মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বানে ২৯ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ অতিথি হিসেবে হাজির বলিউডের ভাইজান। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চাঁদের হাটে বলিউড এবং টলিউডের তারকারা। সলমন ছাড়াও ছিলেন অনিল কাপুর, সোনাক্ষী সিনহা, শত্রুঘ্ন সিনহা, মহেশ ভাট, তিগমাংশু ধুলিয়া-সহ আরও অনেকে। বলিউডের সুপারস্টার সলমনকে সংবর্ধনা দিলেন টলিউডের সুপারস্টার দেব। সবার বক্তব্য শেষে দর্শকদের উল্লাসধ্বনি পেরিয়ে এল সলমনের গলা।

সলমন বললেন, ‘‘মমতাদি আমাকে বলেছিলেন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আসতে। সোনাক্ষী জানে, একবার যো ম্যায়নে কমিটমেন্ট কর দেতা হু, তব ম্যায় খুদ কে ভি নেহি সুনতা। আমি মনে করি, এটা অন্যতম বৃহৎ ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। আমি সত্যি এটা দেখতে চেয়েছিলাম যে দিদির বাড়িটা আমার বাড়ির থেকে ছোট কিনা। দেখলাম সত্যি! দিদির ঘর আমার ঘরের থেকে ছোট। এটা নিয়ে সত্যি আমার হিংসা হচ্ছে। আমার ঘরে অনেকেই এসেছেন। এটা আমার কাছে সত্যি আশ্চর্যের। কীভাবে এই রকম একটি পদে আসীন কেউ এত ছোট ঘরে থাকেন?’’ তারপর বাংলায় তিনি বললেন, ‘‘আমি তোমাকে ভালোবাসি।’’

কলকাতায় এসে নস্টালজিয়ায় ভাসলেন অনিল কাপুর। তাঁর প্রথম কলকাতায় পা রাখা ৪৪ বছর আগে। সেই কথাই উঠে এল অভিনেতার কথায়। ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় অনিল জানালেন, বাংলার পরিচালকদের সঙ্গে তাঁর কাজ করার ইচ্ছে ও ভালোলাগা। তরুণ মজুমদারের ‘বালিকা বধূ’ ছবি যখন হিন্দিতে তৈরি হচ্ছে তখন সেই ছবির জন্য অডিশন দিয়েছিলেন অনিল। অডিশনের জন্য পরেছিলেন ধুতি। তবে পাস করতে পারেননি অডিশনে। ছবি থেকে বাদ পড়েন। শুধু তরুণ মজুমদারই নয়, মৃণাল সেনের ছবিতেও সুযোগ পাননি অনিল। অপর্ণা সেনের ও মৃণাল সেনের কাছে কাজ চেয়েও পাননি, সেকথা স্বীকার করে নেন।

২৯ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শতবর্ষ পালন করা হচ্ছে আট পরিচালক, অভিনেতা, গায়ক ও গীতিকারের। সেই তালিকায় যাঁরা রয়েছেন, লিন্ডসে অ্যান্ডারসন, তিনি ছিলেন এক ব্রিটিশ চলচ্চিত্র পরিচালক, থিয়েটার ও ডকুমেন্টারি পরিচালক, চলচ্চিত্র সমালোচক এবং ফ্রি সিনেমা আন্দোলন এবং ব্রিটিশ নিউ ওয়েভের প্রধাণ মুখ। ১৯৬৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ইফ…’ ছবির জন্য তিনি বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে আছেন। এই ছবি ১৯৬৯ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাম ডি’অর পুরস্কার পায় এবং ম্যালকম ম্যাকডওয়াল এই সিনেমার মাধ্যমে অভিনয় জগতে পা রাখেন। এবছর চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হবে ‘ইফ…’। তিনি পেশাদার অভিনেতা না হলেও ১৯৮১ সালে অস্কার-জয়ী চলচ্চিত্র ‘চ্যারিয়টস অব ফায়ার’-এ একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করে নজর কাড়েন।

