখনও পর্যন্ত অনুমান, তদন্ত থেকেই দুর্ঘটনার আসল কারণ জানা যাবে। কেউ বলছেন, হতে পারে ফ্লাইটটির ওড়ার ক্ষমতা বিশেষ ছিল না। এর পর যদি একাধিক পাখি ফ্লাইটটিতে ধাক্কা দেয় সে ক্ষেত্রে হতে পারে তা ৬ থেকে ৭ মিনিটের বেশি উড়তে পারেনি এবং পড়ে যায়। এই বিমানটি অপেক্ষাকৃত নতুন। মাত্র ১১ বছরের। তাই যান্ত্রিক সমস্যা থাকার সম্ভাবনা কম।
উল্লেখ্য, ২৪২ জন আরোহী নিয়ে আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার যে বিমান দুর্ঘটনা তাকে গত দশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনা বলা হচ্ছে। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে ফিরেছেন এক যুবক। ওই যুবকের নাম বিশ্বাস কুমার রমেশ। তিনি ছাড়া ২৪২ যাত্রীর ২৪১ জনই মারা গিয়েছে। এওখন বড় প্রশ্ন কেন বিমানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়লো? বিশেষজ্ঞেরা ওড়ার সময়ে যাত্রী, মালপত্রসহ বিমানের ওজন কত হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। প্রত্যেক বিমানের নির্দিষ্ট ভারবহন ক্ষমতা থাকে। কিন্তু অনেক সময় বিমান ওড়ার মুখে এই ওজনের হিসাবে গোলমাল করে ফেলেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। তখন বিমানটি ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। যেকোনো বিমানের আকার ও গঠন অনুযায়ী তার ভারবহন ক্ষমতা নির্দিষ্ট করা হয়ে থাকে। বিমানের মধ্যে যাত্রীদের কোথায় বসানো হবে, কোন দিকে কত যাত্রী বসলে বিমানের সামনের ও পেছনের দিকের ভারসাম্য বজায় থাকবে, বিমান ওড়ার আগে তা হিসাব করতে হয়। এক্ষেত্রে হিসাবে ভুল হয়েছিল কি না, তা নিয়েও বিশেষজ্ঞেরা প্রশ্ন তুলেছেন। ভারতীয় এক বিমান বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, বিমানটি যে বাড়িটিতে ধাক্কা খেয়েছে, সেখানে তার একটি চাকা আটকে গিয়েছিল। ওজনের হিসাবে ভুল হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।
বিশেষজ্ঞেরা অনেকেই বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের বক্তব্য, দুর্ঘটনা-কবলিত বিমানটির ল্যান্ডিং গিয়ারে ত্রুটি থাকতে পারে। হতে পারে ল্যান্ডিং গিয়ারটি বিমান ওড়ার পর ঠিকমতো বন্ধ হয়নি। এই ল্যান্ডিং গিয়ারই বিমানের ভার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বিমান ওঠানামার সময় রানওয়ের সংস্পর্শে আসে ল্যান্ডিং গিয়ার। এখান থেকে বিমানের চাকা বেরিয়ে আসে। ফলে বিমানের গতিও ল্যান্ডিং গিয়ারের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হয়। সেখানে গোলমালের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ভিডিও বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওড়ার পরই বিমানের উপরের দিকে ওঠার ক্ষমতা (লিফ্ট) কমে এসেছিল। একসময় তা একেবারে শেষ হয়ে আসে। তখন বিমানটিকে আর ভাসিয়ে রাখতে পারেননি পাইলট। রানওয়ে ছাড়ার পর বিমানটি মাঝপথে সামান্য ধাক্কা খেয়েছিল বলে মনে হচ্ছে। লিফ্ট কমে যাওয়ার কারণেই এমনটি ঘটতে পারে। বিশেষজ্ঞদের কেউ বলছেন, এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটির ইঞ্জিনে ত্রুটি ছিল। সেটি ভেঙে পড়ার আগে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩২২ কিলোমিটার গতিতে পৌঁছাতে পেরেছিল। যা একেবারেই স্বাভাবিক নয়। ওই সময়ে বিমানের গতি আরও অনেক বেশি হওয়ার কথা। কোনো কারণে বিমানের ইঞ্জিন শক্তি হারিয়ে ফেলে। এতে দুর্ঘটনা অনিবার্য হয়ে ওঠে।