পৃথিবীতে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যার সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।এমনই এক ব্যাখ্যাতীত ঘটনা ঘটেছিল কানাডার  একটি গ্রামে। যে ঘটনাটির কথা  শুনলে মনে হবে যেন সিনেমা কিংবা সাইন্স ফিকশনের কোনো কাহিনী অথবা অসাধারণ একটি রোমাঞ্চকর উপন্যাস। উত্তর পশ্চিম কানাডার আজকূনি হ্রদের পাশের পাহাড়ী অঞ্চলের এই গ্রামটির কথা ১৯৩০ সালের আগ পর্যন্ত কেউই প্রায় জানতো না। ১৯৩০ সালে গ্রামশুদ্ধ অন্তর্ধানের এই অদ্ভুত ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পেতেই  গ্রামটি গোটা বিশ্বের নজরে চলে আসে।  তার আগে শুধুমাত্র গ্রামবাসী ও ব্যবসার কাজে যারা আসতেন, তারাই জানতেন গ্রামটি সম্পর্কে।

এই গ্রামটিতে বসবাস করতেন প্রায় দুই হাজার উপজাতী। তাদের একমাত্র জীবীকা ছিল পশুর লোম থেকে পশম উৎপাদন।  পশম কেনার জন্য এখানে কিছু ব্যবসায়ী যাতায়াত  করতো।  সেদিনের ঘটনার প্রথম প্রত্যক্ষদর্শী জো লাবেল নামে একজন পশম ব্যবসায়ী।  তিনি সেদিন পশম সংগ্রহের উদ্দেশেই ওই  গ্রামে গিয়েছিলেন। আর গ্রামে এসে তিনি  দেখেন সেখানে একটি মানুষও নেই। গ্রামের সব মানুষ কোথায় যেন উধাও হয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা যেসব কাপড়  বুনছিল সেগুলিও অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে। রান্নাঘরের উনানগুলি হটাৎ নিভে গিয়েছে। খাবারদাবার উনানের উপর পড়ে রয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে একটু আগেও এখানে অনেক মানুষের উপস্থিতি ছিল। সব দেখে মনে হলো গ্রামের সবাই আকস্মিকভাবে গ্রাম ত্যাগ করেছে।  জো লাবেল একটির পর একটি বাড়ি ঘুরেও কোনো মানুষের দেখা পেলেন না।গ্রামের সর্বত্রই একই  দৃশ্য। কোথায় যেন মিইয়ে গেছে সবাই।  জো লাবেল শুধুমাত্র সাতটি কুকুরকে অনাহারে মৃত অবস্থায় দেখতে পেলেন। এ ছাড়া গ্রামের একমাত্র কবরস্থানের সবগুলো কবর পাওয়া গেল খোদিত অবস্থায়! কিন্তু কবরস্থানের ভেতরে কোনো লাশের দেখা মিলল না। ভেতরের সব লাশগুলি কোথায় যেন উধাও হয়ে গেছে।

ঘটনার আকস্মিকতায় খেই হারিয়ে ফেলেন জো লবেল। দ্য রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশকে খবর দেন তক্ষুণি। মেজর থিওডোর লিস্টোর্টের নেতৃত্বে গোটা গ্রাম ও আশপাশের এলাকা তন্ন তন্ন করে খুঁজল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ। কিন্তু এবারও দেখা মিলল না একজন গ্রামবাসীরও। কবরস্থানে গিয়েও যথারীতি হতবাক হয়ে যান পুলিশকর্তারা। কে বা কারা, কী উদ্দেশ্যে, সবকটা কবর খুঁড়ে তুলে নিয়ে গেছে পচাগলা পুরোনো লাশ আর কঙ্কাল। দীর্ঘক্ষণ কবরস্থানের ভেতরে খোঁজাখুঁজি করেও কোনো লাশের দেহাবশেষ বা কঙ্কালের খোঁজ পেল না পুলিশ। শুধুমাত্র অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেল ওই গ্রামের সবচেয়ে প্রাচীন গোত্রপ্রধানের কবরটি। তাহলে কি সুপ্রাচীন এই কবরের মধ্যেই লুকিয়ে আছে অজানা কোনও রহস্য?    দু’হাজার গ্রামবাসীর আচমকা উধাও হয়ে যাওয়া, তার সঙ্গে  কবরের লাশগুলি হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া এবং শুধু একটি কবর অক্ষত থাকা এর কোনো হিসেবে মিলাতে পারেনি পুলিশ। জানা যায়নি, কি হয়েছিল সেই আদিবাসীদের সঙ্গে।

সেদিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেই সময় নানা প্রশ্ন উঠলেও একটিরও উত্তর মেলেনি আজ পর্যন্ত। দীর্ঘদিন তদন্ত চালিয়ে শেষে হাল ছেড়ে দেয় পুলিশও। হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া সেই গ্রামের ২ হাজার গ্রামবাসীর কাউকেই আর দেখা যায়নি কখনও। কী হয়েছিল তাদের? কবরে শায়িত লাশগুলোই বা গায়েব হল কীভাবে? এসব প্রশ্নের উত্তর আজও অজানা। সেই গ্রাম আজ সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে ‘ভিলেজ অব ডেড’ নামে পরিচিত।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version