চতুর্থ পর্ব

সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে ম্যাসাকারের পর আল কাপোন একটি জাতীয় ইস্যু হয়ে উঠলেন। পুলিশ প্রশাসন কিছুতেই তাঁকে বাগে আনতে না পারায় শেষ পর্যন্ত এফবিআই মাঠে নামলো। ব্যুরোর বাঘা বাঘা অফিসাররা কাপোনকে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দিল। কাপোনের যাবতীয় গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে তারা লাপোনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করল। ১৯২৯ সালের ১২ মার্চ সেই মামলার শুনানির দিন ধার্য হল। কিন্তু আল কাপোন ওই দিন আদালতে হাজির হলেন না। এতে প্রশাসন কাপোনের উপর আরও খাপ্পা হয়ে উঠলো। কাপোনের উকিল পরিস্থিতি সামাল দিতে কাপোন অসুস্থ বলে শুনানির দিন আরও এক সপ্তাহ পিছিয়ে দিলেন। কিন্তু এফবিআই অফিসাররা জানতে পারলেন, আল কাপোন দিব্যি সুস্থ, তিনি শুনানির দিন আদালতে হাজিরা না দিয়ে মায়ামিতে ঘোড়দৌড় উপভোগ করছিলেন।  

কিন্তু ২৭ মার্চ কাপোন শুনানিতে হাজির হতে বাধ্য হলেন এবং আদালত অবমাননার দায়ে তাকে আদালতের বাইরে গ্রেফতার করা হল। এর আগেও আল কাপোন এবং তার দেহরক্ষী ফিলাডেলফিয়াতে অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়েছিলেন। কিন্তু প্রথমবার তিনি জামিন পেলেও দ্বিতীয়বার তাঁকে এক বছর করে দুটি মামলায় জেলে থাকতে হয়েছিল। সেটাই ছিল মাফিয়া বস হওয়ার পর আল কাপোনের প্রথমবারের মতো লম্বা জেলবাস। তবে সেবার কাপোন এক বছর পর জেল থেকে বেরিয়ে আসতে সমর্থ হয়েছিলেন।

কিন্তু এবার এফবিআই (FBI) আল কাপোনকে ধরার জন্য বিরাট জাল বিস্তার করেছিল। অন্যদিকে কাপনও সেই জাল ছিড়ে বেরিয়ে আসার নানা কৌশল চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এফবিআই-এর একের পর এক চেষ্টা যেভাবে কাপোন ব্যর্থ করে দিচ্ছিলেন তাতে মনে হচ্ছিল সেয়ানে সেয়ানে যুদ্ধ চলছে। কাপোন যেন ব্যুরোর কর্মকর্তাদের বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, ‘তোমরা চলো ডালে ডালে, আমি চলি পাতায় পাতায়’। ব্যুরোর কর্মকর্তারা বারবার ব্যর্থ হয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। অবশেষে তারা অন্য রাস্তা ধরলেন। তারা বুঝেছিলেন সহজ পথে কাপোনকে ঘায়েল করা যাবে না। এতদিন এফবিআই অফিসারেরা বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আল কাপোনের যোগসুত্রগুলি প্রমাণ করার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। কিন্তু কাপোন খুন সন্ত্রাসগুলি এতটাই পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন করতেন যেখানে তাঁর সংযোগ রাখতেন না। সেটা দীর্ঘ তদন্ত চালানোর পর এফবিআই অফিসারেরা ধরতে পেরে তারা কাপোনের আয়ের উৎস, কর ফাঁকিসহ অর্থ সম্পর্কিত বিভিন্ন অপরাধের দিকে নজরদারি শুরু করলেন। একে একে তাদের হাতে এসে পড়লো একাধিক তথ্য। সেইসব নথি সংগ্রহের পর ব্যুরো আল কাপোনসহ র‍্যালফ বোটলস কাপোন, জ্যাক গুজিক, ফ্র্যাঙ্ক নিতির মতো দুর্ধ্বর্ষ মাফিয়া ডনদের নামে মামলা ঠুকে দিল।

এই প্রথম আল কাপোন চিন্তায় পরে গেলেন। কারণ এবার তিনি ফাঁদে পড়ে গিয়েছেন। কাপোন নিজের দোষ স্বীকার করে আদালতে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু পাল্টা শর্ত জুড়ে দিলেন যে, তাঁকে আড়াই বছরের বেশি জেলে আটকে রাখা যাবে না। কাপোনের এই শর্ত শুনে প্রধান বিচারপতি হেসে ফেললেন। অন্যদিকে কাপোনও আত্মসমর্পণ করতে রাজি হলেন না। কিন্তু তা আর হবার নয়, কারণ তখন জালে আটকা পড়েগিয়েছেন। তাই নিয়ম অনুযায়ী শুরু হল আল কাপোনের বিচার। এফবিআই অফিসারেরা আল কাপোনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সব ধরনের প্রমাণ জোগাড় করে ফেলেছে। যদিও উদ্ধত আল কাপোন এররপরেও বেশ নিশ্চিন্ত ভাবেই বিচারকার্যে অংশ নিচ্ছিলেন। তাঁর ভাবখানা এরকমই ছিল যে তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই মিথ্যে এবং প্রমাণগুলিও ধোপে টিকবে না।

এতে সবাই খুব অবাক হচ্ছিল। কাপোনের উদ্ধত আচরণের কারণ অনুসন্ধান শুরু হয়ে যায়। শেষপর্যন্ত বেরিয়ে এল আসল কারন। আল কাপোন বিচারক বোর্ডের সবাইকে ঘুষ খাইয়ে বশ করে ফেলেছে। কিন্তু আদালতের প্রধান বিচারপতি ঘুষ থেকে শত হাত দূরে ছিলেন। তিনি আল কাপোনের রায়ের জন্য পুরনো বিচারক বোর্ড বাতিল করে নতুন বিচারক বোর্ড গঠন করলেন। ১৯৩১ সালের ১৮ অক্টোবর আল কাপোনকে কর ফাঁকির মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এক্ষেত্রে সাধারণত আসামির সর্বোচ্চ তিন বছরের জেল দেওয়া হয়। কিন্তু আল কাপোনের কর ফাঁকির মামলায় প্রধান বিচারপতি ১১ বছরের জেল সেই সঙ্গে ৫৭ হাজার ডলার জরিমানা প্রদান করেন। আনুসাঙ্গিক আরও কিছু বিষয় যোগ করে সেই অর্থ প্রায় ২ লক্ষ ডলারের কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছায়।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version