কালিম্পঙের থেকে আরও উপরে উঠলে ছোট্ট জনপদ নিমবস্তি বা লামাগাঁও। গরুবাথান থেকে ১২ কিলোমিটার উপরে আর ঝান্ডি থেকে ৫ কিলোমিটার আগে একেবারে নিরিবিলি এই পাহাড়ি গ্রাম। শিয়ালদহ থেকে সরাসরি মালবাজার যায় কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস। নাহলে অন্য কোনো ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি নামলেও চলে। মালবাজার থেকে ২৬ কিলোমিটার পথ গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যান সেখানে। পাহাড়ের নীরবতার মাঝে যদি আর বেশি স্তব্ধতা চান তবে ঠিকানা হতে পারে লামাগাঁও। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত হরেক পাখির ডাক আর দূরে লাভা পাহাড়ের চূড়া–ঘরের জানালা দিয়েই প্রকৃতি দর্শন। সাড়ে পাঁচ হাজার ফুট উচ্চতায় পাহাড় ঘেরা জনপদ অতি সম্প্রতি পর্যটকদের কাছে পরিচিতি পেতে শুরু করেছে।
এই পথে উপরে ওঠার সময় বা নিচে নামতে গিয়ে রাস্তার বাঁকে গাড়ি দাঁড় করিয়ে প্রকৃতি দেখার টানে এতদিন সেখানে কিছু সময় দাঁড়িয়ে বা বসে সময় কাটানোই ছিল দস্তুর। কিন্তু এখন সেখানেই গড়ে উঠেছে একটি রিসর্ট। ‘সাইলেন্ট ভ্যালি’ র সাজানো ছিমছাম ঘরে বসে প্রকৃতিকে অনুভব করার জন্য এখন সেটিই একমাত্র ভরসা। রিসর্টের গায়ে, পাহাড়ের ঢালে চাষ হচ্ছে নানা ধরণের শাকসব্জি। ঘরের চাষের সেই টাটকা সব্জি কিংবা গ্রাম থেকে কিনে আনা মুর্গা দিয়ে বানানো ঝোল দিয়ে গরম ভাত দুর্দান্তভাবে জমিয়ে দিতে পারে সবুজের গালিচায় আপনার বেড়ানো।


যদি মনে করেন দুটো দিন নিরিবিলিতে শুয়েবসেই কাটাবেন তাহলে কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। রিসর্টেই বসে থাকুন, বই পড়ুন , গান শুনুন কিংবা প্রিজজনেদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডায় মাতুন। সঙ্গে অনুভব করুন প্রকৃতিকে। সকাল থেকে চার বেলার খাবার পৌঁছে যাবে আপনার ঘরেই। আর যদি একটু বিকেলে খানিক পায়চারি করতে মন চায় তাহলে ঘুরে আসুন সামনের বৌদ্ধ গুমফাতে। পৌঁছে যান ভিউ পয়েন্টে। সেখান থেকে দেখুন পড়ন্ত বিকেলে পাহাড়ের গায়ে ঢলে পড়া দিনান্তের সূর্যকে। আর যদি দল বেঁধে বেড়াতে যান, তবে গাড়ি বুক করে সারা দিনে দেখে নিন গরুবাথান হয়ে সামসিং, সুনতালেখোলা হয়ে ঝালং, বিন্দু থেকে একেবারে চাপরামারি ফরেস্ট। পাহাড়, জঙ্গল, নদী আর চা বাগানের ক্যানভাসে ছুঁতে পারবেন ডুযার্সের হৃদয়টাকে।


দু’রাত তিন দিন শুধু এই ছোট্ট জনপদেই কাটিয়ে এগিয়ে যেতে পারেন আরও উপরে। সাইলেন্ট ভ্যালিতে চারটে দুই বেডের এবং একটি চার বেডের থাকার ব্যবস্থা আছে। দুই বেডের ঘর ভাড়া দিনে ১৬০০ ও চার বেডের ঘর ২০০০ টাকা। সঙ্গে দিনে চার বেলা খাওয়ার মাথাপিছু খরচ ৫০০ টাকা করে।
এখানে আপনি যেমন প্রকৃতির মাঝে শান্তি খুঁজতে যাচ্ছেন তেমনই আপনার থাকা-খাওয়া-বেড়ানোর নানা পরিষেবা দিতে কাজ পাচ্ছে ছোট্ট এই গাঁয়ের মানুষও। আগে শুধুমাত্র নিজেদের খাওয়ার প্রয়োজনটুকু মেটাতেই তারা টুকটাক সবজি বুনতেন। এখন তাঁরাই এখন আপনার-আমার জন্য তাঁদের চাষের সব্জির নানা পদ রান্নায় নতুন উদ্যমে নেমে পরেছেন। আমাদের বেড়ানোর নতুন ঠিকানা করে দিতে তাঁরাই এখন রেস্তোরাঁ চালাচ্ছেন। ফলে আপনার এই বেড়ানো মানে তাদের পাশেও দাঁড়ানো।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version