কলকাতা ব্যুরো: চতুর্থ দফা ভোটের দিন কোচবিহারে বাহিনীর গুলিতে চার নাগরিকের মৃত্যু নিয়ে তুলকালাম শুরুর মধ্যেই, এক অডিও টেপ প্রকাশ্যে আসায় বঙ্গ রাজনীতিতে নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে নারদ ভিডিও প্রকাশ্যে আসে। সেই ভিডিওতে তৃণমূলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী, সাংসদকে ভুয়ো কোম্পানির প্রতিনিধির থেকে টাকা নিতে দেখা যায়। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল।


আর ২০২১ এ চতুর্থ দফা ভোটের দিন তৃণমূলের ভোট জেতানোর কান্ডারী প্রশান্ত কিশোরের একটি অডিও টেপ প্রকাশ্যে এনেছে বিজেপি। সেখানে কথোপকথনে প্রশান্ত কিশোরের মূল বক্তব্য, এরাজ্যে ক্ষমতায় আসবে বিজেপি। তারা নিজেদের মতো করে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সমীক্ষা চালিয়েছেন। তাতেই এই ফল উঠে এসেছে। তার ওই অডিও ক্লিপের বেশিরভাগটা জুড়েই প্রশান্ত কিশোর কথা বলেছেন, এ রাজ্যে কেন মোদি সরকার আসবে তার স্বপক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে। মোদির প্রতি রাজ্যের অবাঙালি ভোটারদের মুগ্ধতা থেকে শুরু করে মতুয়াদের মোদি প্রীতি – কোন কিছুই বাদ রাখেননি পিকে।
যদিও এই অডিও প্রকাশের পরে, তা বিকৃত বলে নিজের মত করে যুক্তি দিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে সৌগত রায় বলেছেন, যা যুক্তি দেওয়ার তা প্রশান্ত কিশোরই দেবেন। কিন্তু এতেও বিষয়টি থেমে থাকছে না। প্রশ্ন উঠছে, যে পেশাদার সংস্থাকে কয়েকশো কোটি টাকা দিয়ে তৃণমূল কাজে লাগিয়েছে, সেই সংস্থার প্রধান কি করে এমনভাবে বক্তব্য রাখেন এবং তিনি যে বক্তব্য রেখেছেন, এই ফোনের মাধ্যমে, তার সঙ্গে তার প্রকাশ্যে দেওয়া বক্তব্যের কোন মিল থাকছে না। ফলে তিনি একদিকে বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন, অন্যদিকে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে উঠছে। এমনকি এখনই তাকে দলের সমস্ত কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত বলেও দাবি উঠেছে তৃণমূলের একাংশের তরফে।


দলের ডামাডোলে যে পেশাদার সংস্থাকে মমতা এনেছেন জয় নিশ্চিত করতে, সেই সংস্থার প্রধান এখন ঘরের শত্রু বিভীষণ কিনা, সেই প্রশ্নই বড় হয়ে উঁকি মারছে তৃণমূলের অন্দরেই। প্রসঙ্গত, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর মাধ্যমেই আইপ্যাক সংস্থাকে নিয়োগ করেছিল তৃণমূল। যা নিয়ে তৃণমূলের কোচবিহারের মিহির গোস্বামী থেকে শুভেন্দু অধিকারী- সকলেই এই সংস্থাকে ভোটের কাজে লাগানোর বিরোধিতা করে বক্তব্য রেখেছিলেন। তখন পি কে বলেছিলেন, বিজেপি একশর বেশি আসন পাবে না। এদিনও তার অডিও ক্লিপ প্রকাশের পর তিনি প্রকাশ্যে এই দাবি করলেও, তার এই গোপন অডিও ক্লিপ কিন্তু ঠিক অন্য কথাই বলছে। ফলে চতুর্থ দফার ভোটের দিন নতুন জল্পনা শুরু হয়েছে, আদতে পিকে কার হয়ে কাজ করছেন তা নিয়ে।
আবার অনেকেই এর মধ্যেও ২০১৬ পুনরাবৃত্তির আশায় বুক বাঁধছে। তাদের মতে সে সময় ভিডিও ক্লিপে নেতাদের টাকা নিতে দেখার পরেও গেল গেল রব উঠেছিল। কিন্তু সেই বার আরো বেশি আসন নিয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছিল, এটা ভোলা চলবে না।
যদিও অন্যপক্ষ স্বগতোক্তির ঢঙে বলছে, আশায় বাঁচে চাষা।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version