তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের শ্রেষ্ঠ কবি। তাঁর কাব্যগ্রন্থের প্রভাবে সমসাময়িক কাব্যসাহিত্যের সব রকম প্রবণতা একেবারে বদলে গিয়েছিল। তার সাহিত্য রচনা ছিল যেমন আবেগময় তেমনই স্বতন্ত্র। শুধু কি তাই, কবির জীবনটাও ছিল বড়ই অদ্ভুত আর উদ্ভট। অসংখ্য সুন্দরী মহিলার সঙ্গে তিনি প্রেম করেছেন। এমনকি নিজের সৎবোনের সঙ্গেও। যে প্রেমের কারণে গোটা ইউরোপ থেকে নানা অপবাদে তিনি প্রবলভাবে নাড়া খেয়েছিলেন। আর তার ফলে তছনছ হয়ে গিয়েছিল তাঁর জীবন। অথচ তাঁর সম্পর্কে রটনা যত বেড়েছে পাশাপাশি তাঁর প্রেমিকার সংখ্যাও বেড়েছে দারুণভাবে।একবার এক অভিজাত পরিবারের সুন্দরী মহিলা কবিকে প্রেম নিবেদন করবার জন্য এবং তাঁর সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য যুবকের ছদ্মবেশ ধারন করেছিলেন। আরেক মহিলাকবির প্রেমে এমন পাগল হলেন যে তিনি ইংল্যান্ড থেকে ইতালি পর্যন্ত গোটা রাস্তা কবিকে ধাওয়া করে শেষ পর্যন্ত নাগালে পেয়ে এমনভাবে চেপে ধরলেন যে কবি হার মানতে বাধ্য হলেন। এইভাবে অগণিত মহিলাতাঁর প্রতি মুগ্ধ হয়ে তাঁকে গভীরভাবেপ্রেম নিবেদন করেছেন। মহিলাদের প্রেমের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে শেষমেশ কবির স্ত্রী একদিন সংসার ছেড়ে চলে যান। কিন্তু কি অদ্ভুত যে মহিলারা একদিন তাঁকে প্রেমপত্র, চুলের গোছা আর নানা উপহার দিয়ে অভিভূত করার চেষ্টা করতেন, তারাই তখন প্রকাশ্যে কবির নিন্দা করতে শুরু করলো।

এবার প্রশ্ন এই প্রেমিক কবি দেখতে কেমন ছিলেন? তাঁর প্রতি আসক্ত সব মহিলারা প্রশংসা করে বলতেন, তিনি হলেন একটি সুন্দর কারুকাজ করা প্রদীপ্ত অ্যালবাস্টারের পাত্র। কবির সৌন্দর্য ব্যাখ্যা করে স্যার ওয়াল্টার স্কট লিখেছেন, “তাঁর মুখাবয়ব কেবল স্বপ্নে ধারণা করা সম্ভব।”দেখতে যে তিনি সুশ্রী ছিলেন তা বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু তাঁর একটি পা তুলনায় ছোট হওয়ার জন্য তিনি খুঁড়িয়ে হাঁটতেন। তবে ইংল্যান্ডে তিনি এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে তার খুঁড়িয়ে চলাটাও ইংল্যান্ডের যুবকদের কাছে ‘স্টাইলে’ পরিণত হয়েছিল। ইংল্যান্ডের সমস্ত তরুণরা যখন খুঁড়িয়ে চলা শুরু করল তখন আইন করে ব্রিটেনের তরুণদের উদ্দেশ্যে নির্দেশ জারি হয়েছিল, কেউ যেন কবির খুঁড়িয়ে হাঁটাকে অনুকরণ না করে।

