কলকাতা ব্যুরো: বেলা বারোটা নাগাদ যখন শুভেন্দু অধিকারী অহংকারের হাসি হেসে জানিয়ে দিলেন, রাত দুটোয় তার এজেন্টদের বুথে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। তার কিছুক্ষণ পরেই নন্দীগ্রামের মক্তব প্রাথমিক বিদ্যালয় পৌঁছে কার্যত ধরনায় বসে পড়েন তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

একদিকে তাকে ঘিরে কয়েকশো তৃণমূল সমর্থক যখন সেখানে ভোট দিতে গিয়ে বাধা পাওয়ার অভিযোগ করছেন, তখন সেই মাঠে দাঁড়িয়ে বিজেপি সমর্থকরা চ্যালেঞ্জ ছুড়ছেন রাজ্যের দোর্দণ্ড প্রতাপ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মমতা হুইল চেয়ারে বসেই রাজ্যপাল থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশন পর্যন্ত ফোনে অভিযোগ জানিয়েছেন। তখন ওই জায়গায় ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করেছে। বিজেপি ও তৃণমূলের একটা সমর্থকরা জড়ো হচ্ছেন। কিছু সময় পরে দেখা গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুথে কার্যত আটকে পড়েছেন। বড় রাস্তা থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার গাড়ি থেকে নামিয়ে হুইলচেয়ারে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওই স্কুলে।
কিন্তু তিনি সেখানে ঢোকার পর যেভাবে কাতারে কাতারে বিজেপি সমর্থকরা এসে কার্যত মমতার রাস্তা ঘিরে ফেলেন, তাতে প্রমাদ গোনে প্রশাসন। কারণ যেভাবে মমতা সেখানে বসে পড়ার পড়ে বিজেপির লোক জন বারছিল, তাতে বড় অঘটনের পরিস্থিতি তৈরি হয়।

বিশাল সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশ এবং নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা এসে পৌছান স্কুলে। বেলা সাড়ে তিনটের পর তাকে মূল রাস্তা ছেড়ে ভিন্ন রাস্তা দিয়ে ওই গ্রাম থেকে বের করে আনা হয়। সে সময় তখন কয়েকশো পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী ঘিরে থাকে তাকে তাদের সঙ্গে কর্ডন করেছিল তৃণমূলের সমর্থকরা। এক প্রকার বিজেপিকে ডান্ডা পেটানোর পরিবর্তে কৌশলে’ একটু দূরে রেখে প্রশাসন সেখান থেকে গলিপথে বের করে নিয়ে যায় মমতাকে। আর এই দু’ঘণ্টায় মমতা ফাঁদে পরে হওয়ার সে খবর ছড়িয়ে পড়ে দেশেবিদেশে।


এক সময় যেকোনো গোলমাল বা ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধরনায় বসে পড়াটা ছিল এক রকম বল তার মুঠোয় চলে আসার একটা কৌশল। কিন্তু নন্দীগ্রামে এক উল্টো কিসসা দেখল মানুষ। দেখল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্নায় বসতে গিয়ে উলটে বিজেপির ফাঁদে আটকা পড়ে গেলেন। যদিও তিনি এদিন সেখান থেকে বাড়তি কিছু হুংকার না দিয়েই শুধুমাত্র প্রশাসনকে ফোনে ফোনে অভিযোগ জানিয়ে চললেন। আর দীর্ঘ সময় পর তাকে বিজেপির উত্তেজনাকর পরিস্থিতি থেকে বাইরে এনে প্রশাসনও হাফ ছাড়ল।


যদিও এর প্রায় তিন ঘণ্টা আগেই শুভেন্দু অধিকারী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, খেলা যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। মুখে চওড়া হাসি নিয়ে জয় শ্রীরাম ধ্বনি তুলে তিনি উঠে পড়েছেন তার গাড়িতে। মমতা ফিরে চললেন তার অস্থায়ী আস্তানায়। যাওয়ার সময় বললেন, আমি জিতবোই। এত বাধা সত্ত্বেও এখানকার মানুষ আমায় ভোট দিয়েছে। আমরা সকাল থেকে নন্দীগ্রাম নিয়ে ৬৪ টা অভিযোগ কমিশনকে জানিয়েছি। কিন্তু দুঃখিত, কমিশন কিছু করেনি। এখানে গোটা ঘটনার জন্য কোন কেন্দ্রীয় বাহিনী নয়, আমি দোষ দেব, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তার নির্দেশেই যা ঘটার ঘটছে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version