কলকাতা ব্যুরো: আবারও চরমে সংঘাত। এবার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে টুইটারে ব্লক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উগরে দিলেন একরাশ ক্ষোভ। এই পদক্ষেপের জন্য ক্ষমাও চেয়ে নেন তিনি। 

প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিয়ে মমতা বলেন, উনি প্রতিদিন একটা করে টুইট করে কখনও অফিসারদের, কখনও আমাকে গালাগালি দিচ্ছেন। অসাংবিধানিক কথাবার্তা বলছেন। আমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন। তার মানে আমরা বন্ডেড লেবার। আমরা কি রাজ্যপালের কেনা গোলাম? তিনি হয়ে গিয়েছেন সুপার পাহারাদার। প্রতিদিন ওনার টুইট দেখে আমার বিরক্ত লাগে। উনি এমন এমন টুইট করেন যা অমানবিক। তাই ব্লক করলাম। ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমাদের নির্দেশ দিতেন ওনার পরামর্শ অনুযায়ী আমাদের চলতে হবে। পরামর্শ নয়, ওনার নির্দেশ অনুযায়ী চলতে বলতেন। তার মানে, আমরা ওনার চাকর-বাকর আর কি!

তিনি আরও বলেন, আমি ৪ বার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিতে লিখেছি ওনাকে সরিয়ে নিন। রাজ্যপাল রোজ হুমকি দিচ্ছেন। আদালত থেকে শুরু করে আয়কর, ইডি থেকে সিবিআই, ডিজি থেকে মুখ্যসচিব সকলকে ভয় দেখাচ্ছেন। বাংলার মানুষ মাথা নিচু করে চলেন না। আমরা গত এক দেড় বছর ধরে সহ্য করছি। প্রত্যেকটা ফাইল ফেলে রেখে দিয়েছেন। হাওড়া-বালি পুরসভার বিলে সই করেননি। সাধারণ মানুষ দুর্ভোগের শিকার। উনি ঠিক করবেন কোনটা কার সাথে থাকবে না থাকবে? প্রত্যেকটা বিল আটকে দিয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী আক্রমণের সুর আরও চড়িয়ে প্রশ্ন তোলেন, “আমরা কি বন্ডেড লেবার? আমরা নির্বাচিত সরকার হয়ে বন্ডেড লেবার! আর একটা কাউন্সিলরের কর্পোরট ইলেক্টেড না হয়েও, শুধুমাত্র নমিনেটেড হয়ে, তিনি হয়ে গিয়েছেন এখন সবার মাথার উপরে সুপার পাহাড়াদার। আমি বাধ্য হয়েছি, আজকে আমার টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ওনাকে ব্লক করে দিতে। 

শনিবার রাতে নোয়াপাড়ায় খুন হন তৃণমূল নেতা। ওই ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, ওনার প্রশ্রয়ে বিজেপির গুন্ডারা রোজ লোক খুন করছে। খুনে সরাসরি উৎসাহ দিচ্ছেন রাজ্যপাল। ‘মা ক্যান্টিন’ প্রকল্প নিয়ে দিনকয়েক আগে সরব হন রাজ্যপাল। সে প্রশ্নেরও জবাব এদিন দেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও রাজ্যপালকে ‘পেগাসাসের নাভিশ্বাস’ বলে কটাক্ষ তাঁর।

রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাতের আবহে রাজ্যপালকে টুইটারে ব্লক করার সিদ্ধান্ত কার্যত নজিরবিহীন। টুইটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সিদ্ধান্তের পালটা জবাব দেন জগদীপ ধনকড়। স্বভাবসিদ্ধভাবে সংবিধানের ধারা তুলে বোঝালেন এভাবে রাজ্যপালকে ‘ব্লক’ করে দেওয়াকে সংবিধান সমর্থন করে না। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই প্রথম রাজ্য সরকারের উদ্দেশে রাজ্যপালের টুইট এবং সেখানে কাউকে ট্যাগ করা নেই। নিঃসন্দেহে এ ঘটনা নজিরবিহীন। 

এদিন ৫টা ৬ মিনিটে একটি টুইট করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। তিনি টুইটারে লেখেন, সাংবিধানিক রীতিনীতিকে ব্লক করা যায় না। ১৫৯ ধারা উল্লেখ করে তিনি লেখেন, এই ধরনের ঘটনা ভারতীয় সংবিধানের পরিপন্থী। আরেকটি টুইট করেন ৫টা ৪৫ মিনিটে। ভারতীয় সংবিধানের ১৬৭ ধারা তুলে ধরেন সেখানে। লেখেন, রাজ্যের বিভিন্ন প্রশাসনিক বিষয়ে রাজ্যপালকে জানানো মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কেন রাজ্য সরকার দু’ বছর ধরে সমস্ত তথ্য় ‘ব্লক’ করে রেখেছেন, জানতে চান রাজ্যপাল।

প্রসঙ্গত, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রাজ্য সরকারের সঙ্গে বারবার সংঘাতে জড়িয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। বিভিন্ন ইস্যুতে টুইট-পালটা টুইট নতুন কোনও ঘটনা নয়। এই সংঘাতের আবহে সোমবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকের মাঝে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version