কলকাতা ব্যুরো: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে (Primary Recruitment Scam) আরও অস্বস্তিতে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। একইসঙ্গে বিধায়ক তাপস সাহার বিরুদ্ধেও উঠলো অভিযোগ। অভিযোগ শিক্ষা মন্ত্রী থাকাকালীন মন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অফিসারের পরিবারের ১০ জনকে অনৈতিকভাবে চাকরি (Primary Recruitment Scam) দেওয়া হয়েছে ৷ শুক্রবার প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির (Primary Recruitment Scam) শুনানি ছিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। সেখানেই এই অভিযোগ করা হয় মামলাকারীর আইনজীবীর তরফে।

অন্যদিকে নদীয়ার বিধায়ক তাপস সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ চাকরি দেওয়ার নামে বেকারদের থেকে টাকা তোলার। এদিন অন্তত ২৫ জনের নাম, ফোন নাম্বার টাকার অঙ্ক সহ তালিকা দেওয়া হলো আদালতকে। এমনকি সঙ্গে একটি চিঠিও যুক্ত করা হয়েছে আদালতে। সেখানে ওই চাকরি প্রার্থীরা ওই বিধায়ককে কে কত টাকা কোন অ্যাকাউন্টে দিয়েছেন সেই সংক্রান্ত যাবতীয় অভিযোগ লিখে তৃণমূলের এক সর্বভারতীয় নেতাকে দিয়েছেন। তার কাছে অভিযোগ, ওই বিধায়ক টাকার পর টাকা নিচ্ছেন কিন্তু অনেকে এখনও চাকরি পাননি। এই অবস্থায় অসহায় তাদের দিকে তাকিয়ে পদক্ষেপ করার আবেদন জানানো হয়েছে তৃণমূলের ওই শীর্ষ নেতার কাছে।

মামলাকারী রমেশ মালির তরফে আইনজীবী সুদীপ্ত দাসগুপ্ত জানান, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ অন্তত ১০ জনকে বেআইনি ভাবে নিয়োগ (Primary Recruitment Scam) করা হয়েছে। তাঁদের কাছে তথ্য প্রমাণও রয়েছে। এই ব্যাপারে সব পক্ষকে কপি দিয়ে ওয়াকিবহাল করানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। আগামী সোমবার ফের এই মামলার শুনানি হবে।

অন্যদিকে শুক্রবারের শুনানিতে ২০১৪ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ (Primary Recruitment Scam) সংক্রান্ত কমিটির দুই সদস্যকে আগামিকাল, শনিবার সিবিআই দফতরে হাজিরার নির্দেশ দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ওই দুই সদস্যের নাম দেবজ্যোতি ঘোষ ও পঞ্চানন রায়। তাঁদের আগামিকাল বেলা ১১ ও ১২টায় সিবিআই দফতরে হাজিরা দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

অভিযোগ, ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেটে কিছু প্রশ্ন ভুলের ব্যাপারে পরে নম্বর দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল, সেই ব্যাপারে ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর একটি বৈঠক করা হয় কিন্তু অদ্ভুত ভাবে সেই বৈঠকে নম্বর দেওয়ার ব্যাপারে যে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল, তাতে সাক্ষর ছিল না কমিটির তিন সদস্য পঞ্চানন রায়, দেবজ্যোতি ঘোষ ও সিস্টার এমিলিয়ার। কিন্তু সিস্টার এমিলিয়াকে বয়স জনিত কারণে আদালতে হাজির হতে হবে না বলে জানিয়েছিল হাইকোর্ট। তবে অন্য দুই সদস্য শুক্রবার আদালতে হাজির হলে বিচারপতি তাঁদের সামান্য কিছু জিজ্ঞাসাবাদের পর শনিবার সিবিআই দফতরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

দেবজ্যোতি ঘোষ বেলঘরিয়ার নীলিমা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। এদিন বিচারপতির প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে বৈঠক ডাকা হয়। প্রায় সব মিটিংয়ে তিনি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ঠিক হয়েছিল যে প্রশ্নগুলির ক্ষেত্রে দু’টি উত্তর রয়েছে, সেখানে যাঁরাই চেষ্টা করেছেন, তাঁদের প্রত্যেককেই আমরা নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কিন্তু তিনি ওই প্রস্তাবে সাক্ষর করেননি কারণ, কোনও প্রস্তাবেই সদস্যরা সাক্ষর করেন না। শুধুমাত্র প্রেসিডেন্ট সাক্ষর করেন। শুধুমাত্র পর্ষদের রেজিস্ট্রারে তাঁর মতো সদস্যদের সাক্ষর থাকে।

অন্যদিকে আর এক সদস্য পঞ্চানন রায় জানান, ২০ নভেম্বর ২০১৭-তে যে বৈঠক হয়েছিল, তাতে উপস্থিত ছিলেন তিনি। সিস্টার এমিলিয়াও ওইদিন উপস্থিত ছিলেন। তিনিও রীতি অনুযায়ী সাক্ষর করেননি মিটিংয়ের প্রস্তাবে। অন্যদিকে সিস্টার এমিলিয়া এদিন আইনজীবী মারফত আদালতে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছেন, বৈঠকে সবাইকে নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল অথচ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ আদালতে জানিয়েছিল, তারা কিছু প্রার্থীকেই শুধুমাত্র অতিরিক্ত ১ নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই বক্তব্য পরস্পরের বিরোধী বলে মন্তব্য বিচারপতির।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version