মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ে বিজেপি জিতেছে। বিজেপি মধ্যপ্রদেশে সরকার বাঁচাতে পেরেছে, একই সঙ্গে কংগ্রেসকে পরাজিত করে প্রতিবেশী ছত্তিশগড়ে ক্ষমতায় ফিরে আসতে পেরেছে। মিজোরামের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন লালডুহোমা। ৪০টি আসনের মধ্যে জেডপিএম জিতেছে ২৭টিতে। ১০ টি আসনে জিতেছে বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গার দল। অন্যদিকে, তেলেঙ্গানায় জিতে প্রথমবারের মতো সরকার গঠন করতে চলেছে কংগ্রেস। যদিও রাজস্থানের ‘পরিবর্তনের প্রথা’ বদলাতে চাওয়া কংগ্রেস ব্যর্থ হয়েছে। তারা শুধু সফল হয়েছে তেলেঙ্গানায়। ভারতের এই নতুন রাজ্যে প্রথমবার বিআরএস  ছাড়া অন্য কোনো দল সরকার গঠন করতে চলেছে।

এই পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনকে আসন্ন ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সেমিফাইনাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল যেখানে ২৮টি বিরোধী দল বিজেপিকে জয় এবং ক্ষমতা থেকে অপসারণের উদ্দেশে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (ইন্ডিয়া) নামে একটি জোট গঠন করেছিল। এই হারের পর ‘ইন্ডিয়া জোটে’ শরিকদলগুলোর মধ্যে অনেকেই কংগ্রেসের নেতৃত্বের বিষয়ে ‘সন্দেহ’ প্রকাশ করেছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সরাসরি নিশানা করেছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। কোনো শরিকদল আবার মনে করছে এই পরাজয় ইন্ডিয়া জোটের ওপর প্রভাব ফেলবে না। এদিন বিধানসভায়  পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘কংগ্রেসের পরাজয় মানুষের পরাজয় নয়। আমি মনে করি ইন্ডিয়া জোট একসঙ্গে কাজ করবে, জিতবে।’ তার দল তৃণমূলও ২৮টি দলের মধ্যে একটি যারা ‘ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্স’-এর অংশ। অন্যদিকে, কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে আগামী ৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে ভারতের শরিক দলগুলোর একটি বৈঠক ডেকেছেন।

কংগ্রেসের ‘ভরাডুবির’ ফলে শরিকদলের অনেকে ক্ষোভ’উগড়ে দিয়েছে। তারা কংগ্রেসের মনোভাব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। ন্যাশনাল কনফারেন্স-এর সহকারী সভাপতি ওমর আবদুল্লা কংগ্রেসকে নিশানা করেছেন। তার কথায়, নির্বাচনের সময় কংগ্রেস যা বলেছিল তা ফাঁকা আওয়াজ বলে প্রমাণিত হয়েছে। এর পাশাপাশি জোটের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগও তোলেন তিনি। আব্দুল্লা বলেন, ‘আগামী ৬ ডিসেম্বর ইন্ডিয়া জোটের সকলকে নৈশভোজে ডেকেছে। যাক তিনমাস পরে অন্তত ইন্ডিয়া জোটের কথা মনে পড়েছে ওদের। এখন দেখা যাক কী আলোচনা হয়’। একইভাবে জনতা দলও কংগ্রেসের সমালোচনা করেছে। দলের মুখপাত্র কেসি ত্যাগী বলেছেন, এই নির্বাচনে বিরোধী দল হিসাবে কোনো ইন্ডিয়া জোটের উপস্থিতি ছিলই না। তিনি বলেছিলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে এই রাজ্যগুলোতে সমাজতান্ত্রিক দলগুলো ছিল, কিন্তু কংগ্রেস কখনই ইন্ডিয়া জোটের অন্য শরিকদের সাথে কোনো আলোচনা করেনি বা পরামর্শ চায়নি।

