হিমাচল প্রদেশের খাজ্জিয়ার পাহাড়ে সাজানো এক টুকরো স্বর্গ। ভারতের সুইজারল্যান্ড নামে জায়গাটির পরিচিতি।বেড়ানোর জন্য হিমাচল প্রদেশে আছে সিমলা, কুলু, মানালির মতো বেশকিছু পর্যটন কেন্দ্র। সাধারণত পর্যটকরা এই জায়গাগুলি ঘুরেই বাড়ি ফেরেন। কিন্তু পাহাড়ে সাজানো খাজ্জিয়ারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ৷ সবুজে ঢাকা সারি সারি পাহাড় জায়গাটিকে করে তুলেছে ‘পাহাড়ো কি মালিকা’। পশ্চিম হিমালয়ের ধৌলাধর পর্বতমালার পাদদেশে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২০০০ মিটার উপরে অবস্থিত খাজ্জিয়ার ডালহৌসি থেকে খুব দূরে নয়। শীতকালে গেলে মনে হতে পারে সুইজারল্যান্ডেই এসে পড়েছেন৷ তুষারপাতে মাঝেমধ্যেই এখানকার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়৷ সুইস দূত উইলি পি ব্লেজার, ভাইস-কাউন্সিলর এবং ভারতে সুইজারল্যান্ডের চ্যান্সারির প্রধান খাজ্জিয়ারকে ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ বলে বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রে নিয়ে আসেন। সেই থেকে জায়গাটি ‘ভারতের সুইজারল্যান্ড’ নামে পরিচিত।

ডালহৌসির কাছে এই পাহাড়ি শহরের বুক চিরে তৈরি হয়েছে একটি লেক৷ সেই ঝিলকে ঘিরে রয়েছে ছোট ছোট কাঠের বাড়ি৷ পর্যটকদের জন্য সেখানে প্যারাগ্লাইডিং, ট্রেকিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে৷ অনেকেই আবার ঘোড়ায় চেপে প্রকৃতির কোলে ঘুরে বেড়ান৷ শীতকালে গেলে মনে হবে সুইজারল্যান্ডেই এসে পড়েছেন৷ কারণ তুষারপাতে মাঝে মধ্যেই এখানকার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়৷

খাজ্জিয়ার থেকে দাইনকুণ্ডর দূরত্ব ৩.৫ কিলোমিটার। ট্রেকটি ডালহৌসি-খাজ্জিয়ার সড়কের খাজ্জিয়ার থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে শুরু হয় এবং দাইনকুণ্ডের ফোলানি দেবী মন্দিরে শেষ হয়। পথের দু’পাশের অপরূপ শোভা উপভোগ করতে করতে এগোনো যায়। আছে আরও কয়েকটি দেখার মতো জায়গা।

দৌলাধর পাহাড়

সবুজ-পাইন এবং তৃণভূমি ঘেরা দৌলাধর পাহাড় খাজ্জিয়ারের অন্যতম আকর্ষণ। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতি মনোরম। দিনের বেলায় একরকম, রাতের বেলায় আর একরকম। কোথাও নেই দূষণের চিহ্নমাত্র। প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেওয়া যায়। নির্জন নিরিবিলির মধ্যে কাটিয়ে দেওয়া যায় বেশ কিছুক্ষণ। ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে পাখি। আবার দূরে চলে যায়। আলোর মতো। দিনের বেলায় কাছে আসে, সন্ধে নামলেই দূরে। এক দীর্ঘ মায়াকবিতা রচিত হয়ে যায় ঢেউখেলানো পাহাড়ভূমিতে।

কালাটোপ অভয়ারণ্য

খাজ্জিয়ার কালাটোপ অভয়ারণ্য একটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। যেখানে বিভিন্ন ধরনের গাছ ও বন্যপ্রাণী রয়েছে। আছে দেবদারু বন। গাছগুলো মাথা দোলায় মৃদু হাওয়ায়। ভোরের বেলা সূর্যের আলো আদর মাখায়। সারা বছর বহু মানুষ এখানে পিকনিক করতে আসেন। অনেকেই করেন ট্রেকিং।

