কলকাতা ব্যুরো: ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দলবদল। গেরুয়া শিবিরের বিধায়ক পদে ইস্তফা দেওয়ার পরদিন অর্থাৎ মঙ্গলবারই কংগ্রেসে যোগ দিলেন ত্রিপুরার সুদীপ রায়বর্মণ ও আশিস সাহা। মঙ্গলবার সকালে দিল্লিতে রাহুল গান্ধীর বাসভবনে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে হাতশিবিরে নাম লেখান দু’জন। তাঁদের উত্তরীয় পরিয়ে স্বাগত জানান রাহুল। এরপর কিছুক্ষণ তাঁদের মধ্যে আলোচনাও চলে।

সেখান থেকে বেরিয়ে সুদীপ রায়বর্মন জানান, আরও অনেক বিধায়কই দলত্যাগের জন্য তৈরি। তাঁরা সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছেন কারণ, বিজেপিতে মোহভঙ্গ হয়েছে অনেকের। ২০২৩’এ ত্রিপুরায় বিধানসভা ভোটের আগে দুই বিধায়কের কংগ্রেসে যোগদান বিজেপির পক্ষে ধাক্কা বলে মনে করছে সে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

প্রসঙ্গত, কেরিয়ারের শুরুতে হাত শিবিরেরই সদস্য ছিলেন সুদীপ। ত্রিপুরার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব সালেছেন তিনি। সেই ঘরেই ফিরলেন। প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল বহু আগেই। বিজেপি শাসিত ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের একেকটি সিদ্ধান্ত, পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন পদত্যাগী বিধায়ক সুদী রায়বর্মণ। অনেক সময় তিনি ত্রিপুরায় তৃণমূল আক্রান্ত হওয়ার প্রতিবাদেও সোচ্চার হয়েছিলেন। এভাবেই বোঝাচ্ছিলেন, দলের সঙ্গে বিশেষত বিপ্লব দেবের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়ছে।

প্রায় একইরকম অবস্থান ছিল দলের আরেক বিধায়ক আশিসকুমার সাহারও। দলের নানা কাজকর্মে তাঁর সায় ছিল না। প্রশাসনিক কাজেও অসন্তোষ বাড়ছিল। অবশেষে সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ রাজ্যপালের কাছে দুই বিধায়কই ইস্তফাপত্র পেশ করেন। পাশাপাশি দলের সদস্যপদও ছেড়ে দেন সুদীপ রায়বর্মন, আশিসকুমার সাহা। এরপরই দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেন। তাতেই বোঝা গিয়েছিল, রাজনৈতিক কেরিয়ারে নতুন পথে হাঁটতে চলেছেন দু’জন।

সেই জল্পনাই সত্যি হল ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই। মঙ্গলবার সকাল সকাল সুদীপ ও আশিস পৌঁছে যান কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বাসভবনে। তখনই যোগদান প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। শেষমেশ সেটাই সত্যি হল। দু’জনেই আনুষ্ঠানিকভাবে নাম লেখালেন কংগ্রেসে। সুদীপের দাবি, ”অনেক বিধায়কই তৈরি এই পদক্ষেপের জন্য, তাঁরা হয়ত সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছেন। বিজেপিতে অনেকেরল মোহভঙ্গ হয়েছে। আমি মনে করছি, গুজরাট ও হিমাচলের সঙ্গে ত্রিপুরাতেও বিধানসভা নির্বাচন হয়ে যাওয়া উচিত।” 

উল্লেখ্য, সুদীপ রায়বর্মণের রাজনৈতিক কেরিয়ারে এখনও পর্যন্ত তিনটি দল বদল হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেসে যোগ দেওয়া সে অর্থে তাঁর ‘ঘর ওয়াপসি’। দীর্ঘদিন ধরে ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। ছিলেন বিরোধী দলনেতাও। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপর তোপ দেগে দল ছাড়েন সুদীপ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে ব্রতী হয়ে যোগ দেন তৃণমূলে। ত্রিপুরায় সেসময় প্রধান বিরোধী দল হয়ে ওঠে সুদীপ রায়বর্মনের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল। কিন্তু ধীরে ধীরে ত্রিপুরায় তৎকালীন বাম সরকারের প্রধান বিরোধী হয়ে ওঠে বিজেপি। কাগজেকলমে প্রধান বিরোধী দল হয়েও আন্দোলনের জমি হারায় তৃণমূল। তখন বাকি বিধায়কদের নিয়ে তৃণমূল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখান সুদীপ। এরপর সেই সম্পর্কও ছেদ। হাত শিবিরে ফিরলেন তিনি। 

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version