কলকাতা ব্যুরো: রাজ্যে উত্তরোত্তর করোনা বাড়তে থাকায় দিশেহারা মানুষ। করোনা ঠেকাতে সোশ্যাল ডিসটেন্স মানা বা কারফিউ জারির মতো ব্যবস্থা প্রয়োগ করা যায় কিনা তা নিয়েও যখন জোর চর্চা নাগরিক মহলে। তখন হাটে হাড়ি ভেঙে দিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে অন্যান্য রাজ্য যখন সর্তকতা অবলম্বন করছে, তখন এ রাজ্যের কোনো রাজনৈতিক দলই তা নিয়ে গা করছে না বলে অভিযোগ। সকলেই ভোট যুদ্ধে মেতে কোন রকম করোনাকে আমল দিচ্ছে না বলে অভিযোগ ছিল বিভিন্ন মহল থেকে।
বৃহস্পতিবার বেহালায় ভোট প্রচারে গয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন, কেন্দ্র লকডাউনের চেষ্টা করেছিল। আমরা তা করতে দিইনি। কারণ তাতে মানুষ ভোট দিতে পারবে না। মুখ্যমন্ত্রীর কথা থেকে স্পষ্ট, রাজনৈতিক দলগুলি এ রাজ্যে আগামী অন্তত এক মাস করোনায় মৃত্যুর মিছিল চললেও, কোন পদক্ষেপ হোক, তা চাইবে না, বা চাইছে না। সব রাজনৈতিক দলেরই মনের কথা এদিন ফাঁস করে দিয়েছেন তাদের প্রতিনিধি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্বভাবসিদ্ধ বিজেপির সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কথা জানাতে গিয়ে উল্টে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তার বা তাদের মতো রাজনীতিকদের মানসিকতা। তারা যে নাগরিকদের কি চোখে দেখেন, তা আরও স্পষ্ট এই ভোট বাজারে নতুন করে করোনার জোয়ারে।


এই অবস্থায় এ রাজ্যের মানুষের ভবিষ্যৎ কি হতে চলেছে, তা নিয়ে আতঙ্ক আরও বাড়ছে। ভোট প্রচারে রাজনৈতিক দলগুলি এতটাই মগ্ন, তারা সোশ্যাল ডিসটেন্স বা মাস্ক পরার ব্যাপারে কোনো রকমে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। সে ক্ষেত্রে যেমন অমিত শাহ রোড শো এ মুখ খুলেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন, একইভাবে সুজন চক্রবর্তী থেকে লকেট চট্টোপাধ্যায় হয়ে ভাইজান আব্বাস। এদের মধ্যে অবশ্যই ব্যতিক্রম অধীর চৌধুরীর মতো দু- একজন। কিন্তু তারাও যখন মিছিল বা জনসভায় যাচ্ছেন সেখানে হাজার হাজার মানুষ গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে বা বসে তাদের ভোটের ময়দানে ভিড় বাড়াচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে সতর্কতার কোনো উদ্যোগ কোন রাজনৈতিক দলের থেকেই দেখা যাচ্ছে না।
অথচ দেশে একদিনে করোনা লাফিয়ে বাড়ছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ১ লক্ষ ১৬ হাজার মানুষের করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। এই অবস্থায় মধ্যপ্রদেশ সরকার এদিন থেকেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লকডাউন এর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মহারাষ্ট্রের বেশকিছু জেলায় রাতে কার্ফু জারি হয়েছে। কর্ণাটক এবং তামিলনাড়ুতে কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ব্যতিক্রম শুধু বাংলা। কারণ ভোট চলছে। নতুন সরকার আসবে। তাই করোনায় আপাতত মানুষ মরে মরুক। রাজনীতিকদের আগে ভোট বাক্স ভরানোর দায় আছে। তাই তৃণমূল নেত্রী সদর্পে ঘোষণা করেছেন, লকডাউনের চেষ্টা করলেও আমরা হতে দেব না। তার ভোট বাক্স তাহলে দুর্বল হয়ে পড়বে! কিন্তু মানুষের প্রাণ!!

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version