রহস্যময়ই বটে। দিগন্ত বিস্তৃত্ব মাঠ। রাত নামতেই ময়দান চত্বরের নেমে আসে অন্ধকার। আশেপাশের রাস্তাগুলো হয়ে যায় শুনশান। কয়েক বছর আগে অন্তত এমনই চেহারা ছিল। সেটাই কী সহজে কাম তামাম করে আজও খুনীদের আড়ালে থাকার ক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করেছে? তদন্তকারীদের অনেকটা তেমনই ধারনা। কারণ, একটি বা দুটি নয়। এই ময়দান থানা তল্লাটে তিনটি খুনের ঘটনার রহস্য উন্মোচন করা যায়নি আজও। যার মধ্যে একটি ঘটনা ২০১৬ বছর পুরোনো। বাকি দুটি ঘটে বছর চারেক আগে এক মাসের ব্যবধানে। একে একে বিভিন্ন কিস্তিতে সেই হত্যা রহস্যের কাহিনী তুলে ধরব। ইতিমধ্যে একটি ঘটনা তুলে ধরেছি। এবার দ্বিতীয়টি। যা ঘটে চার বছর আগে।
 

ইন্দ্রনীল বসু

প্রথম পর্ব

মনের ভুল, নাকি যা দেখলেন তা সত্যিই? নিশ্চিত হতে কিছুটা এগোতেই যে দৃশ্য ধরা পড়ল তাতে আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হওয়ার জোগাড় বছর পঁয়ত্রিশের যুবকের।
কয়েক পা এগোতেই তিনি দেখলেন নীল রঙের মাছের ড্রামের মধ্যে মুখ গুঁজে বসে এক ব্যক্তি। তবে নিথর। ড্রামের মুখ চাপা দেওয়া মাছের জাল দিয়ে।
দিনটা ছিল এমন অগস্টেরই ১৭। সাল ২০১৬। ভোরের দিকে স্ট্রান্ড রোড দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন ওই যুবক। রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে বিদ্যাসাগর সেতুর নিচের ওই ফাঁকা জায়গা গিয়েছিলেন টয়লেট সারতে। সে সময় তিনি দেখেন, ড্রামের ভিতর থেকে যেন কারও কালো মাথা বেরিয়ে আছে। নিশ্চিত হতে কাছে যেতেই সামনে আসে ওই ভয়ানক দৃশ্য।
খবর যায় ময়দান থানায়। আসেন গোয়েন্দা বিভাগের অফিসার থেকে গোয়েন্দা প্রধান। ঝোপঝাড়ে ঘেরা ওই তল্লাট। সন্ধের পর একেবারেই ফাঁকা হয়ে যায়। কমে যায় গাড়ির সংখ্যাও। সম্ভবত কোথাও খুন করে গাড়িতে করে এনে ড্রামভর্তি দেহটি ওই জায়গা নামিয়ে দিয়ে যাওয়া হয়। তবে সেক্ষেত্রে একাধিক অপরাধীর থাকার সম্ভবনাই বেশি। কারণ, কারও একার পক্ষে এতটা করা কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করছিলেন তদন্তকারীরা।
নিহতের বয়স আনুমানিক ৩৫ থেকে ৩৬। গায়ের রঙ শ্যামলা। খালি গা। পরনে কেবল একটি কালো হাফপ্যান্ট। দেখা গেল শরীরে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। ডানা হাতে উল্কি। যাতে লেখা ‘রানা।’
খোঁজ শুরু হল সিসিটিভির। কিন্তু মাথা খুঁড়েও ওই এলাকায় কোনো সিসিটিভি পাওয়া গেল না। বিকেলের মধ্যেই অটোপসি সার্জেন  নিশ্চিত করলেন এটি খুনের ঘটনা। মৃত্যুর কারণ ‘স্ট্র্যাংগুলেশন।’ অর্থাৎ শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। তবে তার আগে মারধরও করা হয়। দেহের বাকি আঘাত গুলি তারই প্রমাণ। অজ্ঞাত পরিচয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণদিত হয়ে খুনের মামলা রুজু হল ময়দান থানায়।
কিন্তু কে এই যুবক? তাঁর নাম কি রানা? যে উত্তরগুলি না জানা খুনের কারণ, কে বা কারা খুন করল তাঁকে- এসব কিছুই অজানা থেকে যাবে, বিলক্ষণ জানে পুলিশ।

                                                                                                       (চলবে)
Share.
Leave A Reply

Exit mobile version