আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন, তার ঠিক ১০ মাস আগে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব কেন আচমকা মুখ্যমন্ত্রীর পদ পদ ছেড়ে দিলেন, তা নিয়ে ত্রিপুরার রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে নানা জল্পনা। ত্রিপুরায় ২০১৮ সালে বিজেপি প্রথমবারের জন্য ক্ষমতা দখল করেছিল। তখন বিজেপি নেতৃত্ব বিপ্লব দেবকে মুখ্যমন্ত্রী করে। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার এত আগে কেন বিপ্লব মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন? রাজ্যপালকে ইস্তফার চিঠি জমা দেওয়ার আগে বিপ্লব দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে কি বিপ্লব বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশেই ইস্তফা দিলেন। সূত্রের খবর বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে বিপ্লবকে ইস্তফা দিতে বলা হয়েছিল। রাজ্যপালকে জমা দেওয়ার পরে বিপ্লব বলেছেন, ‘‘দল আমাকে যেখানে যে কাজের জন্য ভাববে, আমি তাতেই রাজি।’’ এমনকি আগামী দিনে দল তাঁকে সাংগঠনিক কাজে ব্যবহার করবে বলেও তিনি দাবি করেছেন। ঘটনা যাই হোক ত্রিপুরার সাম্প্রতিক রাজনিতিতে বিপ্লব দেবের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফার ঘটনা যে যথেষ্ট নাটকীয় সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

ত্রিপুরায় সরকারে আসার আগে বিজেপির সংগঠন এবং ক্ষমতায় এসে রাজ্য শাসনে বিপ্লব দেবের ভূমিকা নিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যথেষ্ট সন্তুষ্ট ছিল। কয়েক মাস পরেই ত্রিপুরায় বিধানসভা ভোট। ইতিমধ্যে সে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস নিজেদের সংগঠন মজবুত করতে শুরু করেছে। আগরতলায় গত পুরভোটেও তৃণমূল কংগ্রেস তাদের উপস্থিতি বুঝিয়ে দিয়েছে৷ বিজেপির বেশ কিছু নেতা কর্মীও অনেকদিন ধরে দল ছেড়ে তৃণমূল শিবিরে যোগ দিতে মুখিয়ে রয়েছেন৷ ঠিক এরকম একটি পরিস্থিতিতে বিপ্লব দেবের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফাকে রাজনৈতিক মহল বিজেপির মাস্টারস্ট্রোক বলে মনে করছে। ঘটনা যাই হোক না কেন জল্পনা থেকে এই ইঙ্গিতও মিলছে যে বিপ্লব স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেননি,বিপ্লব দেবের ইস্তফা আসলে বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দলের ফল। ফলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশেই বিপ্লবকে রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগ পত্র দিতে হয়েছে। তাছাড়া বিধানসভা নির্বাচনের যেখানে ১০ মাস বাকি সেই সময় বিপ্লব দেব হঠাৎ কেন ইস্তফা দিলেন এই প্রশ্নটিও অনেক বেশি গুরুত্ত্বপূর্ণ।

বিপ্লবের পদত্যাগ নিয়ে তৃণমূলের বক্তব্য, বিপ্লবের নেতৃত্বে ত্রিপুরা বিজেপিতে গোষ্ঠী কোন্দল চরমে উঠেছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের বিরুদ্ধে তাঁর দলের একটা বিরাট অংশ বিক্ষুব্ধ৷ তাছাড়া বিপ্লবের আমলে ত্রিপুরার অবস্থা দিন দিন খারাপ হয়েছে। তাঁর জনপ্রিয়তাও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে৷ এই অবস্থায় বিজেপি বিপ্লবকে সরিয়ে নিজেদের মুখ বাঁচানোর একটা চেষ্টা করল৷ বিপ্লবের পদত্যাগ নিয়ে তৃণমূল যে ব্যাখ্যাই করুক, এটা ঘটনা বিপ্লবের হাত ধরেই ২৫ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ত্রিপুরায় বিজেপির পথ চলা শুরু হয়েছিল৷ বিজেপি মানিক সরকারের নেতৃত্বাধীন বাম সরকারকে হারাতে সক্ষম হয়েছিল বিপ্লবের নেতৃত্বে৷ স্বভাবতই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ত্রিপুরা বিজেপির সভাপতি বিপ্লব দেবকেই সে রাজ্যের  মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেয়। কিন্তু এটাও ঘটনা ক্ষমতায় আসার কিছুদিনের মধ্যেই বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল চরমে ওঠে৷ দলের বহু নেতা কর্মী বিপ্লবের নেতৃত্বে আর আস্থা রাখতে পারছিলেন না। তাঁরা বিপ্লবের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন। বিজেপির শীর্ষনেতারা বিপ্লবের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন৷ এটা স্পষ্ট ত্রিপুরায় বিজেপির সংগঠনের মধ্যে একটা ফাঁক তৈরি হয়েছিল।দলে গোষ্ঠী কোন্দল এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে কারণে ত্রিপুরা বিজেপি কারণে ছেড়ে বেরিয়ে যান সুদীপ রায় বর্মনের মতো একাধিক নেতা। দল ছাড়ার আগে তাঁরা বিপ্লব দেবের পদত্যাগের দাবিও তুলেছিলেন। বিপ্লব দেবের পদত্যাগ আপাত দৃষ্টিতে আচমকা মনে হলেও বিপ্লব দেবের জায়গায় নতুন মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন করতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রস্তুত ছিল। যে কারণে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব খুব তাড়াতাড়িই অন্য কোনও নেতাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বেছে নিতে পেরেছে।

বিপ্লব দেবের আচমকা পদত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, বিভিন্ন সময়ে বিপ্লব দেবের করা মন্তব্যের একটা বড় ভূমিকা থাকতে পারে। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকাকালীন বিপ্লব একাধিকবার এমন মন্তব্য করেছেন যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।এমনকি তিনি বিজেপির পক্ষে অস্বস্তির কারণ হয়েছেঞ। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকবেন কি না, তা নির্ধারণ করতে গণভোট দরকার বলে যে মন্তব্য করেছিলেন তা থেকে তাঁর দল বিপ্লবের ওপর যথেষ্ট বিরক্ত হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আরেক অংশের ধারণা, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ২০২৩-এর ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে বিপ্লবকে মনোনয়ন দিতে চাইছে না। বিজেপি শিবিরের ধারণা বিপ্লব দেবকে মুখ্যমন্ত্রী রেখে নির্বাচনে গেলে প্রতিষ্ঠানবিরোধী জনমত আরু বেশি জোরালো হতে পারে। তাই, আচমকা মনে হলেও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিপ্লব দেবকে সরিয়ে নতুন মুখ নিয়ে এল।

Share.

1 Comment

  1. বিজেপি নেতৃত্ব ত্রিপুরা রাজ্যের বিধানসাভা নির্বাচনের আগে বিপ্লবকে সরিয়ে নতুন মুখ এনে চালে ভুল করলো।

Leave A Reply

Exit mobile version