কলকাতা ব্যুরো: পুজোর আর একশো দিনও বাকি নেই। অথচ এখনো সেভাবে মাটির প্রলেপই পড়তে শুরু করেনি প্রতিমার গায়ে। কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের সাফ কথা, এবার মুখে মুখে বায়না করলেই হবে না। বায়নার সময় দিতে হবে প্রতিমার অর্ধেক টাকা। তবেই বিচালির উপর মাটির প্রলেপ পড়বে প্রতিমার। চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ শতাংশ অগ্রিম ছাড়া ঠাকুর বানাবেন না বলেই জানাচ্ছেন কুমারটুলির শিল্পীরা।
তাদের পরিষ্কার বক্তব্য, পরিস্থিতি যা তাতে কখন কি হবে জানা নেই। পুজোর সময় যদি শহরে ফের লকডাউন হয়ে যায়! তখন তো কেউ ঠাকুর নিতে আসবেন না। অন্নপূর্ণা পুজোর সময় যেমন হয়েছিল। প্রায় ২০০ ঠাকুর পড়েছিল। কেউ নিতে আসেননি। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েই তাই এবার আর মুখে অর্ডার দিলেই ঠাকুর তৈরিতে হাত দেবেন না তারা। সেই বারোয়ারিকে অর্ধেক অগ্রিম টাকা দিতে হবে। তবে করোনা অবহেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুজো নিয়ে আশ্বাসবাণী নতুন করে অক্সিজেন জোগাচ্ছে পটুয়াপাড়ার শিল্পীদের।
সময় এখন হাতে গোনা। অথচ এখনও মাটি পড়েনি অধিকাংশ প্রতিমার গায়ে। কয়েকটা কাঠামোয় শুধু বিচালি লেগেছে। কয়েকজন শিল্পী কিছু বায়না পেয়েছেন বটে। কিন্তু সেই ব্যস্ততা কোথায়? ফের যদি লকডাউন হয়ে যায়, তবে বানানো ঠাকুর নেবে কে! এই আশঙ্কাই ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রতিমা শিল্পীদের মধ্যে। শিল্পীরা জানাচ্ছেন, কোনও বারোয়ারি একেকজন শিল্পীকে দিয়ে ২০-২৫ বছর ধরে ঠাকুর বানান। এতদিন শুধু মুখে বলে দিলেই ঠাকুর তৈরিতে হাত দিয়ে দিতেন শিল্পীরা। কেউ বা সামান্য অর্থ দিয়ে বায়না করতেন। এবার আর সেটা হবে না। প্রায় একই কথা শোনা যাচ্ছে কাটোয়ার শোলার শিল্পী বা কৃষ্ণনগরের জরি শিল্পীদের মুখে। অগ্রিম না-পেলে তারাও প্রতিমার সাজসজ্জার কাজে হাত দিতে নারাজ। কুমারটুলি মৃৎ শিল্প ও সাজ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক অপূর্ব পাল বলেন, “অন্যান্যবার পরিচিত বারোয়ারির লোকেরা মুখে বায়না করলে আমরা ঠাকুর তৈরি শুরু করতাম। কিন্তু এবার আর সেটা হবে না। অন্তত ৫০ শতাংশ অগ্রিম ছাড়া ঠাকুর তৈরি করতে পারব না আমরা । কারণ কখন যে কি হবে কিছু বোঝা যাচ্ছে না।”

কুমারটুলি মৃৎ শিল্প ও সাজ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক অপূর্ব পাল বলেন, “অন্যান্যবার পরিচিত বারোয়ারির লোকেরা মুখে বায়না করলে আমরা ঠাকুর তৈরি শুরু করতাম। কিন্তু এবার আর সেটা হবে না। অন্তত ৫০ শতাংশ অগ্রিম ছাড়া ঠাকুর তৈরি করতে পারব না আমরা । কারণ কখন যে কি হবে কিছু বোঝা যাচ্ছে না।”


শোচনীয় অবস্থা কারিগরদেরও। তারাও সেই তিনমাস আগে নিজ নিজ গ্রামে ফিরে গিয়েছেন। কারও কোনো রোজগার নেই। তাদের কেউ থাকেন মেদিনীপুর তো কেউ পুরুলিয়া, কেউ বা আবার ঝাড়গ্রাম। তাদের বক্তব্য, হাতে কাজ নেই। টাকাও নেই। বাধ্য হয়েই তাই পায়ে হেঁটে ফিরতে হয়েছে গ্রামের বাড়িতে। প্রায় বাইশশো কারিগর ফিরে গিয়েছেন গ্রামের বাড়িতে। তাদের দাবি, পুজোয় ঠাকুরের বায়না কেমন হবে এবার তাই তো ঠিক নেই। কলকাতায় ঘর ভাড়া নিয়ে থেকে করবেন কি! খাওয়ার টাকা নেই। এই কারিগররা কুমোরটুলির যে শিল্পীরা আছেন, তাদের কাছে কাজ করতেন। ওই শিল্পী মাইনে দিতেন। তা দিয়েই ঘর ভাড়া করে থাকতেন।কিন্তু কাজ বন্ধ তো মাইনেও বন্ধ। তাই সকলেই ফিরেছেন বাড়ির পথে। জানেন না মা দুর্গা এবার মুখ তুলে চাইবেন কিনা! জানা নেই, আবারও খড় বেঁধে মাটির প্রলেপ দিয়ে দেবী মূর্তি বানাতে পারবেন কিনা! কুমারটুলি মৃৎশিল্প ও কারিগর সমিতির সাধারণ সম্পাদক অখিল কুমার ঘন্টা বলেন,” খুবই আর্থিক অনটনে আছি। মা কবে যে মুখ তুলে তাকাবে সেই ভরসাতেই আছি। “

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version