কলকাতা ব্যুরো : সাবেকি পূজো বলতে যা বোঝায় একেবারে তাই। ষষ্ঠী থেকে দশমী আজও সময় থমকে দাঁড়ায় জমিদার বাবুর ঠাকুর দালানে। নীলকন্ঠ পাখি ওড়ে। ভোগ হয়। এমনকি প্রথা মেনে বলিও। শহুরে মানুষের পুজোর মত ঠিক নয়। এই পূজো একেবারে অন্য ধরনের। দেখতে অবশ্য শহুরে বাবুরা মাঝে মাঝে যান। কিন্তু শহরের বনেদি পুজোর সঙ্গে গ্রামের বনেদি পুজোর ফারাক আছে বৈকি। মেঠো পথ, ধুলো মাখা রাস্তা, কাশ ফুল , শিউলির গন্ধ আর নীল উন্মুক্ত আকাশের মাঝে যদি ঠাকুর দালানে দাঁড়িয়ে দুর্গাপুজো দেখতে চান চলে আসুন কালনার বদ্দীপুরের নন্দী বাড়ি। গ্রামের মাটির সোঁদা গন্ধ , আর ঢাক কাঁসরের শব্দে মনটা হারিয়ে যেতে বাধ্য।

কালনার বদ্দীপুরের বাসিন্দা শিশুরাম নন্দী জমিদারি পেয়ে বিশাল এক অট্টালিকা তৈরি করেন সেখানে। শোনা যায়, দুই চব্বিশ পরগনা, হুগলি এবং নদীয়ায় তার জমিদারির বিস্তার ছিল। পরে সে বাড়িতে শালগ্রাম শিলা প্রতিষ্ঠা করা হয়। তৈরি হয় রাজ রাজেস্বরের মন্দির। তারপর তৈরি হয় দূর্গা দালান। আয়োজন হয় দুর্গাপূজার। কিন্তু এক বড় সমস্যা দেখা দিল তাতে। দুর্গাপূজার আয়োজনে রুষ্ট হলেন মা মনসা। স্বপ্নে দেখা দিলেন জমিদার বাবুকে। জানালেন তার ক্ষোভের কথা। কি করা যায় এবার। ভাবতে শুরু করলেন জমিদার মশাই। অবশেষে বেরোলো এক সমাধান সূত্র। দুর্গার পাশাপাশি মনসা পূজো ও শুরু হলো জমিদারবাড়ি।

সেই শুরু। তারপর থেকে প্রতি দশমীর দিন সাপুড়েরা আসে জমিদার বাড়ি। দূর্গা দালানে সাপ খেলা দেখানো হয়। স্বয়ং মা মনসাই যে তাদের পাঠান সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই জমিদার বাড়ির সদস্যদের। ঝাঁপি থেকে বের হয় এক একটি বিষধর সাপ। শঙ্খচূড়, শাখামুটি, গোখরোর ফোঁস ফোঁসনিতে ভয়ে জবুথবু হয়ে যায় বাচ্চারা। ভিড় করে গ্রামবাসীরা সদলবলে। তবে এখন অনেকটাই জৌলুস হারিয়েছে জমিদার বাড়ির পুজো। কমেছে সাপুড়েদের সংখ্যাও। কিন্তু পরম্পরা বজায় আছে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version