রিচার্ড অ্যাটেনবার্গ- তিনিও এক ব্রিটিশ অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক ছিলেন। রয়্যাল অ্যাকাডেমি অব ড্রামাটিক আর্ট (আরএডিএ) এবং ব্রিটিশ অ্যাকাডেমি অব ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন আর্টস (বাফটা)-এর সভাপতি ছিলেন তিনি এবং প্রিমিয়ার লীগের ক্লাব চেলসির আজীবন সভাপতি ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি রয়্যাল এয়ার ফোর্সে যোগ দেন এবং ফিল্ম ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেন,  কয়েকটি বোমা হামলায় বন্দুকধারীর পিছন থেকে সেই অ্যাকশন ক্যামেরাবন্দি করেন তিনি। ব্রাইটন রক, আই অ্যাম অল রাইট জ্যাক, দ্য গ্রেট এসকেপ, জুরাসিক পার্ক সহ বেশ কিছু আইকনিক ছবিতে অভিনয় করে তিনি নজর কাড়েন। ‘গান্ধী’র জন্য পরিচালক হিসাবে তিনি অস্কার পেয়েছেন ১৯৮৩  সালে। এই ছবিটিই প্রদর্শিত হবে ২৯ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে।

চার্লটন হেস্টন- তিনি একজন মার্কিন অভিনেতা ও রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। দ্য টেন কমান্ডমেন্টস (১৯৫৬) চলচ্চিত্রে মোজেস চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথম গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন পান এবং বেন-হুর চরিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে অস্কার পান। হেস্টন ১৯৭৮ সালে দ্বিতীয়বার অ্যাকাডেমি পুরস্কার পান। তিনি দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ ছবিতে অভিনয় করেন। তাঁর জনপ্রিয় ছবির তালিকায় রয়েছে ‘সিক্রেট অফ দ্য ইনকাস’, ‘টাচ অব এভিল’, ‘দ্য বিগ কান্ট্রি’, ‘দ্য গ্রেটেস্ট স্টোরি এভার টোল্ড’, ‘খার্তুম’, ‘দ্য ওমেগা ম্যান’, ‘দ্য থ্রি মাস্কেটিয়ার্স’, ‘আলাস্কা’ সহ আরও অনেক ছবি। তাঁর টাচ অব এভিল ও বেন-হুর দেখানো হবে এই উৎসবে।

উসমান সেম্বেনে- তিনি সেনেগালের চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক ও লেখক। তাঁকে আফ্রিকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক হিসাবে বিবেচনা করেন অনেকেই এবং তাঁকে “আফ্রিকান চলচ্চিত্রের জনক” বলা হয়। গুয়েলওয়ার, মান্দাবি, সেড্ডো, এমিতাই, জালা, লা নিওর ডি, বরম সারেট দেখানো হবে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে।

মৃণাল সেন- বাংলা তথা ভারতের আন্তর্জাতিক মুখ পরিচালক মৃণাল সেন। তাঁর নির্দেশিত ছবি ‘আকালের সন্ধানে’, ‘ইন্টারভিউ’, ‘কলকাতা ৭১’, ‘ভুবন সোম’, ‘খারিজ’ প্রদর্শিত হবে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচিত্র উৎসবে। এছাড়াও বেঙ্গলি প্যানোরামায় প্রদর্শিত হবে মৃণাল সেনকে নিয়ে তৈরি অঞ্জন দত্তর ছবি।

মুকেশ ও শৈলেন্দ্র- এবছর কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেন্টেনারি ট্রিবিউট জানানো হবে ভারতের অন্যতম সর্বকালের সেরা গায়ক মুকেশ ও গীতিকার শৈলেন্দ্রকে। মুকেশের জনপ্রিয় গানের তালিকা দীর্ঘ। গীতিকার শৈলেন্দ্র প্রযোজিত ছবি তিসরি কসম, যে ছবিতে একাধিক গান গেয়েছেন মুকেশ। সেই ছবিতে অভিনয়ও করেছেন শৈলেন্দ্র। সেই ছবিই এবার প্রদর্শিত হবে ২৯তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে।

দেব আনন্দ- ছয় দশক ধরে হিন্দি সিনেমায় রাজ করেছেন দেব আনন্দ। ১০০-র বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন এভারগ্রিন মেগাস্টার। চারটি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড থেকে শুরু করে দাদা সাহেব ফালকে, পদ্মভূষণে সম্মানিত করা হয়েছে তাঁকে। সিআইডি থেকে শুরু করে গাইড, তাঁর সুপারহিট ছবির তালিকা দীর্ঘ। দেব আনন্দ অভিনীত ৭টি ছবি প্রদর্শিত হবে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version