ভারত জোট প্রথম দিন থেকেই অনেক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছে। উদাহরণস্বরূপ, এই অংশগ্রহণকারী দলগুলোর বেশ কয়েকটি একাধিক রাজ্যে একে অপরের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, তারা একে অপরের বিরুদ্ধে নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত ও অবস্থানও ভিন্ন। নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে অনেকে বলছেন, এই নির্বাচনে ইন্ডিয়া জোট ও কংগ্রেস একটি সুযোগ হারিয়েছে। তাদের মতে, এই নির্বাচনগুলো বিরোধী দলগুলোকে একত্রিত করার এবং একটি রাজনৈতিক পরিবর্তনের উদ্যোগী হওয়ার সুযোগ ছিল, যা ওই জোটকে শক্তিশালীও করতে পারত।

জোট গঠনের সাথে সাথে যে রাজনৈতিক আকৃতির যে বদল হয়, তা হয়নি। তেলেঙ্গানার মতো, তারা সিপিআইয়ের সাথে জোট করেছে কিন্তু সিপিএমের সাথে নয়। তাই এভাবে বাকি জায়গাগুলোতে ছোট ছোট দলগুলোকে একত্রিত করার সুবিধা নিতে পারেনি তারা। অজিত যোগীর দলের (জনতা কংগ্রেস ছত্তিশগড়) ভোট যেমন বিজেপির হাতে চলে গেছে। একইভাবে রাজস্থানেও ভারত আদিবাসী পার্টির (বিএপি) সাথে জোট করা যেত। অখিলেশ যাদবের দল সমাজবাদী পার্টি যদি মধ্যপ্রদেশে নির্বাচনে লড়তে চাইত, তাহলে এক বা দুটি আসন তাদের দেয়া যেত। যদি কিছু আসন বাম দলগুলোকে দেয়া হত, তাহলে তারা নতুন রাজনীতি আনতে পারত। মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং রাজস্থানে ছোট দলগুলোকে একত্রিত করা হলে উপকার হত। উদাহরণস্বরূপ, যদি অখিলেশের দলকে (মধ্যপ্রদেশে) সুযোগ দেয়া হত, তবে তারা বিহার এবং উত্তরপ্রদেশের কাঠামোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এবং গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করার সুযোগ দিতে পারত। তবে এটার জন্য দীর্ঘ লড়াই করতে হবে কারণ সেখানে তেমন কোনো কাঠামো নেই।

সংখ্যার নিরিখে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি, কারণ তিনটি রাজ্যে বিজেপি আগেও জিতেছে এবং এবারও। তবে বিজেপিকে হারানোর সম্ভাবনা আগের চেয়ে কঠিন হয়ে পড়েছে।বিধানসভা নির্বাচনে যা হয়েছে, লোকসভাতেও তাই হবে, তেমনটা নয়। কিন্তু যারা ক্ষমতার পরিবর্তন চান, তাদের জন্য কাজটা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। কেন্দ্র থেকে বিজেপিকে সরাতে হলে ভারতের উত্তরাঞ্চল, যা গুজরাত থেকে শুরু করে বিহার পর্যন্ত বিস্তৃত, সেখানে বিজেপিকে হারাতে হবে। মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং রাজস্থানে কংগ্রেসের তিনটি থেকে চারটি লোকসভা আসন রয়েছে। এখানে কিছু আসন জেতা কংগ্রেসের পক্ষে খুবই প্রয়োজনীয়। তবে আজকের পরে এই সম্ভাবনা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।কংগ্রেস নেতারা এই নির্বাচনে প্রায় প্রত্যেক মঞ্চ থেকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে দল ক্ষমতায় এলে জাতিভিত্তিক আদমশুমারি করা হবে।বিরোধী দলগুলোর জোট ‘ইন্ডিয়া আলায়েন্স’-এর কাছেও এটি একটি বড় বিষয় ছিল। এ বছরের ১৮ জুলাই বেঙ্গালুরুতে এক বৈঠকের পর ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্স একটি যৌথ বিবৃতি জারি করে জাতিগত আদমশুমারির দাবি জানায়।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version