কলকাতা ব্যুরো: বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লাকে খুন করার জন্য আগে থেকেই তার আততায়ী চায়ের দোকানে হাজির ছিল। মনিশ গাড়ি করে এসে ওই চায়ের দোকানে দাঁড়ানোর পর কথা বলার ফাঁকেই আরো একটি বাইকে দুজন এসে দাঁড়ায় রাস্তার উল্টো দিকে। নিমেষেই সেই বাইক থেকে গুলি ছোড়া শুরু করে একজন। আর এরইমধ্যে গুলিতে জখম হয়ে গাড়ির চালকের আসনের উল্টোদিকের খোলা গেটের পাশেই রাস্তায় পড়ে যান মণীশ। অন্যান্যরা তখন পড়িমরি করে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন। হঠাৎ সাদা জামা পরা এক যুবক চায়ের দোকানের দিক থেকে বেরিয়ে এসে সামনাসামনি পরপর গুলি চালাতে থাকে মনিশকে। নিমেষে আরো একটি বাইক এসে পরে সেখানে। তারপরে সেই বাইকে উঠে পালায় ওই দুষ্কৃতী। দুটি বাইক ডানলপ দিকে চলে যায়। সেই খুনের মুহূর্তের ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ এসেছে কলকাতা ৩৬১ পোর্টালের হাতে।

সিসিটিভির ফুটেজ প্রাথমিকভাবে নজর করে সিআইডি তদন্তকারীরা একটি বিষয় স্পষ্ট, দুষ্কৃতীদের কাছে মণীশ শুক্লার প্রতিটি মুভমেন্টের শেষ সময়ের হদিস ছিল। আর তাই সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা নাগাদ মণীশ এসে যে পার্টি অফিসে ঢোকার আগে ওখানে দাঁড়াবেন, সেই তথ্য আগে থেকেই দুষ্কৃতীদের জানা ছিল বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। সে কারণেই চায়ের দোকানে ওই হালকা ভিড়ের মধ্যেও দুষ্কৃতীরা আগে থেকে হাজির করে রেখেছিল একজনকে। গোটা ঘটনা দেখে শুনে অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসাররা মনে করছেন, যারাই এই খুন করে থাকুক, তাদের নার্ভ খুব শক্ত। তাই প্রথম দলটি গুলি চালানোর পর মণীশ মাটিতে পড়ে গেলেও, দ্বিতীয় জন এসে একেবারে সরাসরি তার বুক, মাথা লক্ষ্য করে আরো কয়েকটি গুলি চালায়। প্রাথমিকভাবে সেভেন এম এম পিস্তল থেকেই গুলি চালানো হয়েছে বলে ধারণা ময়না তদন্তকারীদের। ১৪ টি গুলি তার দেহে লেগেছে বলে জানিয়েছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা।

অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসাররা এই ফুটেজ দেখে বলছেন, স্থানীয় দুষ্কৃতীরা একটি গুলি চালানোর পর নিজেরাই নার্ভ ফেল করে। ফলে, হয় পরের গুলি চালাতে গিয়ে কোনো ভুল করে অথবা নিজেরাই পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু এখানে মণীশের খুন নিশ্চিত করতে ডাবল কভার রেখেছিল খুনিরা। বাইক এসে দাঁড়ানোর পর, রাস্তার উল্টোদিক থেকেই প্রথমে গুলি করা হলো। যদি কোন কারনে সেই গুলি লক্ষ্য ভেদ না করে, সে কারণেই দ্বিতীয় লোক রাখা হয়েছিল। যে শেষ কাজটা নিশ্চিন্তে করে বেরিয়ে যাবে।
অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসাররা মনে করছেন, এই ঘটনার পিছনে পাকা মাথা কাজ করেছে। অন্যদিকে যাদের এই খুনের সুপারি দে ওয়া হয়েছিল, তারা শার্প শুটার হিসেবে পরিচিত। তাই এত ঠান্ডা মাথায় অপারেশন নিশ্চিত করতে দু’রকম রাস্তা খুলে রেখেছিল। স্থানীয় দুষ্কৃতীরা এই ভাবে কাজ করতে পারতো না বলে মনে করছেন বর্ষীয়ান অফিসাররা।

মনীশ খুনের ঘটনায় সোমবার এলাকায় বনধ ও পুলিশ- বিজেপির সমর্থকদের মধ্যে খন্ডযুদ্ধের পরেই রাতে সিআইডি গ্রেপ্তার করে দুজনকে। এদিন সকালে আরো একজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। প্রাথমিক তদন্তে এখনো পর্যন্ত সিআইডি মনে করছে ধৃত মহম্মদ খুররম এই ঘটনার পিছনে রয়েছে। ২০১০ সালে খুররম এর বাবা খুন হন। সেই সময় মণীশ জেলবন্দি ছিলেন। যদিও খুররম এর বাবাকে খুন এর ক্ষেত্রে মণীশকে অভিযুক্ত করেছিল পরিবার। সেই ঘটনার বদলার জন্য খুব পরিকল্পনা করে মনিশকে খুন বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। যদিও আরও একটা ব্যাপার ভাবাচ্ছে সিআইডির কর্তাদের। যদি ২০১০ সালের খুনের বদলা নিতে ২০২০ সালে এই ঘটনা ঘটানো হয়ে থাকে, তাহলেও এখনই কেন, নির্দিষ্টভাবে এর পিছনে আরও কোনো কারণ রয়েছে কি না, সেই কারণের খোজেই এখন ধৃতদের জেরা করছে সিআইডি।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version