ইতিহাসে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যার কোনও অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় না। যুগ যুগান্ত ধরে সেগুলি বিস্ময় হয়েই রয়ে যায়। আমাদের দেশেও এমন ঘটনার অভাব নেই। মাত্র কয়েক বছর আগের কথা, উত্তরপ্রদেশের সোনভদ্র জেলাসংবাদের শিরোনামে উঠে এল সোনার খনির সন্ধান পাওয়ার সুবাদে।

‘একশো মণ সোনা, কোনা-কোনা’– এই প্রবাদটি বহু কাল ধরেই সোনভদ্রে প্রচলিত ছিল। এই প্রবাদের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে সোন পাহাড়ি এবং অগোরি কেল্লার।পাহাড়ের কোনায় কোনায় সোনা লুকোনোর এই প্রাচীন কিংবদন্তী থেকেই এই অঞ্চলের নাম হয়ে যায় সোন পাহাড়ি। সেই সঙ্গে চালু হয়ে যায় কালজয়ী প্রবাদও। বহুকাল পর্যন্ত স্থানীয় মানুষ বিশ্বাস করত, সোন পাহাড়ির গিরি কন্দরের আনাচ-কানাচে লুকোনো রয়েছে রাজার ধনভাণ্ডার।

যদিও সোনা খনি থেকেই পাওয়া যায় এবং যখনই এই মূল্যবান খনিজ পদার্থের সন্ধান মিলেছে, সেখানেই মানুষ ছুটে গিয়েছে। কিন্তু দুনিয়ার সব দেশেই সোনার ভাণ্ডার নেই। হাতে গোনা কয়েকটি দেশে রয়েছে সোনার খনি। যতদূর জানা যায় সবচেয়ে বেশি সোনা পাওয়া যায় গ্রাসবার্গ, ইন্দোনেশিয়ার খনিতে। বছর পাঁচ আগের পাওয়া শেষ হিসাব অনুযায়ী এই খনি থেকে ২৭ লাখ আউন্স সোনা তোলা হয়েছিল।

প্লাসার মাইনিং, হার্ড রক মাইনিং ইত্যাদি উপায়ে খনি থেকে কাঁচা সোনা তোলা হয়। আকরিক সোনাকে লিচিং প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত সোনায় পরিণত করা হয়।বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোনা কেনা বেচার বাজার হল সাংহাই এক্সচেঞ্জ।যে কেউ এই বাজারে এসে সোনা বেচা কেনা করতে পারে। তবে সোনা নয়, এবার জানাই রূপোর কথা। কারও কারও কাছে সোনার চেয়ে তার দাম কিছু মাত্র কম নয়। 

একটা জনমানবশূন্য শহর। ভূতের শহর হিসেবেই লোকে বেশি চেনে। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার এই  জনমানবহীন শহরটি লোকমুখে যেভাবেই পরিচিতি পাক তার একটা নাম আছে। শহরের নাম সেরো গোর্দো। এই শহরেই গত আড়াই দশক ধরে একাই বাস করছেন রবার্ট লুইস ডেমারাইস।

রবার্ট লুইস ডেমারাইসের বয়স এখন ৭০ পেড়িয়ে গিয়েছে। আক্ষরিক অর্থেই জনমানবশূন্য সেরো গোর্দো শহরে পরিবার পরিজন ছেড়ে তিনি রয়ে গিয়েছেন প্রায় ২৫ বছর। ডেমারাইস একসময় স্কুলশিক্ষক ছিলেন। কিন্তু সেসব তো অতীত হয়েছে বহুকাল। তিনি এখানে পড়ে আছেন হারিয়ে যাওয়া রুপার খনির খোঁজে।

যখন তিনি শিক্ষকতা করতেন তখন মাঝে মাঝেই ছুটি কাটাতে দুর্গম এই  শহরে আসতেন। কিন্তু এক বার সেভাবে এসে আর ফিরে গেলেন না। ওই রুপোর খনির সন্ধানের নেশা তাকে এমনভাবে পেয়ে বসল যে রয়ে গেলেন।

শহরের কোলাহল ছেড়ে পাহাড়ী ওই শহরেই একখানা বাড়ি বানালেন। প্রথম দিকে সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী। কিন্তু সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮ হাজার ২০০ ফুট উঁচু ওই শহরে মানিয়ে নিতে পারেননি তার স্ত্রী। তারপর থেকে সেরো গোর্দো শহরের একমাত্র বাসিন্দা ডেমারাইস।

স্প্যানিশ ভাষায় সেরো গোর্দো শব্দের মানে মোটা পাহাড়। অসংখ্য পাহাড়ে ঘেরা ওই শহরটি অনেক আগে থেকেই রূপো মজুত থাকার জন্য পরিচিত। এক সময় ক্যালিফোর্নিয়ার সবচেয়ে বেশি রূপো পাওয়া যেত ওই শহরে। ডেমারাইসের ধারণা তিনি একদিন সেই রূপোর সন্ধান পাবেন। আর সে কারণেই দীর্ঘ ২২ বছর ধরে তিনি খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

একেবারে নিরাশও হতে হয়নি তাকে। অল্প সময়ের মধ্যেই বড় একটি রূপোর খনির সন্ধান পাবেন বলে তিনি আশা করছেন। যেভাবে নির্জন শহরেই উপার্জনের ব্যবস্থা করে নিয়েছেন ডেমারাইস। সেরো গোর্দোতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছে ৫ থেকে ২০ ডলারে একেক টুকরো অপরিশোধিত রুপা বিক্রি করেন তিনি। ঘুরতে আসা পর্যটকদের গাইড হিসেবে শহরটি ঘুরিয়ে দেখানোর কাজ করেন।

পাহাড় ঘেরা নির্জন শহরটিতে বিদ্যুৎ থাকলেও নেই জলের প্রাকৃতিক কোনও উৎস। সে কারণে দূরের কিলার নামের এক শহর থেকে তাকে জল আনতে হয়।

এত বছর আনাচ কানাচ খনি খুঁজে বেড়ানোর পর সত্যি কি তিনি রূপোর খনি খুঁজে পাবেন। এ শহরে হারানো রূপোর খনির খোঁজ মিলতে পারে তবে মাটির নীচে খুঁজতে যাওয়া খুব বিপজ্জনক।
Share.

3 Comments

  1. nivedita ghosh ray on

    কত কী যে ঘটে দুনিয়ায় আপনার লেখা পাহাড় হয়ে যাবে সেই সব সন্ধানে।

  2. nirmalya munshi on

    কাহিনিটি অনেকটাই হলিউডের ছবির মতো; সোনার খনির খোজ নিয়ে তো বিখ্যাত সিনেমা আছেই, রূপোর খনির আশায় ২৫ বছর ধরে এক স্কুল শিক্ষকের অপেক্ষা বেশ চমকপ্রদ!

  3. ladlymohon aaikuni on

    পৃথিবীকে আশ্চর্যময় করতে এইসব অদ্ভুত ঘটনা না পৃথিবীটা অদ্ভুত বলেই এই সব আশ্চর্য ঘটনা; কে বলতে পারে!

Leave A Reply

Exit mobile version