কলকাতা ব্যুরো: বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন রনিল বিক্রমসিংহে। আর শপথ নেওয়ার পরপরই ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ার ডাক দিলেন তিনি। সেই সঙ্গে ধন্যবাদ জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও।
দীর্ঘ সময় ধরেই বিক্ষোভের আঁচে পুড়ছিল শ্রীলঙ্কা। এই পরিস্থিতিতে সোমবার পদত্যাগ করেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। সেই সময় থেকেই প্রশ্ন উঠছিল, এবার প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? তখনই ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা হয়, বিক্রমসিংহে ছাড়া সম্ভবত আর কোনও ‘অপশন’ নেই। তিনি চারবার দেশের মসনদে বসেছেন। শেষ পর্যন্ত সেই ধারণাই সত্যি হয়েছে। তাঁকে দেশের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে।

আর শপথ নিয়েই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ার আহ্বান ৭৩ বছরের রাজনীতিবিদের মুখে। শ্রীলঙ্কার ২৬তম প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ”আমি চাই ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে। এবং আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই প্রধানমন্ত্রী মোদীকে। প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কার বিপদের সময় পাশে দাঁড়িয়েছে ‘বন্ধু’ ভারত। বাড়িয়ে দিয়েছে সাহায্যের হাত। সেই কারণেই নয়াদিল্লির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন তিনি।

দেশের এই কঠিন সময়কে সামলানোর বিষয়েও কথা বলেছেন বিক্রমসিংহে। তিনি বলেন, আমি এই সমস্যার সমাধান করতে চাই। আপাতত সেদিকেই ফোকাস রাখতে হবে। পেট্রল, ডিজেল, বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে চাই দেশের নাগরিকদের জন্য। তাঁর দাবি, যে কাজ করার দায়িত্ব নিয়েছি, তা আমি করে ছাড়ব। সেই সঙ্গে সরকারে সংখ্যাগরিষ্ঠতা যখন দেখানোর প্রয়োজন হবে, তখন সেটাও যে তিনি প্রমাণ করে দেবেন, সেই আত্মবিশ্বাসও ব্যক্ত করেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক।

উল্লেখ্য, ‘চিনপন্থী’ রাজপক্ষ পরিবারের সঙ্গে আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক ‘ভারতপন্থী’ বিক্রমসিংহের। ২০১৫ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মহিন্দা রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে কড়া পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসেন বিক্রমসিংহে। তবে তাঁর আমলে রাজপক্ষ পরিবারের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেননি তিনি। পালটা তাঁর বিরুদ্ধেই একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। রক্তাক্ত ইস্টার ডে হামলার পর নিরাপত্তায় গাফিলতি নিয়েও জনরোষের মুখে পড়েন রনিল। সব মিলিয়ে গোটা পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সজিথ প্রেমাদাসাকে হারাতে সক্ষম হন গোতাবায়া।

সোমবারই পদত্যাগ করেন রাজাপক্ষে। কিন্তু এরপরও ক্রমশই বাড়তে থাকে বিক্ষোভ। বন্দর শহর হামবানটোটায় রাজাপক্ষেদের পৈতৃক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। পুলিশও বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে গুলি চালিয়েছিল বলে জানা যাচ্ছে। পরিস্থিতি ক্রমেই হাতের বাইরে চলে যেতে থাকে। এযাবৎ কলম্বো ও দেশের অন্য প্রান্তে সংঘর্ষে আড়াইশোর উপরে মানুষ আহত হয়েছেন। দেশজুড়ে কারফিউ। নামানো হয়েছে সেনা। কেবল রাজাপক্ষের বাড়িই নয় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে সাংসদ সনৎ নিশান্ত, মহীপাল হেরাথ, নিমাল লাংজা, রমেশ পথিরানা ও মোরাতুয়ার মেয়র সমন লালের বাড়িতেও।

তবে রণক্ষেত্রে পরিণত হওয়া শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি শোধরাতে মরিয়া প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। বুধবারই শাসক দল ও প্রধান বিরোধী দল এসজেবির প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। এরপরই দেশের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিলেন বিক্রমসিংহেকে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version