খাজ্জিয়ার ঝিল

খাজ্জিয়ার ঝিল এই অঞ্চলের অন্যতম আকর্ষণ। পাহাড়ি শহরের বুক চিরে তৈরি হয়েছে ঝিলটি। ঝিলের চারপাশে হাঁটতে দারুণ লাগে। অনেকেই আবার ঘোড়ায় চেপে প্রকৃতির কোলে ঘুরে বেড়ান৷ ঝিলটি খুব বড় নয়। তবে চারপাশটা বেশ সাজানো-গোছানো। আছে সবুজ তৃণভূমি। তার ওপর হাঁটাচলা করা যায়। খেলাধুলো করে ছোটরা। আছে নানা রকমের গাছ। রংবেরঙের ফুল ফুটে থাকে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকমের ফুল। দেখে মন ভাল হয়ে যায়। ঝিলের ধারে রয়েছে ছোট ছোট কাঠের বাড়ি।

খাজ্জি নাগ মন্দির

ঝিল থেকে একটু দূরে রয়েছে খাজ্জি নাগের মন্দির। খ্রিস্টীয় ১২ শতকে চম্বার রাজা পৃথ্বী সিংয়ের তৈরি। মন্দিরটিতে একটি সোনার গম্বুজ রয়েছে, যা সোনার দেবী মন্দির নামেও পরিচিত। মন্দিরের মণ্ডপ প্রদক্ষিণ পথের ছাদ থেকে ঝুলন্ত পাণ্ডব ও পরাজিত কৌরবদের ছবি দেখতে পাওয়া যায়। গর্ভগৃহ কাঠ দিয়ে খোদাই করা। মন্দিরটি সাপ বা নাগ-পুজোর জন্য নিবেদিত। ভিতরে কিছু সাপের মূর্তি রয়েছে। ফলে বোঝাই যায়, অঞ্চলে এক সময় সাপের উপদ্রব ছিল বা আজও রয়েছে। সাপের মূর্তির পাশাপাশি মন্দিরে রয়েছে শিব এবং দেবী হাদিম্বার মূর্তি। সারা বছর বহু মানুষ মন্দিরটি ঘুরে দেখেন। অনেকেই পুজো দেন।

কীভাবে যাবেন?

আকাশপথে ডালহৌসি পৌঁছে যান। সেখান থেকে ভাড়া গাড়িতে খাজ্জিয়ার। ২০ কিলোমিটার দূরত্ব। খাজ্জিয়ার থেকে বাস পরিষেবা সীমিত। স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী সময় পরিবর্তিত হয়। বেশিরভাগ পর্যটক ব্যক্তিগত বা ভাড়া-করা যানবাহনে খাজ্জিয়ার ভ্রমণ করেন। কাছের রেল স্টেশন পাঠানকোট। ১১৮ কিলোমিটার দূরে। দিল্লি থেকে পাঠানকোট দশটি ট্রেন চলে। দিল্লি থেকে দূরত্ব ৫৮০ কিলোমিটার। আছে বাস সার্ভিস।

কোথায় থাকবেন?

খাজ্জিয়ারে এইচপি ট্যুরিজম পরিচালিত একটি হোটেল এবং কিছু কটেজ রয়েছে। সেখানে পর্যটকরা থাকতে পারেন। এ ছাড়া রয়েছে দুটি রেস্ট হাউস। পিডব্লিউডি ও বন বিভাগের। কয়েকটি প্রাইভেট হোটেলও গড়ে উঠেছে। সেখানেও পাওয়া যায় উন্নত পরিষেবা। থাকা-খাওয়ার কোনও অসুবিধা হবে না। খাজ্জিয়ারে গেলে দূর হয়ে যাবে শরীর ও মনের ক্লান্তি। জন্ম নেবে অন্যরকম ভাললাগার। একবার গেলে বারবার যেতে ইচ্ছে করবে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version