কলকাতা ব্যুরো: নির্লজ্জ বা বেহায়ার মত বাংলা অভিধানের নেতিবাচক শব্দ গুলো মনে হয় ক্লিশে হয়ে যাবে রাজনৈতিক নেতাদের আচরণ দেখলে। ২৪ ঘণ্টা আগে কলকাতা হাইকোর্ট করোনা নিয়ন্ত্রণে কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও জেলাশাসকদের। সংবাদমাধ্যমে সেই খবরও ফলাও করে প্রচার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এদেশে সবার ওপরে যে রাজনীতি, তা আবার প্রমাণ করে দিয়েছে সব রাজনৈতিক দল এদিন সকাল থেকে যে ভাবে বিধি না মেনে প্রচার চালিয়েছে, টা দেখে। বিজেপি, তৃণমূল বা জোটের দলগুলি যেভাবে ভিড় জমিয়ে মিটিং, মিছিল করেছে, তাতে মনে হয়েছে, হাইকোর্টের নির্দেশ সম্পর্কে এরা কেউ অবগত নন, অথবা রাজনৈতিক নেতারা এতটাই দাম্ভিক, উন্নাসিক যে আদালতের নির্দেশ এরা মানেন না।
তৃণমূলের হয়ে প্রচারে জয়া বচ্চনের মিছিল বা বিজেপির স্মৃতি ইরানি- তাদের রোড শো দেখলে কেউ বলবে না যে কলকাতা হাইকোর্ট করোনা মানাতে কঠোর রায় দিয়েছে মঙ্গলবার। মাস্ক নেই, নেই সোশ্যাল ডিসটেন্স, কাতারে কাতারে লোক চলেছে উদ্বাহু হয়ে, রাজনৈতিক দলের তাবেদারী করতে আর এইসব ক্ষমতা লিপ্সু নেতা-নেত্রীরা আদালতের নির্দেশ পরোয়া না করেই ভোট বাক্স স্ফীত করতে নেমে পড়েছেন পার্টির নির্দেশে।

তৃণমূল সাংসদ দেব এদিন মিছিল করেন অশোকনগরে। তার সেই রোড শো এর ভিড় দেখলে এটা স্পষ্ট যে, তিনি বা তার দল থোড়াই কেয়ার করেন কোর্টের নির্দেশ। তাদের কাছে শেষ মুহূর্তে প্রচার করে যতটুকু লোককে নিজেদের ভোটবাক্সে ভোট দেওয়ানো যায় সেই চেষ্টাই করা।

বিজেপির অভিনেতা নেতা হিরন বা তৃণমূল সাংসদ নুসরাত থেকে মধ্যমগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী রথীন ঘোষ, সকলেরই প্রচার দেখলে একটা বিষয় স্পষ্ট, এই মুহূর্তে এইসব নেতা এবং তাদের সাঙ্গ-পাঙ্গরা ধরে নিয়েছেন হাইকোর্ট রায় দেবে, কিন্তু নেতার সঙ্গে থাকলে সাত খুন মাফ। আর নেতারাও মনে ধরে নিয়েছেন, দল সঙ্গে থাকলে কোন আদালতে তাদের ছুঁতে পারবে না।
হাইকোর্ট যেখানে জেলাশাসক এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, এমনকি প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছে, সেখানে রায়দানের ২৪ ঘণ্টা পরেও কিন্তু কমিশন এ দিন কোন রকম করোনা বিধি না মেনে মিছিল-মিটিং করায় কোন রাজনৈতিক দল বা নেতাকে শোকজ করেছে বা সতর্ক করেছে বলে জানা যায়নি। ফলে কমিশন আদপেই ঠুটো জগন্নাথ কিনা, এখন সেই প্রশ্নই বড় হয়ে উঠছে। অথচ ৭ এপ্রিল হাইকোর্টে মামলা দায়েরের পর তড়িঘড়ি কমিশন বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দিয়েছিল প্রয়োজনে মিটিং-মিছিল বন্ধ করে দেওয়ার। কিন্তু তাদের রাজনৈতিক বাবুদের বিরুদ্ধে কিছু পদক্ষেপ করার ক্ষমতা আদপেই ‘নিরপেক্ষ’ নির্বাচন কমিশনের কতটা আছে, সেই প্রশ্ন চোখে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দিচ্ছে কমিশনের পদক্ষেপেই।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version