তৃষা পাল

সুশান্তের মৃত্যুর পর এক বছর পার। কিন্তু বছর শেষে এই প্রশ্নের কোনো উত্তর আজও নেই যে এটা আত্মহত্যা নাকি খুন? তার রহস্যজনক মৃত্যুর কোনো সমাধান এক বছরেও মেলেনি। আগের বছরে ঠিক এই সময় করোনার থাবা, লকডাউন পরিস্থিতিতেও সুশান্তের মৃত্যু নিয়ে দেশ নড়ে গিয়েছিল। কিন্তু বছর ঘুরতেই সব আবেগের গতি শ্লথ হয়েছে। তাই হয়তো রহস্য জনক মৃত্যুর পেছনে লুকিয়ে থাকা সত্য এখনও অধরা।

জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা ৩৪ বছরের অভিনেতার মৃত্যু দেশকে হতবাক করে দিয়েছে। তাঁর অনুরাগীরা ভেবেছিলেন, যে এটি একটি আত্মহত্যা, যা প্রচুর অভ্যন্তরীণ মানসিক যন্ত্রণা দ্বারা আনা হয়েছিল, যে সমস্যাটি তিনি বিশ্ব থেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু প্রথম থেকেই একদল মানুষের চোখে তার মৃত্যুটি আত্মহত্যা বলে মনে হয়নি। কারণ সেই মুহুতে ভাইরাল হওয়া তার কিছু ভিডিও ও ছবি যা সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন চিহ্ন তুলেছিল।
তারপর ধীরে ধীরে এই সংখ্যা বিরাট আকার ধারণ করে। তখন গোটা দেশবাসীর সত্য জানার আগ্রহ প্রবল হয়ে ওঠে। তখন মানুষের মনে সুশান্ত সিং রাজপূতকে নিয়ে এত তাই আবেগ তৈরি হয় যে মুম্বাই পুলিশ ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও সিবিআইএর হাতে আই কেস তুলে দিতে বাধ্য হয় শীর্ষ আদালতের নির্দেশে। সাধারণ মানুষের সাথে সাথে সুশান্ত সিং রাজপুতের বাবা এবং বিহার পুলিশ দাবি করেছিল সুশান্তকে খুন করা হয়েছে। আর যেসব সেলিব্রিটি ও খুব নামকরা লোকজন যাদের অভিযুক্ত হিসাবে সন্দেহ ছিল, তারা অবশেষে গ্রেপ্তার হন। এখন আবার তারা জামিনে ছাড়া পেয়েছেন।
সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর তদন্ত করতে গিয়ে মুম্বাই ফিল্ম দুনিয়ায় মাদক রেকেটের বিশাল চক্র ধরে ফেলে নারকটিক কন্ট্রোল। একই সঙ্গে তদন্ত শুরু করে এনফোর্সমেন্ট ডাইরেকটোরেট। কিন্তু সুশান্ত সিং এর মৃত্যুরহস্য সিবিআই আজও স্পষ্ট করতে পারেনি।


সুশান্ত সিং রাজপুতের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর আধিকারিক বলেছেন, অভিনেতার মৃত্যুর বিষয়ে সিবিআই তদন্ত এখনও অব্যাহত রয়েছে এবং মামলার সব দিকই মনোযোগ সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অর্থাৎ সত্য হয় ঠিক মতন যাচাই হচ্ছে না, অথবা সত্যিই টাকে চাপা দিতে এবং কাউকে বাঁচানোর সবরকম প্রয়াস চলছে বলে উল্টে সমালোচনা শুরু হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে।
নিস্ফল আক্রোশে আম জনতা মাঝে মাঝেই ফুঁসছে, তার রাগ ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কোনো ক্ষমতাশালী মানুষের ক্ষমতার তালুর নিচে সুশান্ত সিং রাজুপুতের মৃত্যুর সত্যটি চাপা পরে গেলো কি না সে প্রশ্নও উঠছে। বলিউড বয়কট ঠেকে শুরু করে, সুশান্ত মৃত্যুর জাস্টিস পাবার দাবিতে সে সময় যে আবেগ উঠেছিল, এখন তাও ফিকে। কিন্তু যে পরিবার ছেলে হারালো, মা হারালো সন্তান, তার ক্ষতি তো পুরন হাওয়ার নয়। শুধু বিচার পাওয়া ছাড়া।
কিন্তু দেশের এলিট তদন্তকারী সংস্থার এমনই এলেম, যে এক বছরে তারা একটি মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট করে ১২৫ কোটির ভারতবাসীকে জানানোর ক্ষমতা রাখে না।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version