কলকাতা ব্যুরো: রামপুরহাট-কাণ্ডে উত্তপ্ত বিধানসভা। ফের বিধানসভার ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখালেন বিজেপি বিধায়করা। পদ্ম শিবিরের দাবি, সোমবার পুলিশ ও রক্ষীদের দিয়ে প্রথমে হামলা করা হয়। শাসক দলের বিধায়কদের সঙ্গেও বিজেপি বিধায়কদের হাতাহাতির অভিযোগ উঠেছে। যদিও শাসক দলের অভিযোগ, বিধানসভায় “অভব্য” আচরণ করেছে গেরুয়া শিবির। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এদিন বলেন, বিজেপি গুন্ডাগিরি করেছে।

ঘটনার জন্য বিজেপিকেই কাঠগড়ায় তুলেছে তৃণমূল। শাসক দলের দাবি, ঘটনার জেরে চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার আহত হয়েছেন। অসিতের অভিযোগ, শুভেন্দু ঘুষি মেরে তাঁর নাক ফাটিয়ে দিয়েছেন। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এদিন বিধানসভার অধ্যক্ষ কক্ষে ওই ধরণের আচরণ করতে নিষেধ করলেও, হাতাহাতি থামেনি বলে সূত্রের খবর। জানা গিয়েছে, স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, অনেক সদস্য জখম হয়েছেন। অধিবেশনের শেষ দিনে এটা প্রত্যাশা করিনি।

সোমবার রামপুরহাটের ঘটনা নিয়ে বিজেপি বিধায়করা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছিলেন। আর তা থেকেই বচসার সূত্রপাত। প্রথমে বিধানসভার নিরাপত্তা রক্ষীদের বচসা ঠেলাঠেলি শুরু হয়। এরপর তৃণমূল বিধায়করা ওয়েলে নেমে এলে দুই পক্ষের হাতাহাতি শুরু হয়। বিজেপির পরিষদীয় দলনেতা মনোজ টিগ্গাকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে। 

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, ওই নেতার পোশাক ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে এবং চশমা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। শুভেন্দু এদিন অধিকারী এদিন আরও বলেন, স্পিকারের সামনেই আমাদের মারধর করা হয়েছে। বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। তবে ইতিমধ্যেই শুভেন্দু অধিকারী, মনোজ টিগ্গা, নরহরি মাহাতো এবং শংকর ঘোষকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে খবর। সেই প্রস্তাবে সায় দিয়ে স্পিকার ৫ বিধায়ককে আগামী বাজেট অধিবেশন পর্যন্ত সাসপেন্ড করেন।

বগটুইয়ে মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে, মাটিয়ায় এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করা হয়েছে, তারই প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলাম। তাই সাসপেন্ড হতে হয়েছে। বিধানসভায় দুই পক্ষের বিধায়কদের হাতাহাতিতে সাসপেন্ড হওয়ার পর মন্তব্য করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি আরও বলেন,  মুসলিম মহিলাদের পুড়িয়া মারা, আর মুসলিম মেয়েকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। আমরা তার প্রতিবাদ করেছি, তাই সাসপেন্ড হয়েছি। এর থেকে খুশির খবর আর কী হতে পারে। কোনও ধিক্কার নয়, লড়াই নয়, আমাদের সাহস আরও বেড়ে গিয়েছে। আমরা যারা মুসলিম ভোট পাইনি, তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। আদিবাসী, রাজবংশী, হিন্দু বিধায়কদের বহিষ্কার করেছে।

তবে এদিন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন, শুভেন্দুর প্ররোচনায় বিধানসভার মহিলা রক্ষী-বিধায়কদের উপর হামলা হয়েছে। তাঁদের সম্মানহানি করার চেষ্টা হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তিনি আরও বলেন, আমাদের অনেকজন বিধায়ক জখম হয়েছেন। চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। বিধানসভার মহিলা রক্ষীদের দিকে বিজেপি বিধায়করা তেড়ে গিয়েছেন। শুভেন্দু অধিকারীর প্ররোচনায় গোটা ঘটনা ঘটেছে। বিজেপির মুখ্য সচেতক মনোজ টিগগা ছিলেন। বিধায়কদের বিধানসভার নিয়মকানুন না শিখিয়ে ওনারা হামলা শেখাচ্ছেন।

এসবের প্রতিবাদে টুইট করেছেন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য।

ইতিমধ্য়ে বিধানসভায় পৌঁছন ফিরহাদ হাকিম। তিনি সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। মুখ্যমন্ত্রীকে ফোনে গোটা বিষয়টি জানান বলে খবর। সবমিলিয়ে, অধিবেশনের শেষদিন নজিরবিহীন অশান্তির সাক্ষী রইলো রাজ্য বিধানসভা। 

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version