সূর্য গুপ্ত

সেই ছোট্টবেলা থেকে শুনে আসছি এই কথাটা- স্বাধীনতা দিবস! পনেরোই অগাস্টের পুণ্যলগ্নে পালিত হয় প্রতি বছর। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ, প্রভাত ফেরি, সিঙাড়া, জিলিপির স্বাধীনতা দিবস। হেড স্যারের পতাকা উত্তোলনের, পাড়ার মোড়ের মাইকের চোঙায় বাজতে থাকা এয় মেরে বতন কে লোঁগোর স্বাধীনতা দিবস। টিভিতে কত আলোচনা, খবরের কাগজের ক্রোড়পত্রের স্বাধীনতা দিবস। প্রতি বছর সেই একই লেখা- সত্যি সত্যি কি আমরা স্বাধীনতা পেয়েছির স্বাধীনতা দিবস। কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল, বিজেপির স্বাধীনতা দিবস! আচ্ছা, এই এতো রকমের মধ্যে সত্যি স্বাধীনতা দিবস কোনটা? ভাবি, আরও বেশি করে মন খারাপ করে ভাবতে থাকি, স্বাধীনতা – বড্ড বেশি কঠিন বিষয়, বড্ড বেশি দার্শনিক!

স্বাধীনতা – বড্ড বেশি কঠিন বিষয়, বড্ড বেশি দার্শনিক!

কার থেকে, কার জন্য, কিসের স্বাধীনতা! একটা দেশ ভেঙে দুটি থেকে তিনটি হওয়ার? বৃটিশমুক্ত ভারত না ভারতমুক্ত পাকিস্তান না পাকিস্তানমুক্ত বাংলাদেশ- স্বাধীনতার সত্যি গল্প কোথায় লুকিয়ে? স্বাধীনতা কারা পায়? দেশ না মানুষ? স্বাধীন দেশের মানুষ আমরা তো আঁকড়ে আছি বৃটিশ সভ্যতাকে – তাদের ভাষা, তাদের সাহিত্য, তাদের শিক্ষাব্যবস্থা, তাদের আইন সবকিছুই তো আত্তীকরণ করেছি আমরা, বৃটিশদের দুশো বছর তো আমাদের নিঃশ্বাসে , আমাদের অস্থিমজ্জায়। পাকিস্তান- বাংলাদেশ? তারা কি মুক্ত হতে পেরেছে ভারতের থেকে, বৃটিশদের থেকে?
আসল স্বাধীনতা সংগ্রাম কিন্তু এখনো চলছে- সারা পৃথিবীর ঘরে ঘরে। চলছে নিয়ম ভাঙার নিরন্তর সংগ্রাম- নিজের মতো করে ,নিজের ছন্দে বাঁচার লড়াই। সেখানে কোন রক্ষণশীল বউ নিজের গবেষণার ফলাফল জগত্সভায় বলার জন্য বরের অমত সত্ত্বেও প্যারিসের টিকিট কাটে নিজের গয়না বন্ধক রেখে । কোন এক কলেজ ছাত্র কলেজ ছেড়ে দেয় গ্রুপ থিয়েটার করবে বলে। কোন এক বাবা হাসিমুখে নিজের সারা জীবনের সঞ্চয় তুলে নেয় মেয়ের পড়াশোনার জন্য, নিরীহ গৃহবধূ বঁটি তুলে মারতে যায় নিজের স্বামীকে রক্ষা করতে। জীবন বড় জটিল আর জটিলতর হলো স্বাধীনতা। একে পাওয়ার আর পেয়ে না হারানোর লড়াই করে প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি গাঁয়ে, গঞ্জে, শহরে, নগরে – প্রতিটি দিন। আমাদের তাই প্রত্যেক দিন এক নতুন স্বাধীনতা দিবস।

Share.

2 Comments

Leave A Reply

Exit mobile version