রামমোহনের চিন্তাধারার যে বিস্তৃতি তা শুধু সতীদাহ প্রথা নিবারন --এইটুকু নয় ।তাঁর কর্ম-জীবন-বুদ্ধিমত্তার আড়ালেযে ইতিহাস আছে তা আলোচনার মাধ্যমে রামমোহনের প্রকৃত সত্ত্বার যথার্থ মূল্যায়নের চেষ্টা করা উচিত তার জন্ম সাধদ্বিশতবর্ষের আলোকে ।

ভারতের কনস্টিটিউশনাল লিবেরালিজমের জনক ছিলেন রাজা রামমোহন রায়।১৭৭২ সালের ২২শে মে হুগলীর  রাধানগর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত ও ব্রাহ্মণ পরিবারে রামমোহন রায়ের জন্ম হয়েছিল। তার প্রপিতামহ কৃষ্ণকান্ত ফারুখশিয়ারের আমলে বাংলার সুবেদারের আমিনের কাজ করতেন; সেখান থেকেই রায় পদবি প্রাপক তারা হন ।তার বাবা ছিলেন রামকান্ত রায় ।তার পূর্বসূরিদের মুঘল শাসকদের অধিনস্তে কাজ এবং ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহন করার ফলে ছোট থেকেই রামমোহন ব্যাক্তিগত ধর্মীয় অনুসন্ধানের পথে চালিত হয়েছিলেন যা পরবর্তীকালে রামমোহনকে ব্রিটিশ উনিটারিয়ানিজম বা ঐক্যবাদের দিকে অনুপ্রাণিত করেছিল । ইন্দো-ইসলামিক ভারত থেকে ইন্দো-ইউরোপীয় ভারতের উত্তরণ পর্বে রামমোহনের সামাজিক বুদ্ধিমত্তা বিকাশের বীজ নিহিত আছে।সমাজের নৈতিকতা ও কর্তৃপক্ষের দীর্ঘ চিন্তাধারার মধ্যে দিয়ে রামমোহন হতে পেরেছিলেন ‘ভারতের প্রথম দেশীয় মানুষ’ । কিন্তু রামমোহন না ছিলেন সমকালীন ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের প্রবক্তা না তিনি ছিলেন আধুনিক বিশ্বজনীনবাদের জনক ; তিনি মূলতঃ ছিলেন সাংবিধানিক উদারনৈতিকবাদে বিশ্বাসী ।

রামমোহনের সতীদাহ প্রথা নিবারণ কে শুধু সাধারণ সমাজ সংস্কারের লেবেল দেখা উচিত কিনা তাও ভাবতে হবে আজকের দিনে এসে যেখানে হিংস্রতা এবং নৈতিকতা বিবর্জিত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং এর সতীদাহ প্রথা নিবারণকে আইন হিসাবে গড়ে তোলার পেছেন রামমোহনের চিন্তা-পড়াশুনো-বুদ্ধিমত্তার দীর্ঘ ইতিহাস আছে । মনে রাখতে হবে ঔপনিবেশিক ভারতে হিন্দুত্বের সার্বজনীন বিষয়ে যৌক্তিকতা প্রয়োগের মাধ্যমে সতীদাহ প্রথা নিবারণ করা সম্ভব ছিল না ; এর জন্যে দরকার ছিল পরিজ্ঞেয়তা তৈরি করা ; যা রামমোহন করেছিলেন শাস্ত্র দিয়ে যেখানে যুক্তি দিয়ে কাজ হবে না সেখানে তিনি শাস্ত্র বিপরীতে শাস্ত্র কে এনেছেন । সমাজের গোড়া শাস্ত্রধারীদের তিনি “মনুস্মৃতি”র মাধ্যমে দেখিয়েছেন শাস্ত্রে বিধবাদের প্রতি ব্রহ্মচর্য পালনের নির্দেশ আছে। যুক্তি,শাস্ত্র’অভিজ্ঞতা এই তিনের মাধ্যমে সতীদাহের বিরুদ্ধে রামমোহনের করুনা ও দয়ার অনুভূতিই এই প্রথা নিবারনের কি-এলিমেন্ট হিসাবে কাজ করেছে; তা তাঁর সতীদাহ বিষয়ক লেখা গুলি থেকে জানা যায়-‘সহমরণ বিষয়ে প্রবর্তক ও নিবর্তকের সম্বাদ’ব(দুই পর্ব)।

এই পরিজ্ঞেয়তার ইতিহাস মানুষ আজ জানে না তাই শুধু আধ্যাত্মিকতা ও হিন্দুত্বের গোড়া দিকগুলিই সমাজের প্রকৃষ্ট ;ভারতীয় সমাজ তার আধ্যাত্মিকতায়, শাস্ত্রে নমনীয় তা রামমোহনের বুদ্ধিমত্তায় প্রকাশ পেয়েছে তাই তাঁকে নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন আরো বেশি বেশি করে।
Share.
Leave A Reply

Exit mobile version