কিছু ভুখন্ডের সাথে সমস্যা শব্দটি জন্মলগ্ন থেকে ওতোপ্রতো ভাবে জড়িত যেমন ইউক্রেন ।রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমের বৃহৎ প্রতিবেশি রাষ্ট্র হল ইউক্রেন। ‍১৯১৮সালে একটি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন থেকেই ইউক্রেনের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশের বীজ বপনের কাজ শুরু হয় ।১৯৯১ সালের ইউক্রেন স্বাধীনতা ঘোষনা করে এবং সেখানে একটি রুশ ভাবধারা বিরোধী গনতান্ত্রিক সরকার গঠিত হয়।

ইউক্রেনের গনতান্ত্রীকরণ সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে সেদেশের সংস্কারবাদী নেতা ভিক্টর ইউশেঙ্কোর নেতৃত্বে অন্তর্বিপ্লব ঘটে যা ইতিহাসে ORANGE REVOLUTION নামে পরিচিত ।জন্ম থেকেই ইউক্রেন এবং অস্থিরতা সব সময় সমান্তরাল ভাবে থেকেছে এবং এই অস্থিরতা প্রায়ই মাথাচাড়া দিয়েছে সংঘাত-সংঘর্ষের রূপ নিয়ে। সংস্কারপন্থী ও সংস্কার বিরোধীদের মধ্যে টানাপড়েন থেকেছে ইউক্রেন ।২০১২ সালে ইউক্রেনের ক্ষমতায় আসে ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ -এর নেতৃত্বাধীন নরমপন্থী একটি দল । অন্যদিকে চরমপন্থী বিরোধীদের মত ছিল -এক-রাশিয়ার আপত্তি মেনে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (EU) যোগ না দেওয়া আর দুই- গনতান্ত্রিক নীতি বিরুদ্ধ শাসন ক্ষমতা তৈরি করা ।এরপর থেকে চরমপন্থী ও নরমপন্থী সংঘর্ষ শুরু হয় যা ২০১৪ সালে আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারন করে। ইউক্রেনের পশ্চিম ‍অংশে অন্তত ছয়টি অঞ্চল EU তে যোগ দেওয়ার দিকে ছিল আর অন্য অঞ্চল এই মতের বিপরীতে ছিল। কিন্তু এই যে অদূরকালের অস্থিরতা এবং বর্তমানের ইউক্রেনে যুদ্ধ কারন নিহিত আছে পুরাতন ইতিহাস। পশ্চিম ইউক্রেনের অধিবাসীদের একসময় অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্গত ছিল আর ভূখন্ডের পূর্ব অংশে ছিল রুশ আধিপত্য । কার্যত আজকের যে ইউক্রেন এবং তাদের আধিবাসীগন দ্বিধা-বিভক্ত জাতি। আগেও রুশনেতা পুতিন ইউক্রেনের দখল ছাড়তে রাজী ছিলেন না আর এখনও নন তার প্রমাণ ২১শতকের উন্নত বিশ্বে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ প্রানহানী, সম্পদহানী সর্বোপরি মানবতা বিরোধী কার্যকলাপ ।

পুতিন বরাবর চেয়েছেন EU নয় EURASIAN UNION-এ যোগ দিক ইউক্রেন। ইউক্রেনকে পশ্চিম ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্ন রেখে তাকে একটি রসদ যোগানকারী অংশ হিসাবেই রাখতে চেয়েছিল রুশ কতৃত্ব পুতিন। তাই বর্তমানের ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সেখানের অস্থিরতা কিছু নুতন নয় নুতন হল যুদ্ধ সরঞ্জাম এবং আন্তজার্তিক মহলে এই যুদ্ধ নিয়ে গাছাড়া মনোভাব।

রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের বিরোধের কারন শক্তি সম্পদ সংগ্রহ করার তাগিদ। রাশিয়া যে প্রাকৃতিক গ্যাস , জ্বালানির তেল রপ্তানি করে তার ৯০% ইউক্রেন ও বাইলোরাশিয়া ভূখন্ডের মধ্যে দিয়ে পাইপলাইনে চালান হয়, এর মধ্যে বাইলোরাশিয়ার শাসন মস্কো ভাবাপন্ন হলেও ইউক্রেনের অনেক অংশই তা নয়। তাহলে ইউক্রেন পাখির চোখ কেন রাশিয়ার কাছে ! কারন ক্যাসপিয়ান সাগর এলাকা থেকে পশ্চিম ও অন্যত্র জ্বালানি সরবরাহের জন্যে ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান দারুন ভাবে সহায়ক ODESA BRODY PIPELINE ইউক্রেনের মধ্যে দিয়েই গেছে । তাই ইউক্রেন হাতে থাকলে ক্ষমতা,রসদ সব হাতের মুঠোয়।

তবে রাশিয়ার সাথে এই সমস্যা শুধু ইউক্রেনের নয় অন্য একটি প্রতিবেশি রাষ্ট্র জর্জিয়াও। ঠাণ্ডা লড়ায়ের পর থেকে জর্জিয়াতেও যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তাই এই যে যুদ্ধ তা মানবতাবিরোধী হলেও রাশিয়ার দিক থেকে এই যুদ্ধ খানিকটা হলেও অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ। এই অস্তিত্বের লড়ায়ে কতটা মানবতা রজ্ঞিত হবে বা কতটা মানবতা বিবর্জিত হবে তা কে ঠিক করবে? আন্তর্জাতিক মহল না যুদ্ধরত দুই পক্ষ? এমন সময় ঐতিহাসিক E.H.CARR একটি কথা মনে পড়ছে, তিনি বলেছেন-'আদর্শবাদ যে ধরনের যুক্তিসঙ্গত আচরণ প্রত্যাশা করে,রাষ্ট্রগুলি আদৌ সেজন্য প্রস্তুত নয়' (TWENTY YEAR'S CRISIS)। ইতিহাসের পুনরাবৃতি বারবার হয়,আগেও হয়েছে …ভবিষ্যতেও হবে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version