দুয়ারে লোকসভা ভোট। তার আগে রাজ্যবাসীর মন জয় করতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো জনপ্রিয় প্রকল্পে অর্থের পরিমাণ বাড়ানো, সরকারি কর্মীদের জন্য আরও ৪ শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা হল ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের বাজেটে।২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে লক্ষ্মীর ভান্ডার, পড়ুয়া ঋণ-কার্ডের পাশাপাশি নতুন ভাবে কৃষকবন্ধু প্রকল্পের ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। ভোট পরবর্তী বাজেটে তার প্রতিফলনও দেখা গিয়েছিল। লোকসভা ভোটের আগে এবারও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাজেটকেই হাতিয়ার করলেন।

চব্বিশের লোকসভা যুদ্ধের আগে মমতা মেয়েদের ভোট নিশ্চিত করতে লক্ষ্মীর ভান্ডারে সাধারণ মহিলাদের ১০০০ টাকা ও তফসিলি জাতি-জনজাতিভুক্তদের ১২০০ টাকা করে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।এর জন্য  রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে অতিরিক্ত ১,২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে বলে জানান অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।তিনি এও জানান, সংশ্লিষ্ট সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে দু’কোটি ১১ লক্ষ মহিলা আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন। এছাড়া রাজ্য সরকার ১০০ দিনের কাজে শ্রমিকদের বকেয়া বাবদ ৩৭০০ কোটি বরাদ্দ করেছে।  ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ২১ লক্ষ মানুষকে ১০০ দিনের কাজের টাকা হিসাবে ওই অর্থ দেওয়া হবে। রাজ্য সরকার প্রধানমন্ত্রীর আবাস যোজনার টাকা দেবে । এপ্রিল পর্যন্ত কেন্দ্রের তরফে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা না দেওয়া হলে, মে মাসে রাজ্য ১১ লক্ষ বাড়ি তৈরির টাকা দিয়ে দেবে বলেও সরকার ঘোষণা করেছে। এই বাবদ রাজ্য সরকার ৩৭০০ কোটি বরাদ্দ করেছে।

সরকারি কর্মচারীদের জন্যেও সুখবর অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা জানান, আরও চার শতাংশ হারে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএ বৃদ্ধি করা হবে। গত জানুয়ারি মাসেও ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সে বারও চার শতাংশ ডিএ বেড়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা বর্তমানে ৪৬ শতাংশ হারে ডিএ পান। এবার বাজেটে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএ বেড়ে হল ১৪ শতাংশ। অর্থাৎ, এখনও ডিএ-র ক্ষেত্রে কেন্দ্র-রাজ্য ফারাক থাকছে ৩২ শতাংশ। এই ৪ শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির ফলে সরকারের ২,৪০০ কোটি টাকা খরচ আর এতে উপকৃত হবেন রাজ্যের ১৪ লক্ষ সরকারি কর্মী। আগামী মে মাস থেকেই এই বর্ধিত ডিএ কার্যকর হবে।

রাজ্য বাজেটে নয়া প্রকল্পের ঘোষণা করা হল।‘সমুদ্রসাথী’ বলে এই প্রকল্পে প্রতি বছর দুমাস ৫,০০০ টাকা করে মৎসজীবীদের সহায়তা করবে সরকার। এর ফলে ২ লক্ষ মৎসজীবী উপকৃত হবে বলে জানান হয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলেও জানান হয়। পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা- এই তিন জেলার প্রতিটি নথিভুক্ত মৎসজীবী প্রতিবছর, এই দুমাস, প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকা করে পাবেন।

এবারের বাজেটে সিভিক ভলান্টিয়ার, ভিলেজ, গ্রিন পুলিশের ভাতা বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করা হল। তাঁদের ভাতা বাড়ল হাজার টাকা। চলতি বছরের মে মাস থেকে কার্যকর হবে নতুন হারে মহার্ঘ ভাতা। রাজ্য পুলিশে তাঁদের যুক্ত হওয়ার কোটাও ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই খাতে ১৮০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

আলুচাষিদের সহায়তার জন্য বিমার প্রিমিয়াম সরকার সম্পূর্ণভাবে বহন করবে। অতিরিক্ত ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দও করা হয়েছে। আগে আলুর বিমা করাতে গেলে একর প্রতি ৪.৮৫ শতাংশ হারে প্রিমিয়াম জমা দিতে হতে চাষিকে। এর আগে তা কমিয়ে করা হয়েছিল মাত্র ৩ শতাংশ। তবে এবার বিমার প্রিমিয়াম সরকার সম্পূর্ণভাবে বহনের ঘোষণার ফলে উপকৃত হবেন রাজ্যের কয়েক লক্ষ চাষি।

পরিযায়ী শ্রমিকরা তাদের কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। পরিযায়ী শ্রমিক পোর্টালে যারা নথিভুক্ত আছে, তাদের স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় আনা হচ্ছে। যুবক-যুবতীদের কর্ম সংস্থানের জন্য বিভিন্ন সরকার এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা গুলোতে সমস্ত খালিপদ পূরণ করার জন্য ৫ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে।রাজ্যের পাঁচ লক্ষ বেকার যুবক-যুবতীকে রাজ্যের বিভিন্ন দফতরে নিয়োগ করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে রাজ্য বাজেটে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version