কলকাতা ব্যুরো : পুজোর সময় গণেশের পাশে লাল পাড় সাদা শাড়ির ঘোমটা ঢাকা কলা বউ আমাদের সবার নজরে আসে। অনেকেই এটিকে কলা বউ বা গণেশের স্ত্রী বলে মনে করেন। কিন্তু ইনি গণেশের স্ত্রী নন। গণেশের স্ত্রীর নাম ঋদ্ধি ও সিদ্ধি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, তবে এই নবপত্রিকা কি ? নবপত্রিকার আক্ষরিক অর্থ নয়টি পাতা। কিন্তু আসলে এটা নয়টি উদ্ভিতকেই বোঝায়। এই নয়টি উদ্ভিত আসলে মা দুর্গার নটি রূপ। নটি উদ্ভিদ হলো কলা, কচু, হরিদ্রা, জয়ন্তী, বিল্ব, ডারিম্ব, অশোক, মান এবং ধান। কলা রূপে ব্রমহানি পূজিত হন, কচু রূপে কালিকা, হরিদ্রা রূপে উমা, জয়ন্তি রূপে কর্তিকী, বিল্ব রূপে শিবা, দারিম্ব রূপে রক্তদুন্তিকা, অশোক রূপে শকরোহিতা, মান রূপে চামুণ্ডা এবং ধান রূপে লক্ষ্মী। পুজোর সময়, ” নবপত্রবাসিনী নবদূর্গায় নমঃ ” বলে মন্ত্রচ্চরণের মধ্যে দিয়ে দেবীকে পূজা করা হয়।

মন্ত্র আছে

  " রম্ভাধিষ্ঠাত্রী ব্রম্ভানি, কাচ্ছাধিষ্ঠাত্রি কালিকা
   হারিদ্রধিষ্ঠাত্রী উমা, জয়ন্তিধিস্থাত্রি কর্তিকি
  বিলবাধিস্থাত্রী শিবা, দারিম্বাধিষ্ঠাত্রী রক্তদন্তিকা
 আশকাধিস্থাত্রী শোক রহিতা, মানাধিষ্ঠাত্রি চামুণ্ডা
  ধ্যান্যাধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মী " 

সপ্তমীর দিন এই নবপত্রিকা কাঁধে নিয়ে পুরোহিত নিজে কোনো নিকটস্থ জলাশয়ে যাত্রা করেন। সেখানে নবপত্রিকা স্নান করানো হয়। এর পর নববস্ত্রে তাকে সজ্জিত করে আনা হয় পূজা মণ্ডপে। এর পরই পুজোর মূল অনুষ্ঠানের প্রথাগত শুভ সূচনা হয়। এখন প্রশ্ন হটাৎ নবপত্রিকা কেনো এলো দূর্গা আরাধনায়। এই নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে দ্বিমত আছে। প্রসঙ্গত মার্কণ্ড পুরাণ বা কালিকা পুরাণে এর উল্লেখ পাওয়া যায় না। উল্লেখ নেই দেবী ভাগবতে ও। প্রথম এর উল্লেখ পাওয়া যায় কৃত্তিবাসী রামায়ণে। জানা যায় সম্ভবত শবর জাতি ৯ টি গাছ দিয়ে দূর্গা পূজা করতেন। এর মূল কারণ শস্যকে দুর্গার সঙ্গে একাত্ম করা বলেই মনে করেন পন্ডিত মহল।

দূর্গা মন্ডপে একচালার মধ্যে দূর্গা, লক্ষ্মী , সরস্বতী, কার্তিক এবং গণেশ যেনো একটি একান্নবর্তী পরিবার কেই তুলে ধরে। পিছনে মহাদেব যেন সমগ্র পরিবার পরিচালনা করছেন। লক্ষণীয় এখানে খাদ্য এবং খাদককেও একই জায়গায় রাখা হয়েছে। ধানের পাশেই গণেশের ইঁদুর। আবার ইঁদুরের সঙ্গেই পেঁচা ও কার্তিকের ময়ূর। এ যেন সম্পূর্ণ বিশ্বপ্রকৃতিকে এক জায়গায় এনে হাজির করা। দুর্গার সামনে মহিষ ও সিংহের মধ্যেও সেই খাদ্য ও খাদকের ভূমিকায় দাঁড়িয়ে আছে দুই পশু। আর এদের সবাইকে নিয়ন্ত্রন করছেন বিশ্ব সংসারের পিতা দেবাদিদেব মহাদেব।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version