আমাদের ভূতের বাড়ির সন্ধানে যাত্রাপথে এ লেখায় ভারতে দক্ষিণের রাজ্য কর্ণাটকের রাজধানী শহর বাঙ্গালোরে (এখন অবিশ্যি ভারতের সিলিকন ভ্যালি হিসেবে বিখ্যাত এই শহরকে লোকে বেঙ্গালুরু বলেই জানেন) যতদূর মনে আছে একবার আমরা পা রেখেছিলাম।

ইংরেজিতে যাকে ফাস্ট – পেসডমেট্রোপলিস বলে তার অনন্য উদাহরণ ভারতের এই শহরের অন্তরালে নাকি, এখানকার বাসিন্দাদের ফিসফিসানিই বলে দেয়, রয়ে গেছে একটা কেন,আরো অনেক এরকম আলো আঁধারির জগত যেখানে মুছে যায় অতীত আর বর্তমানের সীমারেখা। কীরকম? আচ্ছা ধরুন আপনি এখানকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কেম্পেগোডা এয়ারপোর্টে এসে নেমেছেন রাত্তির দুটো বা তিনটেয়। আপনাকে অভ্যর্থনা জানাতে দেখলেন হাজির সাদা শাড়ি পরা এক মুণ্ডহীন অমায়িক মহিলা। আঁতকে ওঠাই স্বাভাবিক এমন পরিস্থিতিতে, তাই তো! একদম তাই। এবং এরকমই অভিজ্ঞতা নাকি হয়েছে পাইলট, গ্রাউন্ড অফিসারসহ বহু এয়ারপোর্ট স্টাফ তো বটেই, অনেক ট্যাক্সি ড্রাইভার, এমনকী রাতের ফ্লাইট ধরার জন্যে অপেক্ষমান ট্যুরিস্টেরও। এমনকী এয়ারপোর্টের ইনফ্রারেড ক্যামেরাতেও ধরা পড়েছে এরকম একজনের উপস্থিতি।

এয়ার স্ট্রিপের আশেপাশে, কার্গো উইং বরাবর নানান জায়গায় ভদ্রমহিলাকে দেখে আঁতকে উঠেছেন সবাই। কিছু অসমসাহসী তেড়ে গিয়ে বিষয়টা যাচিয়ে দেখতেও যে যাননি তা নয়। তাঁরা আঁতকে উঠে বলেছেন মহিলার নাকি কাছে পৌঁছনো যায় না। কাছে গেলেই মহিলার অভ্যেস হাঁটতে হাঁটতেই আচমকা কথা নেই বার্তা নেই মিলিয়ে যাওয়া। কেবল এখানে কেন, এরকম অভিজ্ঞতার কথা শোনা গেছে হায়দ্রাবাদ বিমানবন্দর সম্পর্কেও। লোকে বলে এই বিমান বন্দর তৈরির সময়ে যাদের জায়গাজমি নিয়ে এই বিমানবন্দর তাঁরা নাকি ব্যাপক প্রতিবাদ করেছিলেন। তখন কোনো দিকে না তাকিয়ে তাঁদের নাকি মেরে এখানেই পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। এঁদেরই কেউ কেউ নাকি এখনো প্রতিবাদ জানানোর জন্যে অকুস্থলে ফিরে ফিরে আসেন।

কেবল কেম্পেগোডা এয়ারপোর্ট কেন, চলে আসুন বেঙ্গালুরুর সবথেকে বড় কবরখানা কালপাল্লি সেমেটারিতে। কবরখানা বলে কথা, নেহাত খুবই দরকার না পড়লে রাত্তিরের দিকে খামোকা ওই দিক মাড়ানোর প্রশ্ন নেই কারোরই প্রায়। এবং ঝামেলাও বলা যায় সেখানেই। কারণ, একদম খটখটে দিনের বেলাতেও কবরখানার মধ্যে নানা কারণে যাঁরা ঘোরাফেরা করতে বাধ্য হন বা ঘটনাচক্রে গিয়ে পড়েন তাঁরাই বলেছেন সার দিয়ে রাখা কবরগুলির মধ্যে দিয়ে দেখা যায় চলাফেরা করছেন সাদা শাড়ি পরা কোনো মহিলা, কাছে গেলেই হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া নাকি যাঁর একমাত্র কাজ। যাঁরা আবার এ্ররকম কাউকে দেখেননি তাঁদের মনে হয়েছে কেউ বা কারা যেন তাঁদের উপর নজর রাখছে। প্রচণ্ড গরমের দুপুরে হাড়কাঁপানো ঠান্ডা হাওয়ায় কেঁপে সারা হতে হতে এলাকা থেকে পালিয়ে বেঁচেছেন এমন লোকের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।

একইভাবে হাইওয়ে আর ভূতের গপ্পো নাকি হাত ধরাধরি করে চলে বলেই কেউ কেউ বলে থাকেন। এরকমই ঢের গা শিরশিরে গপ্পোগাছা আছে বেঙ্গালুরুর এন এইচ ফোরকে ঘিরে। যেমন ধরুন সেই ভদ্রলোকের কথাই, যিনি একদিন অনেক রাতে বাড়ি ফেরার পথে হাত দেখানোয় এই জাতীয় সড়কে জনৈক মহিলাকে লিফট দিতে থামেন। স্থানীয় পুলিশকে অভিযোগ জানাতে গিয়ে ভদ্রলোক বলেন, যেই না মহিলাকে  কোথায় যাবেন জিগ্যেস করা হয় অম্নি তিনি হাওয়ায় মিশে যান। হতবাক ভদ্রলোক যখন কী হল বোঝার জন্যে এদিক ওদিক দেখছেন, এমন সময়ে মহিলা নাকি ফের ফিরে আসেন এবং খিলখিল হাসির শব্দে চারপাশ কেঁপে ওঠে। স্বভাবতই ভদ্রলোক এর পর পড়িমড়ি করে দৌড় লাগান বাড়ির দিকে। সেদিনের সেই আতঙ্ক এত বছর বাদেও আর যাই হোক ভুলতে পারেননি মধ্যবয়েসী মানুষটি। হয়ত পারবেনও না আর কোনো দিন।

এই  বেঙ্গালুরুরই অত্যন্ত খ্যাতনামা হাসপাতাল ভিক্টোরিয়া হসপিটালের বয়সও নয় নয় করে খুব কম হল না। ১৯০১-এ এই হাসপাতাল বানিয়েছিলেন স্বয়ং মহীশূরের মহারাজা। প্রশ্ন এই হাসপাতালের মর্গ নিয়ে। অবিশ্যি ভূত এখানে অতি শান্তশিষ্ট । কাউকে আচমকা বিপদে ফেলা, অনর্থক হইহল্লা করা তার পছন্দ নয়। তার দাবি শুদ্ধু মাত্র কিছু খাবার, ব্যাস। হাসপাতালেরকিছু নিরাপত্তা কর্মীর আবার বক্তব্য : মাঝে মাঝেই মহিলা কন্ঠের কান্নায় তাঁদের হাড় হিম হয়ে গেলেও বহু খুঁজেও মহিলাই বলুন বা পুরুষ,  কারো  দেখাই নাকি, অন্তত সেই দিন আর, মেলেনি। মিলবেও না আর হয়ত কোনো দিন।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version