কলকাতা ব্যুরো: করোনা আক্রান্ত হয়ে গত কয়েকদিন ধরেই বাইপাসের ধারে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। আর বাবা করোনা আক্রান্ত হওয়ার মেয়ে উষসী চক্রবর্তী ছিলেন হোম কোয়ারান্টিনে। দিন দুয়েক আগেই উষসী ফিরেছেন শ্রীময়ীর শুটিংয়ে। টেলিভিশনের পরিচিত মুখ তিনি। কিন্তু ঘরে আর ফেরা হল না শ্যামল চক্রবর্তীর। বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে দুটো নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রবীণ ওই বামপন্থী নেতা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৭বছর। করোনা ছাড়াও কিডনির সমস্যাতেও ভুগছিলেন তিনি।

শ্যামল চক্রবর্তীর জন্ম ১৯৪৩ সালের ২২ফেব্রুয়ারি । বাবা সুশীল চক্রবর্তী, মা অন্নপূর্ণা দেবী। স্ত্রী শিপ্রা ভৌমিক ১৯৮২ সালেই অকালে প্রয়াত। বর্ষীয়ান এই নেতা বর্তমানে ছিলেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। পার্টির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর প্রাক্তন সদস্য। সিআইটিইউ-র সর্বভারতীয় ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য এবং পশ্চিমবঙ্গ কমিটির প্রাক্তন সভাপতি। রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহন মন্ত্রী ছাড়াও রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ ছিলেন তিনি।

এদিন তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক শোক বার্তায় তিনি বলেন, রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহন মন্ত্রী সিপিআই (এম) নেতা শ্যামল চক্রবর্তীর মৃত্যুতে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।শ্যামলবাবু সিটু-র রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। রাজ্যসভার সাংসদও নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে রাজনৈতিক জগতের ক্ষতি হল। আমি শ্যামল চক্রবর্তীর পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করেছিলেন শ্যামলের মেয়ে উষশীকেও। কোনও সাহায্য প্রয়োজন হলে জানাতে বলেছেন তিনি। শ্যামল চক্রবর্তীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, আমাদের পার্টির প্রবীণ নেতা কমরেড শ্যামল চক্রবর্তীর বেলা দুটো নাগাদ জীবনাবসান হয়েছে। আজ দুপুরের আগে ও পরে পরপর দুবার ওঁর হার্ট আ্যটাক হয়। প্রথম বার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনার পর আর একটা আ্যটাকে সব শেষ হয়ে যায়।
যেহেতু উনি কোভিড পজিটিভ ছিলেন সেই কারণে ওঁর শেষ যাত্রার কর্মসূচি পরে জানানো হবে। আমাদের সমস্ত পার্টি অফিসে পার্টি পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। এদিন সন্ধ্যায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় শ্যামল চক্রবর্তীর। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়েছে সিপিএম পলিটব্যুরোর তরফেও।

স্কুলে পড়ার সময়েই তিনি বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭০সালে এসএফআই গঠিত হলে তার রাজ্য নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। ১৯৭৩ সালে শিবপুর সম্মেলেনে তিনি এসএফআই-র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি নির্বাচিত হন। অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন ১৯৫৯সালের শেষে। ১৯৭৮ সালে শিশির মঞ্চে অনুষ্ঠিত রাজ্য সম্মেলন থেকে তিনি পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৫সালের রাজ্য সম্মেলনের পর পার্টির রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য হন। ২০০২ সালে হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেসে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। পরিবহন শিল্প, বিদ্যুৎ শিল্প সহ কয়েকটি ক্ষেত্রে তিনি সর্বভারতীয় স্তরে শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সিআইটিইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সভাপতি হিসেবেও তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। নিয়মিত যুক্ত ছিলেন লেখালেখির সঙ্গেও। ছিলেন সুবক্তা এবং সুলেখক। বিশেষ করে বক্তৃতায় তির্যক বাক্যর ব্যবহার এবং রসবোধ ছিল বিশেষ আকর্ষণ।

এদিন তাঁর মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তিনি বলেন, তিনি প্রকৃত অর্থে একজন জনদরদী শ্রমিক নেতা ছিলেন। আপাদমস্তক ভদ্র ও মধুর স্বভাবের মানুষ। শোক জানিয়েছেন আরএসপি রাজ্য সম্পাদক বিশ্বনাথ চৌধুরী।তিনি বলেন, বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী ছিলেন, তাঁর মৃত্যুতে এক বর্ণময় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অবসান ও গণ আন্দোলনের অপূরণীয় ক্ষতি হলো।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version