কলকাতা ব্যুরো: একুশে জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের ‘শহিদ তর্পণের দিন’। কিন্তু এবছর এই দিনটিকেই বিজেপির বিরুদ্ধে ‘জেহাদ’ ঘোষণার দিন হিসাবে বেছে নিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর মমতার এই ‘জেহাদ’ শব্দটি নিয়েই আপত্তি রয়েছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের। এই নিয়ে ইতিমধ্যেই সুর চড়িয়েছে বিজেপি। রাজভবনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগও জানিয়ে এসেছে বিজেপির প্রতিনিধিদল। যার ভিত্তিতে রাজ্যপালও ‘জেহাদ’ শব্দটি প্রত্যাহারের জন্য রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানকে অনুরোধ জানালেন। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করে তাঁকে তা প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন জগদীপ ধনকড়৷

রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় বলেছেন ২১ জুলাই, ২০২২-এ বিজেপির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করা’- এই মন্তব্য স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক। তিনি আরও বলেছেন মন্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহারের প্রত্যাহার করতে হবে। এই মন্তব্যের কারণে গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাজ্যপাল আরও বলেছেন একটি মুখ্যমন্ত্রী হয়ে কী করে একটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করার কথা বলতে পারেন- এই মন্তব্য পুরোপুরি অগণতান্ত্রিক। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবনতিও হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন তিনি। বিবৃতি জারি করে এই মন্তব্য করেছেন রাজ্যপাল।
কিন্তু, বিজেপির এই প্রবল বিরোধিতার কারণ স্পষ্ট করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, জেহাদ শব্দটি নিয়েই বিজেপি উদ্বিগ্ন কারণ, এই শব্দটি হিন্দি, সংস্কৃত বা বাংলা থেকে আসেনি। এটি আদতে একটি আরবি শব্দ। এই শব্দের বাংলা তর্জমা করলে, তার অর্থ হয় ধর্মযুদ্ধ। আমরা জানি, তৎকালীন যুব কংগ্রেসের একটি কর্মসূচি কেন্দ্র করে শহিদ দিবস পালন করা হয়। এর সঙ্গে আরবি শব্দ জেহাদ বা ধর্মযুদ্ধের কোনও সংযোগ আছে বলে আমরা মনে করি না। তাই এই শব্দটি তিনি (মুখ্যমন্ত্রী) বলেছেন অত্যন্ত সচেতনভাবে। আমরা ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্যরা মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে চিন্তিত। একইভাবে উদ্বিগ্নও। যাঁরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেই তিনি যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন !
তবে রাজ্যের বিরোধী দলনেতার এই বক্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মনে করছে ঘাসফুল শিবির। বিরোধী দলনেতার এই বক্তব্যের ভাষাকে সামনে রেখে ‘বিভাজনের প্রয়াস’ দেখছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। তারা শুভেন্দুর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্বের যুক্তি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব ধর্মকেই সমানভাবে সম্মান করেন। কোনও ধর্মকেই আঘাত করার মানুষ তিনি নন কিন্তু, একজন মুখ্যমন্ত্রীকে রাজধর্মও পালন করতে হয়। ধর্মের নামে, ভাষার নামে, বর্ণের নামে বিভাজনের বিরুদ্ধে লড়াই তো আসলে শাসকের ধর্মযুদ্ধ। এই ধর্মযুদ্ধ সংবিধানকে অবমাননা, দেশের ইতিহাস বদলে দেওয়ার প্রয়াসের বিরুদ্ধে লড়াই। যাঁরা সংবিধান মেনে চলছেন, তাঁদের তো এতে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। যাঁরা সংবিধান মানেন না, বিভাজনের রাজনীতি করেন, তাঁরাই তো ভয় পাবেন।
এই বিষয়ে রাজ্যপালের অবস্থানেরও কড়া সমালোচনা করেছে তৃণমূল। রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এই প্রসঙ্গে বলেন, শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ জানাতে রাজ্যপালের কাছে গিয়েছিলাম। আমাদের বক্তব্য জানানোর আগেই রাজ্যপাল ক্রমাগত মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ অভিযোগ জানিয়ে গিয়েছেন। রাজ্যপাল রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান কিন্তু তিনি ক্রমেই নিজেকে রাজনৈতিক বিচারকের জায়গায় নামিয়ে আনছেন! এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক৷