কলকাতা ব্যুরো: অনুব্রত মণ্ডলের চিকিৎসা নিয়ে তুঙ্গে বিতর্ক। এই প্রথমবার মুখ খুললেন বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার বুদ্ধদেব মুর্মু। তাঁর দাবি, জেলা সভাধিপতি তথা সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরীর নির্দেশেই অনুব্রতর বাড়িতে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসককে পাঠিয়েছিলেন তিনি। যদিও হাসপাতাল সুপারের বিস্ফোরক অভিযোগ কার্যত নস্যাৎ করেছেন তৃণমূল নেতা। সূত্রের খবর, হাসপাতাল সুপারকে জেরা করতে পারে সিবিআই।
গরু পাচার মামলায় গত সোমবার অনুব্রতকে নিজাম প্যালেসে তলব করে সিবিআই। তবে তাঁর আইনজীবী ই-মেল মারফত আধিকারিকদের জানান, অনুব্রত অসুস্থ। ওইদিন এসএসকেএমে আসার কথা রয়েছে। তাই তাঁর পক্ষে ওইদিন তলবে সাড়া দেওয়া সম্ভব নয়। ওইদিন এসএসকেএম হাসপাতালে স্বাস্থ্যপরীক্ষা হয় তাঁর। তৃণমূল নেতার চিকিৎসায় গঠিত সাত সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডে থাকা চিকিৎসকরা অনুব্রতর একাধিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করান।
সমস্ত রিপোর্ট খতিয়ে দেখে তাঁরা জানিয়ে দেন ক্রনিক রোগ ছাড়া হাসপাতালে ভরতি হওয়ার মতো কোনও সমস্যা নেই তাঁর। এরপর সোজা চিনার পার্কের ফ্ল্যাটে চলে যান অনুব্রত। মাত্র কিছুক্ষণের মধ্যে ওই ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে পড়েন। গন্তব্য বোলপুরের নিচুপট্টির বাড়ি।
মঙ্গলবার সকালে ওই বাড়ি থেকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারীকে বেরতে দেখা যায়। শারীরিক অবস্থা খতিয়ে দেখে ‘বেড রেস্টে’র পরামর্শ দেন চিকিৎসক। তবে তা নিয়েই তৈরি হয় বিতর্ক। কেন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক বাড়িতে গিয়ে তৃণমূল নেতার চিকিৎসা করলেন, প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। কার নির্দেশে এই কাজ করলেন চিকিৎসক, তা নিয়ে শুরু হয় জোর আলোচনা। ওই চিকিৎসক অবশ্য বলেন, হাসপাতাল সুপারের কথামতো অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে গিয়েছিলেন। ‘বেড রেস্টে’র পরামর্শ দেন। এমনকী তাঁর কাছে কল রেকর্ড রয়েছে বলেও দাবি করেন চন্দ্রনাথ।
শনিবার সকালে অবশ্য চিকিৎসকের দাবি নস্যাৎ করলেন বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার বুদ্ধদেব মুর্মু। তিনি বলেন, মঙ্গলবার সকালে জেলা সভাধিপতি তথা বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী আমাকে ফোন করেছিলেন। উনি বলেন অনুব্রত মণ্ডল অসুস্থ। বাড়িতে মেডিক্যাল টিম পাঠাতে হবে। আমি ছুটিতে ছিলাম। সহকর্মী চন্দ্রনাথ অধিকারীকে ফোন করে অনুব্রতর বাড়িতে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলাম। উনি বলেন, আমি ছুটিতে আছি। দেখে নিচ্ছি। যেহেতু বিকাশবাবু মৌখিক নির্দেশ দিয়েছিলেন তাই সরকারি হাসপাতালের প্যাড, স্ট্যাম্প ব্যবহার করতে বারণ করেছিলাম। তবে বেড রেস্ট লিখতে বলিনি। ওনার চিকিৎসা করে বেড রেস্টের পরামর্শ দেওয়ার কথা মনে হয়েছিল। তাই দিয়েছিলেন।
এদিকে, পালটা সুপারের দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন বিকাশ রায়চৌধুরী। তৃণমূল বিধায়কের দাবি, অনুব্রত মণ্ডলের বাড়ি থেকে ফোন করে জানানো হয়েছিল তিনি অসুস্থ। ফিসচুলা ফেটে গিয়েছে। সেই তথ্য আমি হাসপাতাল সুপারকে দিয়েছিলাম। তবে বাড়িতে চিকিৎসক পাঠানোর নির্দেশ দিইনি। কার নির্দেশে অনুব্রতর বাড়িতে সরকারি চিকিৎসক গিয়েছিলেন, তা তদন্তসাপেক্ষ। তবে সূত্রের খবর, বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপারকে জেরা করতে পারে সিবিআই।