কলকাতা ব্যুরো: বিশ্ব উষ্ণায়নের কারনে হিমবাহ গলন নতুন ঘটনা নয়। গত দশক থেকেই তা চলছে। তবে গলনের প্রভাবে যে কতশত বিপর্যয় নেমে আসছে পৃথিবীতে, তা হিসেবের বাইরে। কিন্তু এবার বিজ্ঞানীরা শোনালেন নতুন আশঙ্কার কথা। মেরুর বরফ গলতে গলতে নিচের স্তর থেকে বেরিয়ে আসতে পারে যুগ ধরে চাপা পড়ে থাকা অজানা সব জীবাণু। এমনকী বেরিয়ে আসতে পারে তেজস্ক্রিয় বর্জ্যও। সেই শীতল যুদ্ধের সময়ে নিউক্লিয়াস রিঅ্যাক্টর, সাবমেরিন থেকে যেসব পদার্থ নিঃসৃত হয়েছে, সেসবও প্রকাশ্যে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

উত্তর মেরু এলাকার একটা অংশে প্রায় লক্ষ বছর ধরে বরফ জমেছে। স্থায়ীভাবে হিমায়িত হয়েছে এই অংশ কিন্তু উষ্ণায়নের কোপে এবার সেই অংশও গলতে শুরু করেছে। আর তার মধ্যে থেকেই উঠে আসছে প্রচুর অণুজীবী। বিশ্বের শীতলতম অঞ্চল সাইবেরিয়ার হিমায়িত অংশ মূলত জীবাণুরোধী। এবার সেই অংশ গলার অর্থ রেসিস্ট্যান্স অংশটি সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হওয়া। উষ্ণায়নের হার দেখে পরিবেশবিজ্ঞানীদের বক্তব্য, ২১০০ সালের মধ্যে মেরু অঞ্চলের এই স্থায়ী হিমায়িত অংশের দুই তৃতীয়াংশ গলে যাবে।

এবার এই গলনের কী কী কুপ্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে। আর তাতেই দেখা যাচ্ছে, ঠাণ্ডা লড়াইয়ের সময় যেসব পরমাণু চুল্লি, সাবমেরিনের অংশ এতদিন ধামাচাপা পড়েছিল, সেসবও বেরিয়ে আসবে স্থায়ী হিমায়িত অংশ গলে গেলে অর্থাৎ তেজস্ক্রিয় বিকিরণের অভিশাপও নেমে আসবে। ‘নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ’ নামের এক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেরু অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের উপর কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে, সে বিষয়ে কোনও ধারণা করা যাচ্ছে না এখনই। এর জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় অংশেই প্রভাব পড়বে। এটি যথেষ্ট জটিল বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আর্কটিক বা সুমেরু উত্তপ্ত হওয়ার কারণে বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে পৃথিবী। অনুমান করা হচ্ছে যে, ২১০০ সালের মধ্যে পারমাফ্রস্টের দুই-তৃতীয়াংশ গলে যেতে পারে। আর্কটিক বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণ করবে। তার ফলে প্রাকৃতিক দৃশ্যের আকস্মিক পরিবর্তন ঘটবে।

নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, অদৃশ্য হওয়া পারমাফ্রস্টের প্রভাব বরফের চেয়ে অনেক বেশি বিস্তৃত হতে পারে। এর ফলে ব্যাকটেরিয়া, অজানা ভাইরাস, পারমাণবিক বর্জ্য ও বিকিরণ এবং উদ্বেগজনক অন্যান্য রাসায়নিক ছড়াবে বায়ুমণ্ডলে। গবেষণা বলছে, আর্কটিক ক্রায়োস্ফিয়ার ভেঙে পড়ছে। পরিবেশগত ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version