কলকাতা ব্যুরো: রাষ্ট্রপতি পদে বিজেপির পছন্দ আদিবাসী নেত্রী দ্রৌপদী মুর্মু। মঙ্গলবার বিজেপির পরিষদীয় দলের বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। সূত্রের খবর, এবারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মহিলা ‘মুখ’কে সামনে রেখেই এগোতে চাইছিল বিজেপি। রাইসিনা হিলসের দৌড়ে তাই অন্তত জনা তিনেক মহিলা ছিলেন। তামিলসাই সৌন্দরাজন, আনন্দীবেন প্যাটেল এবং দ্রৌপদী মুর্মু। এই তিন মহিলার নাম নিয়েই এদিন বিজেপির সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে আলোচনা হয়। যাতে উপস্থিত ছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, এবং দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা।

দ্রৌপদী মুর্মু প্রার্থী হওয়ায় ওড়িশার শাসকদল বিজেডি যে বিজেপিকেই সমর্থন করবে তা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেল। শুধু তাই নয় মুর্মুকে প্রার্থী করার ফলে বিরোধী শিবির থেকে আরও ভোট বিজেপির দিকে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল হিসাবে গত বছর পর্যন্ত কাজ করেছেন মুর্মু। সেখানকার শাসকদল ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা নেতা শিবু সোরেন ও সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী শিবু-পুত্র হেমন্ত সোরেনের সঙ্গে মুর্মুর সম্পর্ক রীতিমতো ভাল। সেই সুবাদে তাদের ভোট বিজেপির ঝুলিতে আসতে পারে এমন সম্ভাবনাই প্রবল।

তবে মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করা হলে একদিকে যেমন বিজেপির জয়ের পথ প্রশস্ত হবে আবার তেমনই রাজনৈতিক সুবিধা মিলবে তাদের। এতে ওড়িশায় বিজেপির শক্তি বৃদ্ধি হবে আবার আদিবাসী মুখকে রাষ্ট্রপতি করা হলে চলতি বছরের গুজরাট বিধানসভা নির্বাচন থেকে শুরু করে আগামী বছরের মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনেও সুবিধা পাবে বিজেপি। তাছাড়া শেষে যদি বিজেপি নিজেদের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে পারেন তাহলে প্রথমবার কোনও আদিবাসী মহিলাকে রাষ্ট্রপতি পদে পাবে দেশ। যা প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তিকে আরও উজ্বল করবে।

যদিও দ্রৌপদীর লড়াই কঠিন হতে চলেছে। কারণ তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধী শিবিরের প্রার্থী যশবন্ত সিনহা। যিনি অন্তত রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এনডিএ প্রার্থীর থেকে অনেকটাই এগিয়ে। যদিও শেষ পর্যন্ত যদি সত্যিই বিজেডি দ্রৌপদীকে সমর্থন করেন এবং বিরোধী শিবিরের অন্য দলের ভোটে বিজেপি ভাগ বসাতে পারে, তাহলে অবশ্য তাঁদের প্রার্থীই লড়াইয়ে এগিয়ে থাকবেন।

এদিন প্রার্থী ঘোষণার পরই দ্রৌপদী মুর্মুকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি জানিয়েছেন, সমাজসেবা এবং গরিবদের ক্ষমতায়নে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন মুর্মু। তাছাড়া প্রশাসন সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞতাও অনেক। আমি নিশ্চিত উনি রাষ্ট্রপতি হিসাবে দুর্দান্ত কাজ করবেন।

প্রথমে মনে করা হয়েছিল উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডুকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে তুলে আনবে বিজেপি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে অমিত-বিক্রমে সব কিছু পালটে গেল। ওডিশার মেয়ে দ্রৌপদী। ঝাড়খণ্ডের প্রথম রাজ্যপাল যিনি পুরো মেয়াদ রাজ্যপাল হিসেবে ক্ষমতায় ছিলেন। সব কিছু ঠিকঠাক চললে প্রতিভা পাটেলের পর দেশ পেতে চলেছে দ্বিতীয় মহিলা রাষ্ট্রপতি।

দ্রৌপদী মুর্মু ১৯৫৮ সালে ২০ জুন ওডিশার ময়ূরভঞ্জ জেলার বাইদাপোসি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম বিরাঞ্চি নারায়ণ টুডু। প্রথম জীবনে দ্রৌপদী পেশায় শিক্ষিকা ছিলেন। ১৯৯৪ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত শ্রী অরবিন্দ ইন্টিগ্রাল এডুকেশন সেন্টারের সাম্মানিক শিক্ষক ছিলেন তিনি।

কাউন্সিলর হিসেবে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন দৌপ্রদী। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ওডিশা সরকারের জলসম্পদ ও শক্তি দফতরে জুনিয়র অ্যাসিসট্যান্ট হিসেবে কাজ করেছিলেন দ্রৌপদী। পরবর্তীতে রায়রংপুর উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন হয়েছিলেন। যে বিধানসভা কেন্দ্র থেকে দু’বার ভোটেও জিতেছিলেন। ঝাড়খণ্ডের নবম রাজ্যপাল হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন দ্রৌপদী মুর্মু। তিনিই ঝাড়খণ্ডের প্রথম রাজ্যপাল যিনি পুরো মেয়াদ রাজ্যপাল হিসেবে ক্ষমতায় ছিলেন অর্থাৎ যিনি পাঁচ বছরের কার্যকালের মেয়াদ পূরণ করতে পেরেছিলেন। ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সেই পদে ছিলেন আদিবাসী নেত্রী।

দ্রৌপদী মুর্মু ওডিশার প্রাক্তন মন্ত্রী ছিলেন। ২০০০ এবং ২০০৪ সালে তিনি বিজেডি এবং বিজেপির জোট সরকার থাকাকালীন মন্ত্রী হয়েছিলেন। পরিবহণ, পশুপালন এবং মৎস্য দফতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছিল তাঁর হাতে। ২০০০ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত রায়রাংপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন। এরপর ২০০৬ সালে ওড়িশা বিজেপির তফশিলি মোর্চার সভাপতি হন দ্রৌপদী। এরপর ২০০৭ সালে সেরা বিধায়ক হিসেবে তাঁকে পুরস্কৃত করে ওডিশা বিধানসভা।

তবে এবারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে যদি দৌপ্রদী নির্বাচনে জিতে যান, তাহলে ইতিহাস গড়বেন তিনি। প্রথম আদিবাসী মহিলা হিসেবে বসবেন রাষ্ট্রপতির আসনে। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ মনে করছে, উপজাতি গোষ্ঠীর কোনও কেউ রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হলে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, তেলেঙ্গানা এবং জম্মু ও কাশ্মীর সহ উত্তর-পূর্ব ভারতে জনগোষ্ঠীর সমর্থন বিজেপির প্রতি আরও বাড়বে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version