ইসরাইলে ফিলিস্তিনের হামাস হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলের দিকে একের পর এক ছোড়া রকেটের গোলায় বহু ইসরাইলি নিহত এবং আহত হয়েছে। হামাসের দাবি, ইসরাইলি দখলদারির বিরুদ্ধে রকেট ছোড়া হয়। হামলার পর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে উচ্চারণ করেন, ‘শত্রুদের এই হামলার জন্য এমন চড়া মূল্য দিতে হবে, যা তারা কল্পনাও করতে পারবে না।’ নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আমরা যুদ্ধের মধ্যে রয়েছি। আর এই যুদ্ধে জিতব আমরাই।’ বলা বাহুল্য, হামাসের হামলা ও ইসরাইলের তরফ থেকে এ ধরনের প্রতিক্রিয়ার পর পরিস্থিতি কী হতে পারে, সে সম্পর্কে কমবেশি ধারণা রয়েছে সবার!

হামাসের এই হামলা ৫০ বছরের আগের এক ঘটনাকে মনে করিয়ে দিল। ১৯৭৩-এর ৬ অক্টোবর ইসরাইলে মিশর ও সিরিয়ার নেতৃত্বাধীন জোট অভিযান চালায়। ওই সংঘাত ১৯৭৩-এ আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধ, অক্টোবর যুদ্ধ, রমজান যুদ্ধ, ইয়ম কিপ্পুর যুদ্ধ ইত্যাদি নামে পরিচিত। ১৯৭৩-এর ৬ থেকে ২৫ অক্টোবরের মধ্যে সংঘটিত আরব-ইসরাইল যুদ্ধের ফলে উভয় পক্ষের সম্পর্ক কতটা তিক্ত হয়ে ওঠে, পেছনে ফিরে তাকালেই তার বহু প্রমাণ মিলবে। অর্ধশতাব্দী ফের ইসরাইলের ভূখণ্ডে ‘নতুন অভিযান’ চালানোর মধ্য দিয়ে বিশ্ব নতুন করে কী দেখবে, সেটাই বিষয়!

ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতে যে ছোটখাটো কিছু ঘটবে না, তা সহজেই অনুমেয়। উদ্বেগের বিষয় এটাই, গাজায় ইসরাইলি বাহিনী হামলা শুরু করেছে, তার মানে ইসরাইল-ফিলিস্তিন নতুন সংঘাতের দামামা হল! লক্ষণীয়, গাজা থেকে সেনা ইসরাইলে হামলা চালিয়েছে, গাজা পালটা আঘাতের শিকার হয়েছে। বোঝা যাচ্ছে উভয় পক্ষই কতটা মারমুখী। ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের এটাই চিরচেনা রূপ। এবার বুঝতে হবে, কী কারণে ইসরাইলে হামাস হামলা চালালো। হামাস বলছে, ‘আল-আকসা ফ্লাড’ লড়াই শুরু করেছে তারা। ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর দাবি, দখলদার ইসরাইলি বাহিনীকে বিতাড়িত করাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। এবং সেই উদ্দেশ্যেই অকস্মাত্ আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছে তারা।

জানা যাচ্ছে, ইসরাইলের ওপর কয়েক বছরের মধ্যে হামাস যেসব হামলা চালিয়েছে, তার মধ্যে এটা সবচেয়ে বড় আক্রমণ। অন্যদিকে ইসরাইল বাহিনী গাজায় যে হামলা শুরু করে, তা-ও খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে সংঘটিত হতে দেখা গেল। এমনকি স্বয়ং নেতানিয়াহু তত্ক্ষণাত্ ঘোষণা করে বসলেন, ‘এটা যুদ্ধ—আমরা যুদ্ধের মধ্যে আছি।’ এবং নেতানিয়াহুর যুদ্ধ ঘোষণার পরপরই গাজায় হামাস লক্ষ্য করে যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা চালানোর ঘটনা ঘটল। এসব দেখে শুনে বলতে হয়, ইসরাইল-ফিলিস্তিন এবারের সংঘর্ষের ফলাফল কী হতে চলেছে, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে! হামাস বাহিনীর কমান্ডার মুহাম্মদ দেইফ এই হামলাকে ‘মহান বিপ্লব’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, ‘এই হামলার মধ্য দিয়ে মহান বিপ্লবের সূচনা করা হলো।’

লক্ষ্যনীয়, হামলার পর ইসরাইলি বাহিনী যখন বন্দুকধারীদের খুঁজে বের করতে মাঠে নামে, ঠিক সেই সময় আইডিএফ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে ‘যুদ্ধের অবস্থা শুরু হয়ে গেছে’। এই ঘোষণার পর অনেকে ধরে নেন, গাজায় চূড়ান্ত যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এবং ঠিক এর পরপরই আসে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ঘোষণা। বাস্তবিক অর্থেই এসব ঘটনা একত্র করলে তা ইঙ্গিত দেয় বহু কিছুর! যেমন ইসরাইলের কথিত ‘নিরাপত্তাব্যবস্থার সক্ষমতা’। অন্যদিকে ইসরাইলির জিজ্ঞাসা—‘কোথায় আইডিএফ, কোথায় পুলিশ, কোথায় নিরাপত্তা?’

প্রশ্ন, ইসরাইলের ‘দুর্ভেদ্য নিরাপত্তাব্যবস্থা’ হামলা ঠেকাতে আবারও ব্যর্থ হলো কেন? এর কী উত্তর হতে পারে? ইসরাইলি নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান এলি মারনও বলছেন, ‘এটা একটা বিশাল ব্যর্থতা।’ ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রাক্তন আইডিএফ গোয়েন্দাপ্রধান আমোস ইয়াডলিন বলেছেন, ‘এই আক্রমণ নিঃসন্দেহে বড় ধরনের গোয়েন্দা ব্যর্থতা।’ এই অবস্থায় ইয়াডলিন জোর দিয়ে বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইসরাইলকে শান্ত থাকতে হবে।’ তবে প্রশ্ন হলো, ইসরাইল-ফিলিস্তিন সম্পর্ক ক্রমশ যেদিকে যাচ্ছে, তাতে দু’পক্ষ যে শান্ত থাকবে তা কি ধরে নেওয়া যায়?

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version