কলকাতা ব্যুরো: অবশেষে সমস্ত প্রতীক্ষার অবসান। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন একনাথ শিণ্ডে। উপমুখ্যমন্ত্রী হলেন রাজ্যের দু’বারের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবিস। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজভবনে সরকার গড়ার আবেদন জানান শিণ্ডে-ফড়ণবিস। এরপরই রাজ্যের ভাবী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শিণ্ডের নাম ঘোষণা করেন ফড়ণবিস। তবে তিনি নিজে মন্ত্রিসভায় থাকতে চাননি। পরে বিজেপি নেতৃত্বের আর্জি মেনে সিদ্ধান্ত বদলান।

তবে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর সেই বালাসাহেব ঠাকরের আবেগকেই আঁকড়ে ধরলেন শিণ্ডেশপথ নিয়েই নিজের টুইটারের ছবি পরিবর্তন করে ফেললেন শিণ্ডে। মারাঠিদের আবেগের বালাসাহেবের পায়ের তলায় বসে শিণ্ডে বুঝিয়ে দিলেন, ক্ষমতা ধরে রাখতে, উদ্ধব-আদিত্যদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে তাঁর হাতিয়ার বালাসাহেবই।

পরিস্থিতির চাপে পড়ে বুধবারই ইস্তফা দিতে বাধ্য হন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। এরপরই স্পষ্ট হয়ে যায়, ‘বিদ্রোহী’ শিবসেনা বিধায়কদের নিয়ে বকলমে বিজেপিই সরকার গড়ছে রাজ্যে। আর তখন থেকেই ধারণা করা হয়, ফড়ণবিসকেই দেখা যাবে মসনদে। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেলে নাটকের শেষ অঙ্কে চমক দেয় গেরুয়া শিবির। খোদ ফড়ণবিস জানিয়ে দেন, তিনি নন, মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন শিণ্ডে। সেই থেকেই জল্পনা শুরু হয়, কোন অঙ্কে এই সিদ্ধান্ত নিল বিজেপি?

মনে করা হচ্ছে, এর পিছনে রয়েছে ২০১৯ সালের পরিস্থিতি। সেই সময় বিজেপি ও শিবসেনার জোট জয়ী হওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রীর পদে কোন দলের নেতা বসবেন, তাই নিয়েই শুরু হয় মতানৈক্য। শেষ পর্যন্ত এনসিপি নেতা অজিত পওয়ারের সমর্থনে এক ভোররাতে মুখ্যমন্ত্রীর পদে শপথ নিয়ে সকলকে চমকে দেন ফড়ণবিস। কিন্তু সেই সরকার টেকেনি। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী হন উদ্ধব ঠাকরে। এই অবস্থায় বিজেপি ক্ষমতা হারানোর পাশাপাশি ‘ক্ষমতালোভী’র তকমাও পায় বিরোধীদের কাছ থেকে। এবার তাই শিণ্ডেকে ওই পদ ছেড়ে দিয়ে নিজেদের ভাবমূর্তিই উজ্জ্বল করল বিজেপি। এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

তাছাড়া উদ্ধব ঠাকরে বারবার অভিযোগ করেছেন বিজেপি তাঁকে পিছন থেকে ছুরি মেরেছে। এই অবস্থায় একজন শিব সৈনিককেই মসনদে বসিয়ে সেই অভিযোগকেও সাধারণের কাছে ‘ভোঁতা’ প্রতিপন্ন করল বিজেপি। ভবিষ্যতে যাতে এটাকে আর ইস্যু না করতে পারেন উদ্ধব, সেই পরিকল্পনাতেই এমন সিদ্ধান্ত বিজেপির।

পাশাপাশি শিণ্ডেকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়ার পিছনে বালাসাহেব ঠাকরের আদর্শের উল্লেখ করেও বড় চাল চালল বিজেপি, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। ‘বিদ্রোহী’ শিবসেনা বিধায়কদের আপাতত পাশে পেলেও পরিস্থিতি যে ফের ঘুরে যেতে পারে এমন সম্ভাবনাকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই একনাথকে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ও বাকিদের মধ্যে থেকে অনেককেই মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়ে সেই সম্ভাবনায় অনেকটাই জল ঢেলে দিল বিজেপি।

আরও একটি সম্ভাবনা উঠে আসছে। ২০২৪ সালের অক্টোবরে মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচন। সেই হিসেবে আর বছর দুয়েক সময় হাতে আছে। এই সময়টুকু শিবসেনার বিধায়ককেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রেখে পরের বার গোড়া থেকেই বিজেপি প্রার্থীকে মুখ্যমন্ত্রী করার পরিকল্পনাও থাকতে পারে বিজেপির। এতগুলির সম্ভাবনার এক বা একাধিক কারণেই শেষ পর্যন্ত শেষ হাসি হাসলেন একনাথই। আর বুঝিয়ে দিলেন, রাজনীতিতে সবকিছুই সম্ভব।

তবে কে এই একনাথ শিন্ডে? জেনে নিন বিস্তারিত!

দু’দশকেরও প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতি সঙ্গে যুক্ত। বরাবরই প্রচারের আলো থেকেও দূরে থাকতে ভালোবাসেন। চারবারের বিধায়ক। সামলেছেন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে একসময় অটোও চালিয়েছিলেন। ৫৮ বছরের সেই একনাথ শিণ্ডেই এবার বসছেন মহারাষ্ট্রের কুর্সিতে। রাজনৈতিক গুরু আনন্দ দীঘে মৃত্যুর পর থানেতে শিবসেনার খুঁটি শক্ত করতে শিণ্ডের বড় ভূমিকা ছিল।

১৯৬৪ সালে সাতারাতে জন্ম একনাথের। একাদশ শ্রেণির পর পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। ১৯৮০ সালে বালাসাহেব ঠাকরের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শিবসেনা যোগ দেন। সেই সময় একাধিক আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন একনাথ। ৪০ দিন জেলও খাটেন শিণ্ডে। একদা থানে শহরের অটো ড্রাইভার শিণ্ডে ধীরে ধীরে দলে পরিচিতি লাভ করতে থাকেন। শীর্ষ নেতৃত্বের নজরেও আসেন। ১৯৯৭ সালে থানে পুরনিগমের কর্পোরেটর পদে বড় ব্যবধানে জয় পান।

২০০১ সালে থানে পুরনিগমের দলনেতা হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০৪ অবধি ওই পদে ছিলেন শিণ্ডে। ২০০৪ সালে বিধানসভার টিকিট পান। বড় ব্যবধানে জেতেন সেবার। তার পর ২০০৯, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালেও জেতেন ওই কেন্দ্র থেকেই। ২০১৯ সালে মহাবিকাশ আঘাডী সরকারের নগরোন্নয়ন ও পূর্ত দফতরের মন্ত্রী হন একনাথ। মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে বিধান পরিষদের সদস্য হওয়ায় বিধানসভার দলনেতার দায়িত্ব পান শিন্ডে।

এর আগে মহারাষ্ট্র বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার দায়িত্বও পালন করেছেন শিণ্ডে। ২০১৪ সালে বিজেপি-শিবসেনা জোট সরকারের মন্ত্রীও হন। আচমকা কী কারণে শিণ্ডে বিদ্রোহী হলেন, সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। তবে চমক রয়েছে অন্য জায়গায়। যেই শিণ্ডে সম্প্রতি উদ্ধবের ছেলে তথা রাজ্যের মন্ত্রী আদিত্য ঠাকরের সঙ্গে অযোধ্যা সফরেও গিয়েছিলেন, সেই শিণ্ডের চালেই কিস্তিমাত হলেন উদ্ধব।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version