অন্যদিকে কবি নিজেকে আকর্ষণীয় এবং সুদর্শন রাখার জন্য অদ্ভুত খাবার খেতেন। তাঁর খাবারের পরিমাণও ছিল অত্যন্ত অল্প।দিনে একবার মাত্র ভিনেগার ছিটানো আলু বা ভাত। মাঝেমধ্যে রুচি পরিবর্তনের জন্য শুকনো বিস্কুট চিবোতেন এবং একগ্লাস সোডা পান করতেন। শরীরের মেদ কমানোর জন্য তিনি তরবারি যুদ্ধ, মুষ্টিযুদ্ধ, ঘোড়ায় চড়া এবং সাঁতারকাটা অভ্যাস করতেন। তবে দাঁত দিয়ে নখ কাটার বদভ্যাস ছিল কবির। তামাকও খেতেন নিয়মিত। তার সঙ্গে নানা ধরণের উদ্ভট কাণ্ডকারখানা করতেন।

কেমব্রিজে পড়ার সময় তিনি তাঁর পোষা কুকুরকে নিয়ে ডরমিটরিতে থাকতে চেয়েছিলেন। কুকুর রাখার অনুমতি না মেলায় তিনি পোষা ভাল্লুকটিকে নিজের বন্ধু ঘোষণা করে, তাকে নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াতেন। সবাই যখন ভয় পেত তাই দেখে তিনি আনন্দ পেতেন। তাঁর বন্ধু কবি শেলি তারবাড়ির বর্ণনায় লিখেছেন, “…বাড়ি মানেই দশটি ঘোড়া, আটটি বিশালদেহী কুকুর, তিনটি বানর, পাঁচটি বিড়াল, একটি ঈগল পাখি, একটি কাক এবং একটি বাজপাখি। তাঁর বাড়ির সুবিশাল সিঁড়িতে দেখা হয় পাঁচটি ময়ূর, দু’টি গিনি মুরগি ও একটা মিশরীয় সারসের সঙ্গে।”

আরও বহু উদ্ভট তাঁকে পেয়ে বসেছিল। তিনি ঘুমের ঘোরে ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন দেখতেন, তাই বিছানার পাশে দুখানা গুলিভরা পিস্তল রাখতেন। আর রাতের নিস্তব্ধতায় চিৎকার করতে করতে, দাঁত কিড়মিড় করতে করতে জেগে উঠতেন আর পিস্তল হাতে ঘরময় পায়চারি করে বেড়াতেন।মাঝেমধ্যে গুণ্ডার মতো আচরণ করতেন। ব্রিটেনের রাজপথে গুলিভরা পিস্তল নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন।

স্বল্প খাদ্যাভাসে থাকলেও কবি মদ্য পান করতেন। মদ পান করতেন মানুষের মাথার খুলিতে মদ ঢেলে। যা পরিবেশন করতেন তাঁর বাড়িরএকঝাঁক সুন্দরী কাজের মেয়ে। কবি বলতেন,“আমাকে মাতাল হতে হবে, জীবনটা আসলে একটা একটা নেশা।” এত অদ্ভুত আর উদ্ভট যিনি তিনি ইংরেজ কবি লর্ড জর্জ গর্ডন বায়রন। যিনি চব্বিশ বছর বয়সে বিখ্যাত হন ‘চাইল্ড হেরল্ড পিলগ্রিমেজ’ কাব্যগ্রন্থের জন্য। তবে বায়রনের অমর কীর্তি ‘ডন জুয়ান’। অন্য একটি দেশের স্বাধীনতার জন্য মৃত্যুর নিদর্শন পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বায়রন অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে গ্রিসের স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন এবং অসুস্থ হয়ে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন। বায়রণ হলেন কাব্য সাহিত্যের ইতিহাসে উল্কা। যার আবির্ভাব উল্কার মতো আর অন্তর্ধানও আকস্মিক।

Share.

2 Comments

  1. There is no harm in having liquor served in skull.
    In ‘Tantirk’ religious belief it’s a common practice.
    But for Byron, I think it’s ‘Extremely Romantic’

Leave A Reply

Exit mobile version