যন্ত্রের কাজ যন্ত্র করেছে, তুলেছে সানির নাম/ তাই বলে তাতে রাজনীতি ঢালা, সে কি মানুষের কাম…!! আলোচনা হতেই পারে৷ দু’দিন বুড়বুড়ি কাটবে ফুর্তির বাসনা৷সুদূরবাসিনী রসরঙ্গিনী আর কিছু না হোক এক বেঞ্চের সঙ্গিনী হলে কেমন হবে তা ভাবতে ভাবতে মগজে কিঞ্চিত পুলক-কলিকা প্রস্ফুটিত তো হবেই৷ রসের পুকুরে না হয় ছোট এক ক্ষীরের টুকরো পড়েছে৷ তরঙ্গ উঠেছে এমনই যে নড়ে বসেছেন স্বয়ং সানি৷ ভেরি ফানি! তা বলে এতে যে শিক্ষা একেবারে রসাতলে গেল মনে হচ্ছে, অতটা বোধহয় নয়৷

খুব তলিয়ে না দেখলেও বেশ বোঝা যায়, কলেজ কর্তৃপক্ষ, শিক্ষা দফতর এবং দফতরের প্রধান হিসাবে শিক্ষামন্ত্রী গাফিলতির দায় এড়াতে পারেন না৷ এ কথাও সত্য, মনুষ্য আবিষ্কৃত যন্ত্রের মগজ মিনারে এত বোধ নেই যে, সে সানি লিওনিকে চিহ্নিত করে ফেলবে! নির্দিষ্ট গণ্ডীতে ছককাটা ঘরে নম্বর ঠিক ঠিক বসে গেলে যন্ত্র নাম তুলতে বাধ্য৷ সে ক্ষেত্রে কলকাতার দু’টি কলেজের প্রকাশিত মেধা তালিকায় ইংরাজি পড়ার আবেদন পত্রে সানির যে নাম প্রকাশিত হয়েছে, তাতে ছক পূরণ করা হয়েছে নির্ভুল ভাবে৷ চারটি বিষয়ের সেরা নম্বর তাঁর ১০০৷ ঠিকানা আছে, স্বামীর নাম আছে৷ উচ্চ মাধ্যমিকের রোল নম্বর আছে৷ ফলে প্রাথমিক ভাবে যন্ত্র আবেদন নিতে বাধ্য৷ পরবর্তী পর্যায়ে নাম, ঠিকানা এবং সবার আগে উচ্চ মাধ্যমিকের রোল নম্বর মিলিয়ে দেখাটা ছিল আসল কাজ৷ কলেজ কর্তপক্ষ জানিয়েছেন, সে কাজ করার আগেই প্রাথমিক তালিকা বের করা হয়৷

এটা গাফিলতি, এটা ভুল৷ তবে মারাত্মক একটা অপরাধ, তা মনে হয় না৷ বিশেষত যে দেশে এক চতুর্থাংশ মানুষও নবাগত যন্ত্র ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত বা অভ্যস্ত নন! শুধু প্রাকার থেকে অপটিক্যাল কেবলের গল্প শোনালে যে পেট ভরে না, তা আমরা সকলেই জানি৷ কিন্তু প্রশ্ন আছে বেশ কয়েকটা৷

কলেজে ভর্তির আবেদনপত্রে এ রকম রসিকতা করার কথা ভাবল কারা? কলেজ কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, অনলাইন ফর্ম ফিলাপের ক্ষেত্রে ফর্মের কোনও দাম নির্ধারণ করা হয়নি৷ অর্থাৎ যে কোনও মানুষ কলেজের ওয়েব সাইট খুলে ফর্ম পূরণ করতে পারেন৷ সে ক্ষেত্রে ন্যূনতম বাধা অর্থ বিনিময় মূল্যটুকুও নেই৷ আর বাঙালির রসবোধের অভাবও নেই৷

