দেবদেবীগণের পদবি নেই কিন্তু আমাদের নামের শেষে একটি পদবি জুড়ে আছে। সাধারণভাবে উপাধি, উপনাম কিংবা বংশসূচক নামকে পদবি বলা হয়। বাঙালির মূল নামের শেষে বংশ, পরিবার, পেশা, বসবাসের স্থান ইত্যাদির পরিচয় দিতে উপনাম ব্যবহারের রীতি প্রচলিত আছে। সামন্ততান্ত্রিক পদবির সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক ক্ষেত্রেই জমি ও হিসাব সংক্রান্ত পদবি। এই সমস্ত পদবির বেশির ভাগই বংশপরস্পরায় চলে আসছে।কিন্তু পদবিরসামাজিক কোনো মূল্য আছে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে তৎকালীন সমাজে কোনো মানুষেরই পদবি ছিল না।কিন্তু পরবর্তী সমাজ জীবনে বর্ণাশ্রম ব্যবস্থা সমাজে চালু হওয়ার পর পেশাভিত্তিক পরিচয় নামের সঙ্গে যুক্ত হল। আসলে পদবি আমাদের পেশারই পরিচয়। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র- প্রত্যেককেই আলাদা করে চেনা যেত পদবি দিয়েই। নাহলে প্রতিটি মানুষের নাম আর দাম এক হয়ে যায়!

আমাদের পদবীতে ধর্ম, জাতি, পেশার ঐতিহ্য রয়েছে।তবে বৈদিক যুগে কোনও পদবি ছিল না। ধর্ম, জাতি, পেশাভিত্তিক পদবী ১০০০ বছর আগের ব্যাপার। বাঙালি হিন্দুরা বহুবার নিজেদের পদবী বদলেছে।এই বদল কখনও পেশাভিত্তিক কারণে আবার কখনও বর্ণ প্রথার জন্য।

ইসলাম ধর্মে মূলত কোনও পদবী নেই। বাবার নামেই বংশের পরিচয় হয় বলে মুসলিমদের পদবী বিভিন্ন। তবে পদবীতে ধর্মীয় প্রভাব যেমন আছে, তেমনই ঐতিহ্যবাহী পেশাকেও পদবী গ্রহণের রেওয়াজ ছিল। অনেক হিন্দুরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর তাদের আগের পদবী রেখে দিয়েছেন। তাই অনেক মুসলিম পদবীর সাথে হিন্দু পদবীর মিল পাওয়া যায়।

অনেক সময়ে নামের পর এমন পদবী দেখা বা শোনা যায়, যাতে বেশ খটকা লাগে। প্রসঙ্গক্রমে তেমনই একটি পদবীর কথা এখন বলবো যেটি উচ্চারণ করতে এমনকি বানান লিখতে গিয়ে পণ্ডিত ব্যক্তিও রণে ভঙ্গ দিতে পারেন।

প্রথমত সেই পদবীটি এতটাই লম্বা যে সেটা বলতে বা লিখতে রীতিমতো সময় খরচ করতে হয়। তাও অধিকাংশ সময় তা নির্ভুল হয় না। পদবী বা দ্বিতীয় নামে রয়েছে ৩৫টি অক্ষর। তিনি মার্কিন বংশোদ্ভূত এক মহিলা। নাম জ্যানিস। তবে তিনি বিবাহ সূত্রে স্থায়ীভাবে বহুকাল হাওয়াইতে রয়েছেন।

প্রথম নাম জ্যানিস। কিন্তু তারপর তার আগের নামটির উল্লেখ করতে হয়। সেটি হল- কেইহানাইকুকাউয়াকাহিহুলিহীকাহাউনায়েলে, ইংরাজি হরফে (Keihanaikukauakahihuliheekahaunaele)। তিনি জানিয়েছিলেন তার বংশগত নামটি কখনও তিনি ছেঁটে ফেলবেন না বা সংক্ষিপ্ত আকারে ব্যবহার করবেন না।

নাম বা পদবি নিয়ে খুব যে সমস্যায় তাকে পরতে হয়েছে তেমন কথা তিনি মনে করতে পারেন না। তার ড্রাইভিং লাইসেন্সে নাম লেখারজন্য যে জায়গা রয়েছে তাতে ৩৪ অক্ষর পর্যন্ত লেখা যায়। কিন্তু তার প্রথম ও দ্বিতীয় নাম-সহ জায়গা লাগে আরও কিছুটা বেশি। তবে এতকাল তা এদিক অদিক করে নেওয়া গেছে।

কিন্তুজাতীয় পরিচয়পত্রে যখন নতুন করে নামকরণ হওয়া শুরু হয় তখন দেখা দেয়বিপত্তি। ড্রাইভিং লাইসেন্সে একটি অক্ষর লেখার জায়গা কম পড়ে যায়। তার ওপর প্রথম নামটি লেখার কোনও জায়গাই নেই সেখানে। একদিন এক ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি থামিয়ে তার লাইসেন্সটি দেখতে চাইলে তিনি তো তার নাম কিছুতেই বুঝে উঠতে পারেন না।

এই ঘটনার পর এত বেশি আলোচনা শুরু হয় যে ড্রাইভিং লাইসেন্সে কর্তৃপক্ষনামের জায়গায় ৪০ অক্ষর লেখার জায়গা করে কার্ড তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছে ।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version