কলকাতা ব্যুরো: প্রায় এক দশক বাদে আবার এ রাজ্যের জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের নামে ছাপানো লিফলেট, পোস্টার পড়লো দুটি গ্রামে। একইসঙ্গে ফেস্টুন দিয়ে মাওবাদীরা জঙ্গলমহলে তাদের অস্তিত্ব নতুন করে জানান দেওয়ার চেষ্টা করেছে। পুরুলিয়ার বরাবাজার ও বান্দোয়ান থানা এলাকায় সোমবার সকালে এমন পোস্টার লিফলেট এবং ফেস্টুন দেখা যাওয়ায় মাও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ এবং সিআরপিএফ সেই এলাকায় যায়। পুলিশ লিফলেট, পোস্টার বাজেয়াপ্ত করেছে।

পোস্টারগুলো মাওবাদীদের তরফেই দেওয়া হয়ে থাকতে পারে বলে অনেকটাই নিশ্চিত গোয়েন্দারা। ছাপানো পোস্টার, লিফলেট থেকে গোয়েন্দারা একটি বিষয় নিশ্চিত, এটা স্থানীয় কোন মাওবাদী শাখার বা মাওবাদীদের নামে ফেক পোস্টার নয়। রীতিমতো অতি বাম সংগঠনের শীর্ষ স্তরের নির্দেশেই সর্ব ভারতীয় ভাবে তাদের বক্তব্য জানিয়ে এই সমস্ত লিফলেট ছাপানো হয়েছে। যার অধিকাংশই হিন্দিতে ছাপানো হয়েছে। বাংলাতেও লেখা হয়েছে পোস্টার। তবে মাওবাদীদের এই অস্তিত্ব জানান দেওয়ার ক্ষেত্রে এ রাজ্য নিয়ে তাদের কোন বক্তব্য লিফলেট, পোস্টারে নেই।

একদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া কৃষি আইন ও ঝারখান্ড সরকারের বেআইনি কার্যকলাপ এবং মাওবাদীদের সমূলে বিনাশ এর চেষ্টায় নয়া অপারেশনের বিরুদ্ধেই অস্তিত্ব জানান দিতে চেয়েছে মাওবাদীরা। নকশাল নেতা চারু মজুমদারের স্মরণে ২ থেকে ৮ ডিসেম্বর শহীদ সপ্তাহ পালনের অঙ্গ হিসেবে মাওবাদীদের এই অস্তিত্ব জানান দেওয়ার ঘটনা বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। ইতিমধ্যে গোয়েন্দা সতর্কতায় এই সময়ের মধ্যে বাংলা, ঝাড়খন্ড এবং উড়িষ্যায় বড় রকমের হামলার ছক কষছে মাওবাদীরা। জঙ্গলমহল এলাকা এবং তার সংলগ্ন রাজ্যগুলির জেলাগুলিতে হামলার লক্ষ্য মাওবাদীরা করেছে বলে জানানো হয়েছে গোয়েন্দা রিপোর্টে। সে ক্ষেত্রে কোন বাহিনীর উপরে অথবা রাজনৈতিক নেতা বা ভিআইপি, এমনকি অর্থনৈতিক কোন প্রতিষ্ঠান, ট্রেন, বাস, রেল স্টেশন, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হামলার লক্ষ্য হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে গোয়েন্দাদের সাম্প্রতিক রিপোর্টে।

দীর্ঘদিন এ রাজ্যে জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের অস্তিত্ব সেই অর্থে ছিল না। শেষ মাস দুয়েক ধরে ঝারগ্রাম এলাকায় কিছু বিক্ষিপ্ত হাতে লেখা পোস্টার এবং স্থানীয় রেশন ডিলারকে হুমকি দেওয়ার মতো ঘটনা সামনে এসেছিল। কিন্তু এদিন পুরুলিয়ায় যে সমস্ত নথি উদ্ধার হয়েছে তাকে গোয়েন্দারা বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন। পুরুলিয়ার বরাবাজার থানার শাখারী ও বান্দোয়ান থানার মধুপুর গ্রামের এদিন ওই সমস্ত অস্তিত্বের হদিস পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম থেকে মাওবাদীরা এসে রাতের অন্ধকারে ওই সমস্ত পোস্টার, লিফলেট ছড়িয়ে দিয়ে ফিরে গিয়েছে রাজ্যের বাইরে। যদিও পুলিশের একটি অংশ বলছে, এরাজ্যে তেমনভাবে এখন আর মাওবাদীদের অস্তিত্ব না থাকলেও সারাইকেলা খার্সাওয়া জেলায় গভীর জঙ্গলে এখন নতুন করে মাওবাদীরা ডেরা বেধেছে। দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গলমহলে গোয়েন্দা হিসেবে কর্মরত পুলিশ অফিসাররা বলছেন, রাচির বুন্ধু, খুঁটি, তামার এলাকাগুলিতে এখনো যথেষ্ট প্রভাব মাওবাদীদের। ২০০৯ সালে বুন্ধূ থেকেই একটি ব্যাংক লুট করে সিন্দুক, ট্রাংক ভ্যানে চাপিয়ে নিয়ে শহরের মধ্য দিয়েই মাওবাদীরা ঢুকে পড়েছিল দলমার জঙ্গলে। এখন ততটা প্রভাব না থাকলেও, এ রাজ্যের তুলনায় অনেক বেশি প্রভাব ওই এলাকায় রয়েছে মাওবাদীদের।

প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা, পূর্ব সিংভূম এর চান্ডিল এলাকা দিয়ে রবিবার রাতে ঢুকে পড়ে বরাবাজার এবং বান্দোয়ান এর ওই গ্রামে অপারেশন করে দ্রুত মাওবাদীরা বেরিয়ে যায়। তাদের মতে, এই পথে অনেক সহজে এই দুই থানা এলাকায় ঢোকা যায় ঝাড়খন্ড থেকে।

গোয়েন্দাদের বক্তব্যে, মাওবাদীদের পোস্টার, লিফলেট এ রাজ্য নিয়ে কোনো বক্তব্য না থাকলেও, কেন্দ্রীয় সরকার এবং ঝারখন্ড সরকারের বিরুদ্ধে তাদের নানা ক্ষোভ বিক্ষোভ তথ্য সহ প্রকাশ করে, আসলে এখানে নতুন করে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে মাওবাদীরা।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version