কিন্তু কেন সানি লিওনির নাম? রুচির বিকার৷ সানি বড় “সহজলভ্য”৷ কারণ তাঁর লাস্যময় ব্যক্তিত্ব৷ ক্যারিয়র গ্রাফে ঝুলে থাকা “পর্নস্টার” খ্যাতি ইত্যাদি৷ স্বপ্নেই যখন খাব, তখন খিচুড়ি খাব কেন? তাই প্রথমেই উঠে আসে সানির নাম৷ তাই সোশ্যাল মিডিয়া ছেয়ে যায় সানির নাচের ছবিতে, ক্যাপশনে বলা হয় ‘এ বছর কলেজের ফ্রেশার্স পার্টি’৷ না পাওয়া চাঁদের মতো ছবি আঁকড়ে বাঁচা৷

আরও একটা বিষয় লক্ষ্য করার মতো৷ সানির ঠিকানা কলকাতা৷প্রাপ্ত নম্বরে ১০০%৷ কিন্তু স্বামীর নামে একটু গরমিল৷ বাস্তবে সানি লিওনির স্বামীর নাম ড্যানিয়েল ওয়েবার৷ ২০১১ সাল থেকে তাঁরা বিবাহিত৷ একটি দত্তক কন্যা-সহ তিন সন্তান নিয়ে তাঁদের সুখের সংসার৷ এ সব জানে তামাম ভারতবর্ষ৷ কিন্তু কলেজের ফর্মে সানির স্বামীর নাম লেখা হয়েছে জনি সিনস৷

কে জনি সিনস? বানানে একটু ভুল থাকলেও উইকিপিডিয়া আপনাকে জানিয়ে দেবে জনি সিনস আসলে ছদ্মনাম৷ বছর একচল্লিশের এক আমেরিকান পর্নস্টার৷ আসল নাম স্টিভেন উলফ৷ ভেবে দেখুন, যে বা যারা এই ফর্ম পূরণ করেছে, তারা পর্ন দুনিয়া সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন৷ যথেষ্ট ভেবে চিন্তেই তারা এ সব করেছে৷ হয়তো এই সাড়ে পাঁচ মাসের নিরন্তর লক ডাউনে অলস মস্তিষ্কের উর্বরতা বাড়িয়ে তুলেছে!

একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি বারাসাতের এক সরকারি কলেজেও। সেখানেও মেরিট লিস্টে উঠেছে চার পর্ন স্টারের নাম। মিয়া খালিফা বা সানি লিওনির মত পর্ন স্টারদের নেটে থাকা জীবন পঞ্জীর সঙ্গে আবেদনের তথ্য গুলি মিলে যাচ্ছে।
কিন্তু এ ঘটনা কি এই প্রথম!??

না তো৷ সারা ভারতে যখন আধার কার্ড তৈরি হচ্ছিল, নাগরিকত্ব পরিচয় জ্ঞাপক সেই কার্ডে একের পর এক মানুষের নাম ভুল এসেছে৷ ভুল মানে বানান ভুল, পদবী ভুল নয়৷ নামের জায়গায় মিলেছে অশ্লীল শব্দ৷ দোষ আবারও সেই যন্ত্রের৷ কিন্তু সত্যিই কি সব দোষ যন্ত্রের??

এ ক্ষেত্রেও কলেজ কর্তৃপক্ষের কি কোনও গাফিলতি ছিল না! যান্ত্রিক ভাবে তালিকা তৈরি হলেও তা যখন প্রকাশ হল তখন কেন কারও নজরে পড়ল না প্রথম নামটি এবং তার প্রাপ্ত নম্বর অস্বাভাবিক! কে ছাড়ল সেই তালিকা? জানা গিয়েছে, লালবাজার সাইবার সেল খুঁজছে সেই মানুষটিকে যিনি ফর্ম পূরণ করেছেন সানির নামের আড়ালে৷ কিন্তু কলেজের প্রযুক্তিগত দিকগুলি যিনি বা যাঁরা খতিয়ে দেখেন, তাঁরা কি সন্দেহের ঊর্ধ্বে?

খবর পৌঁছে গেছে স্বয়ং সানির কাছে৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনিও রসিকতা করেছেন৷ ভাল৷ কিন্তু বাঙালি বুঝতে পারছে না, গোটা দেশে তারা এক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে চলেছে৷ যেখানে বাঙালি নারীকে “কালাজাদু”-তে পারদর্শিনী করে দেখানো হয়৷ এরপর বাঙালির শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠবে৷ দায়ী থাকবে বাঙালি৷ তার রসবোধ টইটুম্বুর, সচেতনতা তলানি৷

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version