মৈনাক শর্মা

১৫ জুনের পর ২৯ আগস্ট। মাঝে মাত্র আড়াই মাসের ব্যবধান। গালওয়ানের পর এবার পাংগং হ্রদ এলাকা। বিষয় সেই চিন এবং ভারতের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা। দু’চারদিন চুপচাপ তো ফের অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের পালা। লাইন অফ একচুয়াল কন্ট্রোল না মেনে সীমানা লঙ্ঘনের। গত কয়েক মাস ধরে যে আগুন কখনো তুষের আগুনের মতো কখনো ধিকিধিকি, কখনো বা দাউদাউ করে জ্বলছে। মাঝে মধ্যেই মনে হচ্ছে, দুই দেশের মধ্যে এক যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও সপ্তাহ খানেক আগে বলেন,আকসাই চিন নিয়ে ১৯৬২ সালের চিন-ভারত যুদ্ধের পর পরিস্থিতি এতটা খারাপ হলো। কার্য-কারণ সম্পর্ক যাই থাকুক না কেন,এটা ২০২০ সাল, ১৯৬২ নয়। এখন অর্থিনীতি, পরিকাঠামোতে দুই দেশই এগিয়েছে। প্রতিবেশী দুটি রাষ্ট্রই পরমাণু অস্ত্রে শক্তিধর। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের এই দুটি বৃহৎ দেশ কি একে অপরের বিরুদ্ধে পরিপূর্ণ যুদ্ধে নামতে পারে ? সেটাই এখন বোঝার চেষ্টা করছেন নাগরিকদের অনেকেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যুদ্ধের জন্য দুই দেশই প্রস্তুত নয়। ভারত চীন সীমানা ৩ হাজার ৪৮৮ কিলোমিটার, যার ২৩ এলাকা বিবাদে জড়িত | এই অঞ্চলগুলির মধ্যে অন্যতম হলো লাদাখর ডেঞ্চক, ট্রিঙ হাইট , দুমছেলে পাংগং চুমার ও স্প্ৰাঙ্গার। এছাড়াও রয়েছে নামখছু সহ অরুণাচলের বেশ কয়েকটি অঞ্চল। ১৯৬৭ সালর নাথুলা বিবাদের পর এই প্রথম বড় বিবাদ দেখা যায় দুই দেশের মধ্যে। এই বিবাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।

ভারত ও চিন, দুই দেশই বিশ্বের বৃহৎ দুই পারমাণিবক অস্ত্র সমৃদ্ধ দেশ। কিন্তু যুদ্ধ হলেও যে ভারত তার দখলের জমি ফেরত পাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই|আবার যুদ্ধ হলেও তা দ্বিপাক্ষিক হবে কিনা সেটাও একটা বিবেচ্য বিষয়। কারণ পূর্ব লাদাখে ভারত ও চিনের মধ্যে সামরিক অবস্থানের মধ্যে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে পাকিস্তান প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় চিনকে সাহায্য করতে ও ভারতকে চাপে ফেলার জন পাকিস্তান পিওকে এবং গিলগিত-বালতিস্তানে এলওসির-র পাশে প্রায় ২০,০০০ অতিরিক্ত পাক সেনা মোতায়েন করেছে। যদিও পরে এই তথ্য অীকার করে ইমরান খান সরকার।

বেলফের সেন্টার অফ হাভার্ড এবং সেন্টার ফর এ নিউ আমেরিকান সিকিউরিটির (CNAS) এর রিপোর্ট অনুযায়ী বেজিং এর সুরক্ষা বাজেট দিল্লির তলনায় ৫ গুন বেশি | ২০২০-২০২১ অর্থ বর্ষে ভারতের মোট বাজেট ৩০.৪৮ লক্ষ কোটি টাকার, যার মধ ৪ লক্ষ ৭১ হাজার কোটি টাকা (৬৫ বিলিয়ন ডলার ) হলো মোট প্রতিরক্ষা বাজেট | মোট প্রতিরক্ষা বাজেটের ৬০ শতাংশ পেনশন ও বেতন বাবদ খরচ হবে প্রায় ১.১৮ লক্ষ কোটি টাকা। ভারতীয় বিমান বাহিনীকে তাদের দাবির বেশ খানিকটা অর্থ দিতে হবে। |এর মধ্যে রয়েছে ৩৬ রাফাল যুদ্ধ বিমান,আপাচে হেলিকপ্টার ও চিনুক ভারী মাল বহনকারী হেলিকপ্টার নিয়ে চুক্তি রয়েছে | এই কম বাজেটের জন্যই এই যুদ্ধ উপকরণগুলি ভারতে আসতে সময় লাগতে পারে | বর্তমানে যুদ্ধ হলে তাই ভারত পিছিয়ে পড়তে পারে |চিনের মোট সুরক্ষা বাজেট ১৭৭ বিলিয়ন ডলার | চিন তার মোট স্থল সেনা বাহিনীকে অর্ধেক করলেও তারা নিজের নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীকে শক্তিশালী করে তুলেছে। এর ফল বাড়তি অর্থ যুদ্ধ সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহার করতে পারছে চিন। ভারতের পেনশন ও বেতন মিলিয়ে প্রায় ৪৯ লক্ষ সেনা আছ যার মধ্যে ১৪ লক্ষ উর্দি পরিহিত। বেকার সমসায় জর্জরিত ভারত যদি চিনের অনুকরণ করে তবে মাথাপিছু আয় কম হবে এবং বেড়ারত্ব আরো বাড়বে।

১৯৬২ সালর পর থেকে চিনা সৈন্য ও ভারতীয় সৈন্যর মধ্যে মুখোমুখি লড়াইতে ভারত এগিয়ে থাকে | এর কারণ চিনা সৈন্য শক্তিশালী হলেও পাহাড়ি অঞ্চলে লড়াইয়ের দক্ষতা ভারতীয় সেনাদের বেশি | এছাড়া করোনা মোকাবিলাতে চিনের ভূমিকা নিয়ে যেমন গোটা বিশ্বের প্রশ্ন রয়েছে, তেমনই নিজ দেশের নাগরিকদের প্রশ্নের মুখে আছে জিংপিং সরকার | এই অবস্থায় যুদ্ধ হলে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাকফুটে চলে যেতে পারে চিন।

এছাড়া প্রায় গোটা বিশ্বকে আয়ত্বে রাখা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও এই বিবাদে একটা ভূমিকা রয়েছে | বিবাদ শুরুর পর্বেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের যুদ্ধবিমান ভর্তি এক যুদ্ধজাহাজ দক্ষিণ চিন সাগরে পাঠিয়ে রেখেছিলো। এর ফলে জিংপিং সরকার চাপের সম্মুখীন হয়েছে। |যার ফলে লাদাখ এ বড় কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে চিন সরকারও বারবার ভাববে।

                                                                                                   (চলবে)
Share.
Leave A Reply

Exit mobile version