আপন খেয়ালে আবহাওয়া

কলকাতা ব্যুরো: আবহাওয়ার পরিবর্তনে এবার বৃষ্টিতেও তারতম্য। বিভিন্ন রাজ্যে কোথাও বর্ষা য় ভেসে গিয়েছে, আবার কোথাও বৃষ্টির দেখা নেই। সেপ্টেম্বরের শুরুতেই আবার কোথাও এখন বর্ষার বৃষ্টিতে ভাসছে এলাকা। সব মিলিয়ে আবহাওয়ার এমন মতিচ্ছন্ন অবস্থায় একদিকে শুখা আর অন্যদিকে বন্যা। বৃষ্টিতে যখন ভেসে যাচ্ছে মুম্বাই, তখন দিল্লির খটখটে অবস্থা। গত ১৬ বছরের তুলনায় সেপ্টেম্বরে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত পেয়েছে এবার দিল্লি। অন্যদিকে এ রাজ্যে এখনও পর্যন্ত বর্ষার বৃষ্টি চলছেই। আবার উত্তর -পূর্বাঞ্চলের রাজ্য গুলিতেও সাধারণভাবে স্বাভাবিকের থেকে কম বৃষ্টি পা ত হয়েছে। সব মিলিয়ে একই রাজ্যে কয়েকটি জেলা যখন ভাসছে, তখন অন্য কয়েকটি জেলায় মাটি ফুটিফাটা।

আবহাওয়া দপ্তরের হিসেব বলছে, দিল্লিতে সেপ্টেম্বর মাসে এখনো পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ২১ মিলিমিটার। যা গত ১৬ বছরে সবচেয়ে কম। অথচ এই সময় স্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়ার কথা ১০৯ মিলিমিটার। ফলে ৮১% ঘাটতি চলছে। শেষ বৃষ্টি হয়েছে ৮ সেপ্টেম্বর। আবহাওয়া দপ্তর বলছে, সরকারিভাবে না হলেও, দিল্লিতে বর্ষার বৃষ্টি এখন শেষ হয়ে গিয়েছে। এর আগে ২০০৪ সালে দিল্লি সেপ্টেম্বর মাসে তিন মিলিমিটার বৃষ্টি পেয়েছিল। আর হাজার ১৯৯৪ সালে সেপ্টেম্বরেই বৃষ্টি হয়েছিল ১.৬ মিলিমিটার। দিল্লিতে গত কয়েক বছরে সেপ্টেম্বর মাসের বৃষ্টির পরিসংখ্যান দেখা যাচ্ছে, প্রাপ্য র তুলনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কম বৃষ্টি হয়েছে। গত বছরে এই মাসে বৃষ্টি পেয়েছিল ৭৪ মিলিমিটার, দিল্লি 2018 ছিল ২৩৭ মিলিমিটার, আবার ২০১৭ সালে ১৫৮ মিমি, ২০১৬ এ ৭৫ মিমি এবং ২০১৫ এ ২১ মিলিমিটার বৃষ্টি পেয়েছিল দিল্লি। অথচ গত ১২ ঘন্টায় সেখানে মুম্বাইয়ে বৃষ্টি হয়েছে ২৫৬ মিলিমিটার। প্রবল বৃষ্টিতে বুধবার রেল, সড়ক পরিবহন এর মত ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার আবার সেসব চলতে শুরু করেছে। বুধবার সান্তাক্রু জে বৃষ্টি হয়েছিল ১০৮ মিলিমিটার, আর কোলাবা এ ৫০ মিলিমিটার।

এরাজ্যে গত বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই দফায় দফায় বৃষ্টি চলছিল। তার মধ্যে গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে নিম্নচাপের বৃষ্টিতে ফের বড় রকমের বিপর্যয় শুরু হয়েছে। তবে এবার কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টিতে বিঘ্ন কম হয়েছে। সেই তুলনায় উত্তরবঙ্গে ভাসিয়েছে নিম্নচাপের বৃষ্টি। শিলিগুড়িতে সোমবার সকাল থেকে ২৪ ঘণ্টায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর পাহাড়ে বৃষ্টি ২০০ মিমির বেশি। তার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কালিংপং এবং সিকিম এলাকায়। ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে ১২ ঘন্টায় সিকিমে। পাহাড়ে ধসের ফলে বহু রাস্তা এখনো বন্ধ হয়ে গেছে।

আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য বলছে, গত কয়েক বছর ধরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর স্বাভাবিকের তুলনায় বর্ষার বৃষ্টি কম হচ্ছে। বৃষ্টির মরশুমে মিজোরামে ৫৫ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। মণিপুরে এবার ৪৪ শতাংশ কম। মেঘালয় ১১ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। আসামে ১০ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে ১২ টি জেলায়। অথচ এর মধ্যে এমন কিছু রাজ্য আছে যেখানে কয়েকটি জেলা অতিবৃষ্টিতে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। আবার পাশের কয়েকটি জেলায় একেবারেই শুখা। অসমের পাঁচটি জেলায় বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আবার ১২ টি জেলায় ১০ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে দেশে বর্ষা আপন খেয়ালে চলতে শুরু করেছে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version